দেবাশিস কর্মকার, স্থানীয় সংবাদ, ঘাটাল: ভারতের প্রাক্তন সশস্ত্র সেনা কল্যাণে বিশেষ অবদানের জন্য পুরস্কৃত হলেন ঘাটালের উজ্জ্বলকুমার ঘটক। রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র নিরাপত্তা বিভাগে ধারাবাহিক অবদান, শিক্ষকতা এবং বিভিন্ন প্রতিরক্ষা বিষয়ক গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার তথা ওই রাজ্যের গভর্নর ৯ ডিসেম্বর তাঁকে সংবর্ধিত করে। বর্তমানে উজ্জলবাবু [✔‘স্থানীয় সংবাদ’-এর সমস্ত কিছু জানতে এখানে ক্লিক করুন] অন্ধ্রপ্রদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিফেন্স স্টাডিজ তথা প্রতিরক্ষা বিভাগের একজন অতিরিক্ত -অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। উল্লেখ্য, ভারতে ৭ ডিসেম্বর আমর্ড ফোর্স ফ্ল্যাগ ডে পালন করা হয়। ওই বিশেষ দিনে ভারত সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক তথা সংশ্লিষ্ট রাজ্য সৈনিক বোর্ড নিরাপত্তা বাহিনীতে বিশেষভাবে অবদানকারীদের নাম মনোনয়ন করে একটি তালিকা প্রকাশ করে। অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার তথা ওই রাজ্যের গভর্নর কর্তৃক সেই মনোনীত ব্যক্তিদের হাতে পুরস্কার ও সংবর্ধনা তুলে দেওয়া হল। উল্লেখ্য, ৯ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সংশ্লিট পুরস্কার প্রাপকদের হাতে ওই সাম্মানিক স্মারক তুলে দেওয়া হয়েছে।
উজ্জ্বলবাবুর বাড়ি ঘাটালের শ্যামসুন্দরপুরে। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয়েছে ঘাটালেই। ঘাটাল রথিপুর বরদা বাণীপীঠ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেন। তারপর মেদিনীপুর কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যাতে স্নাতকস্তরে পড়া চলাকালীন ভারতীয় প্রতিরক্ষার নৌ-বাহিনী বিভাগে চিফ আর্টিফাইসর পদে সুযোগ পেয়ে যান। সেই থেকে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিভাগে নানা পদে প্রায় কুড়ি বছর কর্মরত ছিলেন। তাঁর কর্ম জীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হল ১৯৯৯ সালের ভারত-পাকিস্তান কার্গিল যুদ্ধ। ওইসময় তিনি গুজরাট এবং করাচি সীমান্ত রেখায় সংগঠিত ‘অপারেশন তলোয়ার’-এ অংশ নেন। এছাড়া তামিলনাড়ু-শ্রীলংকা সীমান্তে সংগঠিত উল্লেখযোগ্য এলটিটিই তথা লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলম অপারেশনেও তিনি অংশ নিয়েছিলেন। অবশেষে, ২০১২ সালে তাঁর কর্ম জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
উজ্জ্বলবাবু জানিয়েছেন, চাকরি চলাকালীন তাঁর পড়াশোনা থেমে থাকেনি। দীর্ঘদিন প্রতিরক্ষাবাহিনীতে থাকার সুবাদে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতা তাকে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ের উপর গবেষণায় অনুপ্রাণিত করে। পরবর্তীকালে, পারফরম্যান্স ম্যানেজমেন্টের উপর পিএইচডি ডিগ্রিও লাভ করেন তিনি। উজ্জ্বলবাবু বলেন, অবসর গ্রহণের পর ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হিন্দুস্তান স্লটস-এ বেশ কয়েক বছর চাকরি করি। অবশেষে, ২০১৬ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিফেন্স স্টাডিজ তথা প্রতিরক্ষা বিভাগে সহ-অধ্যাপক হিসেবে কাজের সুযোগ আসে। বর্তমানে তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিফেন্স তথা প্রতিরক্ষা বিভাগের ডিন হিসেবে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। এর পাশাপাশি ভারতের কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নানা প্রকল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে যুক্ত রয়েছেন সারা বছর। তাঁর ভাষায়, অবসর গ্রহণের পর ভারতীয় সেনা-জওয়ানদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি ভালো থাকে না। তাঁদেরকে অর্থ উপার্জনের বিভিন্ন বিকল্প উপায় খুঁজে বার করতে হয়। সেনা-জওয়ানদের কর্ম জীবনের অভিজ্ঞতা ও কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের সার্টিফিকেট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যা ব্যবহার করে তাঁরা পরবর্তীকালে নানা সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে উপযুক্ত কাজ খুঁজে নিতে পারবেন। এছাড়া যেসব পরিবারের জওয়ান শহীদ হয়েছেন, তার পারিবারিক সদস্যদের সুযোগসুবিধা প্রদানের বিষয়ে তিনি বর্তমানে নানা কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। উল্লেখ্য, অবসরপ্রাপ্ত সেনা-জওয়ানদের এই সকল অর্থ-সামাজিক কল্যাণে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্যই তিনি পুরস্কৃত হলেন। উজ্জলবাবুর এই সাফল্যে ঘাটালবাসী গর্বিত।