মন্দিরা মাজি, ‘স্থানীয় সংবাদ’, ঘাটাল: সারাদেশে যখন সাম্প্রদায়িকতার আগুন জ্বলছে তখন হিন্দু-মুসলমান একই সঙ্গে প্রতিমা বিসর্জনে গেলেন। ১৫ অক্টোবর ২০২১ রাতে সাম্প্রদায়িকতার সম্প্রতির এমনই নজির দেখা গেল ঘাটাল শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কোন্নগরে। ঘাটালের ১৩ পল্লির সর্বজনীন দুর্গোৎসবে সামিল হয়েছিলেন মুসলিমরা। আমরা জানি বাঙালিদের শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। কিন্তু সেই পুজোতে মুসলিমরাও যে আনন্দ সহকারে অংশগ্রহণ করেন এই দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না। ওই দিন ওই দুর্গোৎসব কমিটির বিসর্জন ছিল। বিসর্জনে শুধু হিন্দুরাই নয়, মুসলিমদেরও মায়ের প্রতিমা ধরে বিসর্জনে নিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে। ঘাটাল পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারপার্সন বিভাসচন্দ্র ঘোষ বলেন, ১৩’র পল্লির পুজো কমিটিতে সমস্ত ধর্মের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সত্যিই একটা নজির। প্রত্যেকটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এই রকম চিত্র দেখা দিলে দেশে সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ বলে কিছু থাকবে না। পুজো কমিটির সম্পাদক তথা যুব তৃণমূলের ঘাটাল শহর সভাপতি সুদীপ মণ্ডল বলেন, আমাদের পুজোটি ২৬ বছর ধরে চলে আসছে। পুজো মণ্ডপের পাশাপাশি এলাকাতে রয়েছে মুসলিমদের বসবাস। কখনই আমরা একে অপরকে আলাদা করে দেখি না। ওরা একাত্ম হয়ে মিশে যায় আমাদের উৎসবে। একই সঙ্গে বসে খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা সমস্তটাই হয়ে থাকে। শুধু তাই নয় আমরাও ওদের উৎসবে সামিল হয়ে থাকি। শেখ মইদুল ইসলাম, শেখ মমতাজ উদ্দিন, রবিয়াল হোসেন ও অন্যান্যরা আমাদের পুজোতে সহযোগিতা করেন। এমনকি আমাদের পুজোর চাঁদাও সংগ্ৰহ করে দেয় ওরা।
শেখ মইদুল ইসলাম বলেন, আমি মনে করি আমরা প্রত্যেকেই মানুষ। আর এটাই আমাদের সব থেকে বড় পরিচয়। তাই এইসব সাম্প্রদায়িকতার বেড়াজালে আবদ্ধ না থেকে আমরা ওদের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি। হিন্দুদের দুর্গাপুজো আমাদের খুব ভালো লাগে। তাই পুজোর নানা ধরনের কাজে সহযোগিতা করে থাকি। আন্তরিকতার সঙ্গে পুজোর কয়েকটা দিন সবাই একসঙ্গে মিলে মিশে যাই। হিন্দু-মুসলিমের এই মেলবন্ধন সমাজের কাছে এক নজির সৃষ্টি করল। এই ঘটনা যেন আমরা পরবর্তী পুজোগুলিতেও দেখতে পাই এমনটাই আশা রাখছি প্রত্যেকে। এই ভাবেই ঘুচে যাক সাম্প্রদায়িকতা।