তৃপ্তি পাল কর্মকার: আবার পড়াশোনা শুরু করার কাতর আবেদন নিয়ে স্কুলে ছুটে এল ঘাটাল মহকুমার প্রত্যন্ত গ্রামের এক ছাত্রী। ওই ছাত্রীর নাম পম্পা রায়। ব্যাংরালে বাড়ি। আজ ১৬ সেপ্টেম্বর সে ঘাটাল ব্লকের
মহারাজপুর হাইস্কুলে এসে ফের পড়াশোনা করার কাতর আর্জি জানায়।
এযেন অন্ধকার সরিয়ে আলোয় ফেরা। আর সেটা স্রেফ ইচ্ছেশক্তির জোরে। এক কন্যাশ্রীর পূর্ণচ্ছেদ হওয়া পড়াশোনা আবার শুরুর মুখে। ২০১৭ সালে পম্পা মহারাজপুর হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়তে পড়তে মায়ের অসুস্থতার কারণে পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য হয়। বাবা বিদ্যুৎ রায় দিনমজুর। পম্পার এক দাদা ও ভাই রয়েছে। দাদা তামার কাজ করে আর ভাই স্কুল ছুট। তাই তারপর থেকে পম্পা আর স্কুল মুখো হতে পারেনি।
যেহেতু পম্পার পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা মোটেই ভালো নয়। এই ধরনের পরিবারগুলিতে যা হয়, তাই হয়েছে। কিছুদিন হল পম্পাদের বাড়ি থেকে তার বিয়ের জন্য কথাবার্তা শুরু হয়েছে। তাতেই ভয় পায় পম্পা। আজ ১৬ সেপ্টেম্বর সে সটান চলে আসে স্কুলে। স্কুলে সে জানায় আবার স্কুলে ভর্তি হতে চায় সে। পম্পার চোখ ছলছল কাতর আবেদন দেখে অভিভূত স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুভাষচন্দ্র দত্ত, সহপ্রধান শিক্ষক সুশীল পোড়ে, শিক্ষিকা শম্পা ধাড়া-সহ সকলেই। সুভাষবাবু বলেন, আগামীকাল ১৭ সেপ্টেম্বর থেকেই স্কুলে আসতে চায় পম্পা। পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায় সে। ওর ইচ্ছেতে আমরাও খুশি। ওর পরিবার খরচ দিতে না পারলে স্কুল তার পড়াশোনার সমস্ত খরচ বহন করবে। মহারাজপুর হাইস্কুল থেকে প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে চলতি বছরের মার্চ মাসে মোহনচক গ্রামের টিনা শাসমল নামে এক নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করা হয়েছিল। প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা ও প্রশাসনের প্রতিনিধিরা টিনার বাড়িতে যায়। অল্প বয়েসে বিয়ে হলে তার নানারকম কুফল থাকে সেটা টিনাকে স্কুল থেকে বোঝানোর ব্যবস্থা করা হয়। সুভাষবাবু বলেন, তাছাড়া পড়াশোনা করলে আগামী দিনে সে কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর যে সুবিধেগুলো পাবে সেটা টিনা ও তার বাড়ির লোকেরা উপলব্ধি করতে পারেন। টিনা আবার পড়াশোনা শুরু করেছে।
প্রত্যন্ত গ্রামের নাবালিকাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে,বাড়ছে পড়াশোনার আগ্রহও। এটা অবশ্যই সুস্থ সমাজের পক্ষে একটা সুন্দর বার্তা।