সৌমেন মিশ্র: •আগস্ট মাসের ৯ তারিখে নিজের হাতে প্রতিষ্ঠিত দুর্গাপুজোর সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষের খুঁটি পুজো করতে এসে নস্টালজিক হয়ে পড়েছিলেন ড. রজনীকান্ত দোলই। ভীষণ ইচ্ছে ছিল নিজের মায়ের আদেশে প্রতিষ্ঠিত পঞ্চাশ বছরের পুজোতেও দুর্গা মায়ের আরাধনায় ব্রতী হওয়ার। আটাত্তরের রজনীবাবু কাতর আবেদনও রেখেছিলেন পুজোর স্বার্থে তাঁর দীর্ঘায়ুর। কিন্তু পঞ্চাশ বছরের দুর্গোৎসব অদেখাই রয়ে গেল রজনীবাবুর।
১৯ আগস্ট সকাল ৮টা ৪০ মিনিট নাগাদ মেদিনীপুরের রবীন্দ্রনগরের এক বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ড. রজনীকান্ত দোলই।
রজনীবাবুর দেশের বাড়ি দাসপুরের নাড়াজোলে। ইদানীং অবশ্য মেদিনীপুরের রবীন্দ্রনগরের বাড়িতে থাকতেন। তবে যেকোনও কাজে ডাক দিলেই দেশের বাড়িতে ছুটে আসতেন তিনি।
রজনীবাবুর পড়াশোনা নাড়াজোল হাইস্কুলে। পরে মেদিনীপুর কলেজে। এক সময় যে স্কুলের ছাত্র ছিলেন, পরে সেই নাড়াজোল হাইস্কুলেই শিক্ষকতা করেছিলেন। কলেজে পড়াকালীনই রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ১৯৫৬ সাল থেকে ক্রমে ক্রমে রজনীবাবু হয়ে উঠেছেন ভোট ময়দানের পাকা খেলোয়াড়। ধীরেধীরে পোক্ত হচ্ছিল তাঁর রাজনৈতিক জীবন।
প্রথম ভোটে দাঁড়ানো ১৯৬৭ সালে, বয়স মাত্র ২৭ বছর। কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে সে বার কেশপুর থেকে জিতেও যান। তবে ১৯৬৯-এ হারতে হয়েছিল। ফের জেতেন ৭১ ও ৭২-এর ভোটে। তবে ১৯৭৭-এর ভোটে বড় ব্যবধানে জেতেন। ক্ষমতায় আসে বামফ্রন্ট। ১৯৮২-তে হেরে যান রজনীবাবু।
সেদিন লঙ্কাগড়ের খুঁটি পুজোয় এসে আমাদের সাথে পুরনো কথা বলতে গিয়ে স্মৃতির ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছিলেন প্রবীণ মানুষটি। বলেন,সিপিএম সন্ত্রাস করে আমাকে হারিয়ে ছিল।
হারলেও ভোটে দাঁড়ানো ছাড়েননি রজনীবাবু। ১৯৬৭ থেকে ২০১১- এই সময়ের মধ্যে হাতে গোনা দু-একবার বাদ দিলে প্রায় সব বিধানসভা ভোটেই কেশপুর থেকে দাঁড়িয়েছেন তিনি। কখনও কংগ্রেসের হয়ে, কখনও তৃণমূলের হয়ে। ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যান। ২০০১ সালে তৃণমূল তাঁকে টিকিট দেয়। সিপিএমের নন্দরানি ডলের কাছে বেশ বড় ব্যবধানে হারতে হয় তাঁকে। পরে ফের কংগ্রেসে ফিরে আসেন। ২০১১ সালের ভোটেও কংগ্রেসের হয়ে কেশপুর থেকে লড়েছিলেন।
রজনীবাবুর নিজের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অধীনে রয়েছে বৃদ্ধাশ্রম থেকে পুনর্বাসন কেন্দ্র, অনেক কিছুই।
দিন বদলের সাথে বেড়েছিল বয়স ভোটের দেওয়ালের রং ফ্যাকাসে হলেও অভিজ্ঞতায় পোক্ত ছিলেন তিনি। কেশপুর,দাসপুর,নাড়াজোলের সঙ্গে সম্পর্কটা থেকেই গিয়েছিল। লোকজন এখনও তাঁর কাছে যেতেন। নিজেদের সমস্যার কথা জানতেন। সাধ্যমতো সাহায্যের চেষ্টাও করতেন রজনীবাবু।