✍🏻সৌমেন মিশ্র, [‘স্থানীয় সংবাদ’• মো:9932953367]: আজকাল এক অদ্ভুত সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। যাঁরা একসময় সমাজের আলো, সম্মান আর মর্যাদার প্রতীক ছিলেন—তারাই আজ পরিস্থিতির জাঁতাকলে পিষ্ট। এই পেশা এখন আর শুধু শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্র নয়; হয়ে উঠেছে নানা চাপ, দায়, অভিযোগ আর অপমানের বোঝা বয়ে বেড়ানোর জায়গা। ক্রমশ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যেন সমাজকে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আজকের শিক্ষককে শুধু পড়ানোই নয়—মিড ডে মিলের হিসেব রাখা, বিভিন্ন দপ্তরের রিপোর্ট বানানো, সরকারি ও বেসরকারি নানা নির্দেশ মানা—সব করতে হয়। কিন্তু একই সময়ে তাঁর হাতে নেই আগের সেই কর্তৃত্ব, নেই প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা। সমস্যা হলেই অভিযোগ, ভুল হলেই তিরস্কার—কখনো স্কুলের ভেতরেই, কখনো অভিভাবকের সামনে, কখনো আবার সোশ্যাল মিডিয়ায়। হাতে একটা মোবাইল নিয়ে অনায়াসে শিক্ষককে অপমান অপদস্ত করা যায়। কিন্তু শিক্ষক এতটাই নিরীহ সুযোগ থাকলেও আইনের দ্বারস্থ হয় না।
দুঃখের বিষয়, এখন অনেকেই মনে করেন শিক্ষককে অপমান করা তাদের অধিকার। কোনো ছাত্র ভুল করলে শিক্ষক কথা বলতেই পারে না—কারণ তৎক্ষণাৎ অভিযোগ উঠে যাওয়ার ভয়। অভিভাবকরা কখনও কখনও নিজেদের সন্তানের সমস্যার দায় শিক্ষকের উপর চাপিয়ে দেন। কেউ ক্লাসে দেরি করলে, শৃঙ্খলা না মানলে, শিক্ষক একটু কঠোর হতে গেলেই— “আপনি আমাদের বাচ্চাকে কেন বকছেন?” এই প্রশ্নে নাস্তানাবুদ হতে হয় তাঁকে।
আগে যদি শিক্ষককে কেউ অপদস্থ করত, জানত খুব কম মানুষ। এখন একটি ভিডিও, একটি পোস্ট—মুহূর্তেই অপমানটি ছড়িয়ে পড়ে হাজার মানুষের কাছে। কিন্তু সেই শিক্ষক যে সারা জীবন শিক্ষাদান করছেন, যে পরিশ্রমে ছাত্রদের ভবিষ্যৎ গড়েন—সেটা কেউ দেখে না। সরকারি অনান্য দপ্তরের ভিডিও কেউ করে না,করার দম তাদের থাকে না।
আজ অনেক শিক্ষক বলেন— “আমরা এখন পড়ানোর চেয়ে বেশি সময় দিই কাগজপত্র আর ব্যাখ্যা দিতে।” “শ্রদ্ধা আর নিরাপত্তা দুটোই হারাচ্ছি।” এই ক্রমাগত চাপ, ভর্ৎসনা আর সন্দেহ মানসিকভাবে ক্লান্ত করে দিচ্ছে তাঁদের। এসবের মাঝে ২০ বছর পর আবার টেট পরীক্ষায় বসার হুমকি !
সব প্রতিকূলতার মাঝেও শিক্ষক ক্লাসে দাঁড়ান সোজা হয়ে। কারণ তিনি জানেন—একজন ছাত্রের চোখে স্বপ্ন জ্বালানোই তাঁর আসল কাজ। সমাজ হয়তো সবসময় সম্মান দেয় না, কিন্তু শিক্ষক জানেন তাঁর অবদান সময় কখনো নষ্ট হতে দেয় না।

শিক্ষকের প্রতি সম্মান কমে গেলে সমাজেরই ক্ষতি। যে জাতি শিক্ষকদের যথাযথ মর্যাদা দেয় না, তাদের ভবিষ্যৎ কখনো উজ্জ্বল হয় না। এখন প্রয়োজন— * শিক্ষককে কাজের স্বাধীনতা দেওয়া * মিথ্যা অভিযোগের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা * অভিভাবক-শিক্ষক সম্পর্ককে সহযোগিতায় পরিণত করা * সমাজে শিক্ষকের মূল্যায়ন নতুন করে বুঝে নেওয়া।





