নিবেদিতা পোড়িয়া মাল: পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন [✔‘স্থানীয় সংবাদ’-এর সমস্ত কিছু জানতে এখানে ক্লিক করুন]অঞ্চলের একটি ধর্মীয় লোক উৎসব হলো গাজন।বিভিন্ন ধরনের গাজনের মধ্যে বহুল প্রচলিত গাজন হলো শিবের গাজন।চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহ জুড়ে পালিত হয় শিবের গাজন।মূলত সন্ন্যাসী ও ভক্তদের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় গাজন উৎসব।গাজন বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে পরিচিত। এরকম ই এক ব্যতিক্রমী গাজনের ছবি আমরা দেখতে পাই খেপুত দক্ষিণ বাড় গ্রামে।
দাসপুর থানার অন্তর্গত খেপুত দক্ষিণ বাড় গ্রামের জনপ্রিয় গাজন উৎসব হলো রাখল গাজন বা বালক গাজন।কথিত আছে,ওই গ্রামেরই এক কৃষক সুধন চন্দ্র পোড়িয়া আজ থেকে প্রায় ৭০-৭২ বছর আগে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন এক শিবলিঙ্গ। প্রথমে নিজের বাড়ির তুলসী তলায় রেখে নিত্য জল দিতেন ওনার সহধর্মিণী।পরবর্তীতে ওই শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা ও পুজোর ব্যবস্থা করেন তিনি ওই গ্রামেরই দু – চার জন বন্ধুর সহযোগিতায়।আম বাগানের মধ্যে একটি বৃহৎ আম গাছের নিচে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল শিবলিঙ্গ,তাই মহাদেব এখানে আমেশ্বর নামে পরিচিত।তখন মন্দির বলতে ছিল ছিটে বেড়ার একটি ছোট্ট ঘর।এছাড়াও প্রতিষ্ঠাতা স্বর্গীয় সুধন চন্দ্র পোড়িয়ার পিতার নামে নামকরণ হয়ে এই গাজন রাখাল গাজন নামে পরিচিতি লাভ করে।প্রতি বছর চৈত্র মাসের ২০ তারিখ থেকে শুরু হয় গাজন।প্রথম থেকেই এই গাজনের মূল ও অন্যতম আকর্ষণ হলো বালক সন্ন্যাসী।মূলত ৫-১৪ বছর বয়সী বালকেরা সন্ন্যাসী হবার সুযোগ পায়।ক্রমে সময় বদলেছে,পরবর্তী প্রজন্মের হয় ধরে এগিয়ে চলেছে এই উৎসব।বর্তমানে এই গাজনের বালক সন্ন্যাসীর সংখ্যা ৫০ এরও বেশী।
এখন এলাকার কিছু তরুণ গোষ্ঠী এই দায়িত্ব ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন।মন্দিরটিও হয়েছে পাকার।বিভিন্ন পেশার সাথে নিযুক্ত মন্দিরের সদস্যগণ প্রতি বছর উপস্থিত থাকেন এই সময়।গাজনের কয়েকটা দিন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জমজমাট ভাবে কাটে।আশেপাশের গ্রামের মানুষ ভিড় করে আসেন গাজন ভাটা,শিবের বিয়ে সহ আরো বেশ কিছু অনুষ্ঠানের টানে।এছাড়াও নীল পুজোর দিন শিবের মাথায় জল ঢালতে আসে বহু পুনার্থী।ছোটদের গাজনের আর এক বিশেষ আকর্ষণ হলো সং সাজ।বিভিন্ন ধরনের সং সেজে জনগণের মনোরঞ্জন করেন বেশ কিছু মানুষ।সর্বোপরি সব কিছু নিয়ম মেনে বালক সন্ন্যাসী সহযোগে ভক্তি ভরে এই গাজন হয়ে আসছে দীর্ঘ সময় ধরে । মন্দির কমিটির বেশ কিছু তরুণ সদস্য জানিয়েছেন বহুকাল ধরে চলে আসা এই উৎসব ভবিষ্যত প্রজন্মের হাত ধরে এগিয়ে চলবে নিরন্তর।