•আনন্দ নয় দুঃখের দিন। গৌরবের নয় লজ্জার দিন। ঘাটাল রবীন্দ্রশতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়, পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি গৌরবজনক মহাবিদ্যালয়ে আজ থেকে তেত্রিশ বছর আগে, ১৯৮৬-তে এই দিনে আমি লেকচারার হিসাবে যোগ দিই। কলেজটি প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই (১৯৬০-এর ১৪-ই আগস্ট) ঘাটালের মতো একটি মহকুমা শহরাঞ্চলের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের একটি গর্ব ছিল এই মহাবিদ্যালয়টিকে নিয়ে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠেছিল স্থানীয় মানুষের জমি ও অর্থদানের মাধ্যমে। তখন থেকেই এতদাঞ্চলের উচ্চশিক্ষা দানের ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠানটিই একমাত্র ভরসাস্থল এবং আবেগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।
পরবর্তীকালে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রাকাল শুরু হলে কলেজটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আসে। দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ অবস্থায় এই মহাবিদ্যালয়টি উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে গৌরবজনক স্থান দখল করে থাকে। ক্রমে ছাত্রসংখ্যা বেড়ে কলেজটি এক মহীরুহে পরিণত হয়। এর স্বীকৃতিও মেলে ২০০৬ সালে কেন্দ্রীয় ন্যাকের মূল্যায়নে। ব্যক্তিগত রাজনৈতিক বিশ্বাসকে দূরে সরিয়ে রেখে ছাত্র-ছাত্রী-অধ্যাপক-অধ্যাপিকা-শিক্ষাকর্মী বন্ধুদের ঐক্য এই মহাবিদ্যালয়ের মুখ সমুজ্জ্বল করে।
পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে যে সামাজিক – রাজনৈতিক অবক্ষয় সারা বাংলাকে গ্রাস করেছে আজ সেই অবক্ষয় এই মহাবিদ্যালয়টিকে এক সংকটকালে এনে দাঁড় করিয়েছে। কিছুদিন যাবৎ দুটি রাজনৈতিক দলের বাহুবলীদের অবিরাম দৌরাত্ম্যে আজ শুধু এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি আক্রান্ত নয়, আক্রান্ত শিক্ষা এবং মহাবিদ্যালয় সন্নিহিত অঞ্চল।
আজকের দিনটাতে আমি আমার তেত্রিশ বছর জীবনের কর্মজীবন এখানে পালন করছি বটে, কিন্তু মানসিক ভাবে এই অঞ্চলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থেকে হাজার হাজার প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের কাছে এবং ঘাটালের নাগরিকদের কাছে লজ্জা ও দুঃখ প্রকাশ করছি। আজ আমি মানসিক ভাবে অত্যন্ত আঘাতপ্রাপ্ত। এই আঘাত, গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে, গত ২০১৫ সালে ৩-রা ফেব্রুয়ারি কলেজ স্টাফরুমে যেদিন ছাত্র নামধারী কিছু গুণ্ডা দ্বারা আক্রান্ত হই সেই আঘাতকেও ছাড়িয়ে গেছে।
এই মুহূর্তে আমাদের কর্তব্য তাহলে কী? এই অসুস্থ সময়ে মহাবিদ্যালয়, শিক্ষা ও সমগ্র ঘাটাল অঞ্চলের সুস্থ ও স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব নিতে হবে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিক সমাজ, প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মীবন্ধুদের। আজও যদি এতদাঞ্চলের নাগরিকবৃন্দ এই নিত্যদিন ঘটে চলা কুৎসিততম ঘটনাগুলোর প্রতিবাদে ও প্রতিরোধে পথে না নামেন তাহলে ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবে না।
—অমিত রায়(সহযোগী অধ্যাপক,ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়)।