সন্তু বেরা, ‘স্থানীয় সংবাদ’, ঘাটাল: কিসের এতো অভিমান জমা ছিল বছর এগারোর ছোট্ট মেয়েটির বুকের মধ্যে তা জানতেও পারেননি বাবা-মা। রবিবার দুপুরে মা একটু বকাবকি করেছিলেন। দুপুরে ভাত খাবার পর বাথরুমে হাত ধুতে যায় সোমা। তার থেকে বছর তিনেকের বড় দাদাও ভাত খেয়ে ওই বাথরুমেই হাত ধুয়েছে। সোমা বাথরুমে হাত ধুতে যেতেই মা বকাবকি করেন। তারপর সোমা হাত ধুয়ে সোজা উপরের ঘরে চলে যায়। বলে যায় সে অংক করবে বলে উপরে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর একটা শব্দ হয়, প্রতিবেশী এসে শব্দের কথা জানালে সবাই উপরে ছুটে গিয়ে দেখেন, দরজা জানালা সব বন্ধ করে দিয়েছে সোমা। ডাকাডাকিতে সাড়া দিচ্ছে না। তারপর দরজা ভেঙে সোমাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা যায়। দাসপুর থানার পুলিশ এসে মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। দাসপুর থানার সামাটেই বাড়ি সোমার। এই গ্রামে বছর কয়েকের মধ্যে তিন পড়ুয়ার আত্মহত্যার ঘটনা ঘটল। তবে সোমার মত এত ছোটো বয়সে আত্মহত্যা(suicide) এই প্রথম। স্কুলে পড়াশোনায় রীতিমতো ভালো সোমা। নাচ গানেও মন কেড়ে নিত সবার। সবার সাথে মিশতেও ভালোবাসত সামাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেনীর এই পড়ুয়া সোমা পাত্র। তবে স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে ইদানিং সোমার স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার টান ছিল না। বেশ কয়েকবার ছুটির বেশ অনেকক্ষণ পরে জোর করে বাড়ি পাঠিয়েছেন শিক্ষকরা। একটু যেন আনমনাও থাকত। জিজ্ঞাসা করলে কিছু বলত না। এতোটুকু মেয়ের আত্মহত্যার ঘটনায় হতবাক হয়ে গিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা, ভাষা হারিয়েছেন সোমার স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা।
কিছুদিন আগে স্কুলে আয়োজিত রক্তদান শিবিরে ‘মঙ্গলদীপ জ্বেলে’ গানের তালে তালে সোমার যোগানৃত্যে চোখ ভিজেছিল মহকুমাশাসকের। আজ সেই ছোট্ট দুই পা থেমে গেল চিরতরে। মন খারাপ মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাসের। সোমার মৃত্যুর খবর শুনে আজ আবার তাঁর চোখ ভিজল।