অতিরিক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার: চিকিৎসক-বিশেষজ্ঞরা কী পরামর্শ দিচ্ছেন?

দেবাশিস কর্মকার, ‘স্থানীয় সংবাদ’, ঘাটাল:দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার! ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াঘটিত যেকোনও ইনফেকশন থেকে দূরে থাকতে সচেতন মানুষরা এখন সব সময়ের সঙ্গী করে নিয়েছে মাস্ক এবং স্যানিটাইজারকে। শুধু করোনা ভাইরাস নয়, যেকোনও রকমের ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াঘটিত ইনফেকশন এড়াতে কিছু সময় অন্তর হাতকে সানিটাইজ করা বা সাবান দিয়ে ধোয়ার কথা সরকারিভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঘন ঘন হাতকে স্যানিটাইজ করা বা সাবান দিয়ে ধোয়ার কোনও পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে কি না সে বিষয়ে প্রথমে বিস্তর কোনও গবেষণা হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি অতিরিক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের ফলে হাতের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নষ্ট হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গটিকে ঘিরে ডাক্তার-গবেষকদের একাংশের মধ্যে যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া নানান গবেষণাপত্র থেকে এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে শুধু ফিঙ্গারপ্রিন্ট চলে যাওয়ায় নয়, অতিরিক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের ফলে হতে পারে নানা রকম আনুষঙ্গিক সমস্যাও। এই পরিস্থিতিতে ভাইরাসের সঙ্গে লড়ার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে সানিটাইজার একটি অন্যতম হাতিয়ার ছিল। কিন্তু সেটিকে ঘিরে যদি অন্য আতঙ্ক কাজ করে তাহলে এখন বিকল্প কী? এই নিয়ে বিভ্রান্তি এড়াতে নানান সুপরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
অতিরিক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের ফলে প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হাতের ফিঙ্গারপ্রিন্ট। হাতের এই রেখা মুছে যাওয়ার পেছনে বিশেষজ্ঞরা সবচেয়ে দায়ী করছেন স্যানিটাইজারে থাকা আলকোহলকে। ত্বক রোগ বিশেষজ্ঞ শুভময় চক্রবর্তী বলেন, ডাক্তারি পরিভাষায় এই ফিঙ্গারপ্রিন্ট মুছে যাওয়াকে বলা হয়, আর্ডারমাটোগ্লিফিয়া। কোভিড আসার আগেও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার হত। কিন্তু বর্তমানে এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারেই এই সকল বিপত্তির কারণ! এদিকে ফিঙ্গারপ্রিন্টে প্রভাব পড়ার জন্য আট থেকে আশি সকলকেই নানান ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। প্রসঙ্গত, এখন অফিস-আদালত, ব্যাংক অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবস্তরেই বায়োমেট্রিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে। লকডাউন চলাকালীন দীর্ঘদিন হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যাবহারের ফলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তা আর রেকগনাইজ তথা চিনতে পারছে না বায়োমেট্রিক মেশিন। ফলে কার্যত গোটা সিস্টেমটিকেই মুখ থুবড়ে পড়তে হচ্ছে। প্রচুর সময় নষ্টের পাশাপাশি ভোগান্তি বাড়ছে মানুষের। তবে বিশেষজ্ঞরা এও জানিয়েছেন, স্যানিটাইজার ব্যবহারের ফলে সাময়িকভাবেই ওই ফিঙ্গারপ্রিন্ট মুছতে পারে। অর্থাৎ, স্যানিটাইজার ব্যবহার বন্ধ করলে পুনরায় ওই হাতের রেখা তৈরি হয়ে যাবে। তাঁরা জানিয়েছেন, শুধু স্যানিটাইজার নয়, টার্নার সিনড্রোম, ক্লিন ফেলটার সিনড্রোম, এডওয়ার্ডস সিনড্রোম প্রভৃতি জিনঘটিত রোগেও ফিঙ্গারপ্রিন্ট মুছে যেতে পারে। কন্টাক্ট ডারমাটাইটিস, অটোপিক এগজিমা, স্ক্যাবিজ প্রভৃতি রোগেও আঙুলের ছাপ মুছতে পারে।
এর পাশাপাশি ত্বকের উপর খুব খারাপ প্রভাব রেখে যাচ্ছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, এমনটাই দাবি গবেষকদের। নিয়মিত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের ফলে হাতের ত্বক মাত্রাতিরিক্ত রকমের শুষ্ক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ স্যানিটাইজারে থাকা আলকোহল বাষ্পীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেহের আদ্রতাকে শুষে নেয়। ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে ডাক্তাররা স্যানিটাইজার ব্যবহারের পর ময়শ্চারাইজার ব্যবহারের কথা বলছেন। অথবা সব ক্ষেত্রে স্যানিটাইজার ব্যবহার না করে সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ সাবান ব্যবহারে ত্বকের আদ্রতার খুব বেশি পরিবর্তন হয়না। ত্বক রোগ বিশেষজ্ঞ কৌশিক লাহিড়ী বলেন, অনেকেরই ত্বকে অটোপিক এগজিমা থাকে। যা আগে প্রকাশ পায়নি। কিন্তু বর্তমানে অতিরিক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের ফলে সেটাই তখন ডারমাটাইটিসে পরিণত হচ্ছে এবং ফিকে হয়ে যাচ্ছে আঙুলের ছাপ।
অন্যদিকে, স্যানিটাইজার আমাদের শরীরকে নানা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস থেকে রক্ষা করে ঠিকই। কিন্তু পাশাপাশি শরীরে থাকা প্রয়োজনীয় ব্যাকটেরিয়াদেরও মেরে ফেলে। ফলে আমাদের শরীররে যে ‘ব্যাক্টেরিয়াল কমিউনিটি’ রয়েছে তা প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবিষয়ে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশানের তরফে জানানো হয়েছে, স্যানিটাইজারে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ইনগ্রেডিয়েন্ট বা উপাদান অ্যান্টি-বায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দিতে পারে। অর্থাৎ এটি এমন ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দেবে যা স্যানিটাইজারকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে। তখন স্যানিটাইজার ব্যবহারেও কোনও কাজ হবে না। তাই এক্ষেত্রেও বিকল্প হিসেবে বেশি করে সাবান এবং জল ব্যবহার করারই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
সাধারণ যেকোনও স্যানিটাইজারে ৬০ থেকে ৯৫ শতাংশ অ্যালকোহল থাকে। তাই সাধারণ স্যানিটাইজারকে অ্যালকোহল-বেসড স্যানিটাইজারও বলা হয়। অ্যালকোহলের এই অতিরিক্ত মাত্রাই স্যানিটাইজারের ক্ষতিকারক দিককে আরও বাড়িয়ে তোলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অ্যালকোহল-বেসড স্যানিটাইজার অ্যালকোহল পয়জনিং এরও কারণ হতে পারে। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে শিশুদের। শিশুরা খাবার ভেবে স্যানিটাইজার খেয়ে নেওয়ার ঘটনা দেখা গিয়েছে। তাই এই বিষয়ে সচেতন থাকা ভীষণভাবে জরুরি বলে জানিয়েছে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশান।


•আমাদের ফেসবুক পেজ:https://www.facebook.com/SthaniyaSambad.Ghatal/
•ইউটিউব চ্যানেল:https://www.youtube.com/SthaniyaSambad
•আমাদের সংবাদপত্রের মোবাইল অ্যাপ:https://play.google.com/store/apps/details?id=com.myghatal.eportal&hl=en
•টেলিগ্রাম চ্যানেল:https://t.me/SthaniyaSambadGhatal

ঘাটাল মহকুমার সমস্ত আপডেট তে যুক্ত হন আমাদের সাথে!