দেবাশিস কর্মকার: ঘাটাল মনসুকার চৌধুরী পরিবারে প্রায় ৩০০ বছরের পরম্পরায় দুর্গা দেবীর আরাধনা হচ্ছে। সময়ের নিরিখে এত পুরানো দুর্গা উৎসবের ঐতিহ্য এলাকায় আর নেই বললেই চলে। একটি আকর্ষণীয় ঘটনার মধ্যে দিয়ে এই দীর্ঘ ইতিহাসের সূত্রপাত ঘটে। প্রসঙ্গত, ওই পরিবারের দুর্গা উৎসবের সূচনার আগে বংশের কুলদেবতা হিসাবে রঘুনাথ, দামোদর, শীতলা, বানেশ্বর শিব প্রভৃতি বিগ্রহের নিত্য পুজো হত। তবে ওই পরিবার সূত্রে জানা যায়, একটি দৈবিক ঘটনার মধ্যে দিয়ে মা চণ্ডী তথা দুর্গা দেবীর আবির্ভাব ঘটে মনসুকার বুকে। সেই আবির্ভাবের পর থেকেই প্রতি বছর দেবী দুর্গার আরাধনা হয়ে আসছে।
সময়টা ছিল আনুমানিক ১৭২৪-২৫ খ্রিস্টাব্দ। সেই সময় বর্ধমানের এক রাজার থেকে পাঁচ’শ বিঘা জায়গীর উপহার পেয়ে তা দেখভালের দায়িত্ব পান ঠাকুরদাস চৌধুরী নামের এই জনৈক ব্যাক্তি। এই ‘চৌধুরী’ শব্দটি তাঁর পদবি ছিল না, তা বর্ধমানের ওই রাজারই দেওয়া উপাধি তথা খেতাব। ঠাকুরদাস চৌধুরী জায়গীরদার হিসেবে ওই এলাকার শাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতেন। তাঁর মৃত্যুর পর সম্পূর্ণ দায়িত্ব বর্তায় তার ছেলে চন্ডীচরণ চৌধুরীর উপর। তাঁর শাসনকালে ওই সময় কোনও এক বছর সারা এলাকায় আজন্মা দেখা দেয়। পাশাপাশি রাজকোষে ঘাটতি দেখা দিলে শাসন পরিচালনাতেও খুব ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছিল। সেই সময় একদিন খাজনা আদায়ে বেরিয়ে চণ্ডীচরণ চৌধুরী আকাশে শঙ্খচিল উড়তে দেখে তাকে মা চণ্ডীর কোনও বিগ্রহ মনে করে তার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা নিবেদন করেন। তাঁর প্রার্থনা ছিল, যদি সেদিন খাজনা ভালো আদায় হয় তবে তিনি মা চণ্ডীর বিগ্রহ স্থাপন করবেন। সঙ্গে শুরু হবে বছরব্যাপী তাঁর আরাধনা। মা চণ্ডী সেদিন কথা রেখে ছিলেন! আশ্চর্যজনকভাবে সেদিন কর আদায় যথেষ্ট ভালো হয়। চণ্ডীচরণ ওই বছরই মহা সমারোহে মায়ের বিগ্রহ স্থাপন করেন। শুরু হয় দেবীবন্দনা।
শুরুতে মা চণ্ডীর আরাধনা হলেও পরে তা দুর্গার বিগ্রহ রূপ দেওয়া হয়। সেই থেকেই প্রতিবছর দুর্গাউৎসব পালিত হয়ে আসছে। তা নিয়ে এলাকাবাসীরও যথেষ্ট উৎসাহ। বর্তমানে মোট চারটি বংশ নিয়ে ওই সমগ্র চৌধুরী পরিবার। সেই সময় রাজ উপহারে পাওয়া সমস্ত জমি-জায়গাই এখন দেবত্ব সম্পত্তি। তা সমস্ত দেখভাল করেন ওই পরিবারের সদস্যরাই। তবে বর্তমানে অনেকেই কর্মসূত্রে নানা জায়গায় থাকলেও দুর্গা পুজোর সময় সকলেই একজায়গায় সমবেত হন। ওই পারিবারিক পুজো কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, এবছর করোনার আবহেও অন্যান্য জায়গার মত যথা সম্ভব সাবধানতা অবলম্বন করেই উৎসব পালিত হবে। প্রতি বছরেই মত এবছরও নানা সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে কাটবে উৎসবের দিনগুলি। দুর্গা পুজোয় প্রতিবছর সংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবে একটা সাহিত্য পত্রিকাও প্রকাশিত হয়। ‘তরুণ বার্তা’ নামের ওই সাহিত্য পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন চৌধুরী পরিবারেরই এক সদস্য গোপেন্দ্রনাথ চৌধুরী। এছাড়াও এলাকার কৃতি ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা দেওয়ার পাশাপাশি, দুঃস্থদের বস্ত্রদান করা হবে। ওই পুজো কমিটির সম্পাদক জয়ন্ত চৌধুরী বলেন, শুধু দুর্গা পুজোই নয়, সারা বছর বিভিন্ন দেবদেবীর পুজো সাড়ম্বরে পালিত হয়। তাকে ঘিরে এখানে বহু মানুষের সমাগম ঘটে।
ঘাটাল মহকুমার সমস্ত খবর পেতে আমাদের MyGhatal মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করুন [লিঙ্ক 👆] এবং ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন[লিঙ্ক 👆]।