এই মুহূর্তে ক্রীড়া/অনুষ্ঠান অন্যান্য সাহিত্য সম্পাদকীয় নোটিশবোর্ড

E-Paper

করোনা: শুধুমাত্র কি পুলিশেরই দায়? এই মুহূর্তে পুলিশের প্রতি একটু মানবিক হোন

Published on: April 15, 2020 । 9:17 AM

কাজলকান্তি কর্মকার [সাংবাদিক|| ঘাটাল || মো: 9933066200]: দাসপুরের সিংহচকের ঘটনায় পুলিশের দোষটা কোথায়? আপনার কি জানেন, দাসপুরের এই ঘটনায় সিংহচকের মাজি পরিবারের ওই যুবকটি এপ্রিল মাসের ১২ তারিখের রাতে চুপিচুপি ওড়িশা  থেকে ফেরার পর স্থানীয় বাসিন্দারা চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাঁরাই পুলিশকে খবর দেন। সেই মতো বার বার সিভিক ও ভিলেজ পুলিশকে দিয়ে ওই পরিবারকে প্রশাসনের সঙ্গে দেখা করতে এবং কোয়ারেন্টাইনে যাবার কথা বলা হয়েছিল। সেটাকে ওই যুবক ও তার পরিবার কোনও রকম আমল দেয়নি। সেজন্য পুলিশ ফোর্সকে ওই বাড়িতে যেতে বাধ্য হতে হয়েছিল।
আক্ষেপের বিষয়, বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষেরই ধারণা ছিল এবং রয়েছে যে, তিনি করোনা সংক্রমিত নন।  তার ফলেই বর্তমানে ভারত সহ বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সেজন্যই সিংহচকের ওই যুবকটি পুলিশের কথায় আমল দেননি। এই ভাবেই তর্ক করে গিয়েছেন। শুধু সিংহচকের ওই ঘটনা নয়, বর্তমানে রাস্তা-ঘাট, চায়ের দোকান, বাজারের ভিড় দেখলে তাই মনে হয়।  ওই যুবকের ধারনাই যদি সত্যি হয়, তাহলে তো দেশ জুড়ে লকডাউন করার দরকারই নেই। সবাই নিজে থেকে ‘স্বঘোষণা’ করবেন তিনি করোনা সংক্রমিত নন।
১৩ এপ্রিল পুলিশ ওই যুবকের পরিবারকে কী বলেছিল সেটা  ১৪ এপ্রিল ঘাটালের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমের চ্যানেলে প্রকাশিত হওয়ার পরই পুলিশকে দোষারোপ করার জন্য সবাই উঠেপড়ে লেগেছেন।  এর মধ্যেও পুলিশের ‘মহা বজ্জাতি’ খোঁজার চেষ্টা করে ওই পেশাটাকে হেয় করার চেষ্টা করছেন। সত্যি কি বিচিত্র দেশ!
পুলিশকে সারা জীবনই দোষারোপ করে আমরা ভীষণ মজা পাই। এর মধ্যে নিজেদের একটা পুরুষত্ব বা বীরত্বও খুঁজে পাই। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে পুলিশের অবস্থাটা কী হচ্ছে তা একবারও ভেবে দেখার সময় আমাদের হাতে নেই।   মনে রাখবেন,  পুলিশগুলোকে সরকারি নির্দেশ মানার জন্য ২৪ ঘন্টা সব ধরনের কাজ করতে হচ্ছে। রোগীদের ভর্তি করতে হচ্ছে, ভবঘুরেদের খাওয়াতে হচ্ছে, অতিপ্রয়োজনীয় জিনিসের কালো বাজারি হচ্ছে কিনা তার নজরদারি করতে  হচ্ছে, পুলিশকেই বর্ডার সিল করতে হচ্ছে, রাস্তায় সিকিউরিটি চেক করতে হচ্ছে, কে গোপনে বাড়ি ফিরছেন সেই বিষয়েও নজরদারি করতে হচ্ছে, কে বাড়িতে খাবার পাচ্ছে না সেটাও পুলিশকেই দেখতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার মদ ব্যবসা চালু করার ফলে সেই মদ দোকানের সামনে ভিড় সামলাতেও পুলিশ বাহিনীকে যেতে হচ্ছে। সাধারণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি পুলিশকে করোনা সংক্রান্ত হাজারো দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে। আর সত্যিই মনে হচ্ছে এরা ‘এলিয়েন’। করোনা ভাইরাস যেন পুলিশকে স্পর্শ করবে না।   এদের বউ বাচ্চা পরিজন থেকেও থাকতে নেই। সরকার থেকে একমাত্র শুধু পুলিশ কর্মীরাই যেন বেতন পান।  যেখানে আমরা করোনা সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে বাড়ির বাইরে বেরোতে পারছি না সেই মুহূর্তে সমাজকে বাঁচিয়ে রাখার দায় যেন শুধু মাত্র পুলিশ এবং সেই সঙ্গে সমস্ত স্তরের স্বাস্থ্যকর্মীদের।
সরকার যদি এই মুহূর্তেই একটি নির্দেশিকা জারি করে দেয় যে, লকডাউন পরিস্থিতিতে বাড়িতে বসে থেকে মাসে মাসে বেতন পেয়ে যাচ্ছেন যে সমস্ত কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের  কর্মীরা  তাঁদেরকেও করোনা মোকাবিলায় মাঠে নামতে হবে,  তখন প্রতিবাদের ঝড় উঠে যাবে। যদি বলা হয়, লকডাউনে গৃহবন্দি পরিবারগুলির হাতে ত্রাণ পৌঁছাতে যাবেন, পুলিশের পরিবর্তে অমুক দপ্তরের কর্মীরা। কে কোথায় লুকিয়ে লুকিয়ে বাড়ি ফিরবে  তা এবার থেকে নজরদারি পুলিশ আর করবে না, সেটা করতে হবে অমুক ডিপার্টমেন্টের কর্মীদের। তখন তাঁদের মধ্যে বিপ্লবী মনোভাব তৈরি হয়ে যাবে। তাঁরাই তখন বলবেন, আমরা তো এটা করতে যাব না? এই মুহূর্তে বাড়িতে বসে অপরের দোষত্রুটি খুঁজে বার করা ছাড়া তো আমাদের আর কিছু কাজই নেই!
সব কাজই পুলিশ করবে। ঘি তুলতে গেলে একটু আঙুল বাঁকাতে হলেই পুলিশকে  খিস্তি দিয়ে আমজনতা মজা লুটবেন— এটা একটা জঘন্য মানসিকতার পরিচয় ছাড়া আর কিছু নয়।

তৃপ্তি পাল কর্মকার

আমার প্রতিবেদনের সব কিছু আগ্রহ, উৎসাহ ঘাটাল মহকুমাকে ঘিরে... •ইমেল: [email protected] •মো: 9933066200 •ফেসবুক: https://www.facebook.com/triptighatal •মোবাইল অ্যাপ: https://play.google.com/store/apps/details?id=com.myghatal.eportal&hl=en ইউটিউব: https://www.youtube.com/c/SthaniyaSambad

Join WhatsApp

Join Now

Join Telegram

Join Now