দুই মেদিনীপুরের মধ্যে একমাত্র ১৭ চূড়ার পার্বতীনাথ মন্দিরটি রয়েছে চন্দ্রকোণায়
অর্জুন পাল[WBCS, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, ঘাটাল মহকুমা]:বৈষ্ণব মতবাদের মত প্রাচীনকালে শৈবধর্মও চন্দ্রকোণায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। ওই অঞ্চলের প্রায় সব গ্রামেই শিব মন্দিরের অস্তিত্ব সেটাই[✔‘স্থানীয় সংবাদ’-এর সমস্ত কিছু জানতে এখানে ক্লিক করুন] প্রমাণ করে। তবে মল্লেশ্বর শিব মন্দির ছাড়া বাকি মন্দিরগুলো তেমন প্রাচীন নয়। অধিকাংশ মন্দিরই অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতাব্দীতে নির্মিত। আগের মন্দিরগুলোর অস্তিত্ব এখন খুঁজে পাওয়া যায় না।
চন্দ্রকোণা পৌরসভার রঘুনাথপুর মহল্লার পার্বতীনাথ শিব
মন্দিরটি চন্দ্রকোণার কয়েকটি শিব মন্দিরের মধ্যে একটি যা তার স্থাপত্য শৈলীর জন্য বিখ্যাত। এর বয়স প্রায় ২০০ বছর। ওই মন্দিরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হল এর ১৭ টি চূড়া রয়েছে, যা অবিভক্ত মেদিনীপুরে একমাত্র। ওই সতেরো চূড়া মন্দিরটি দক্ষিণমুখী, মন্দিরের উপরে দুটি ফলক রয়েছে। প্রথমটি থেকে জানা যায় যে মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ১৮২৪ সালে এবং দ্বিতীয়টি থেকে আমরা জানতে পারি যে ১৯০৮সালে মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছিল। বিভিন্ন কারণে মন্দিরের নির্মাণ সম্পূর্ণ হতে এত বছর লেগেছিল। বর্তমানে সংস্কারের ফলে মন্দিরের বহু প্রাচীন পোড়ামাটির
কাজ ধ্বংস হয়ে গেছে।
মন্দিরের অভ্যন্তরে একটি শিবলিঙ্গ রয়েছে। নিত্য পুজোর পাশাপাশি চৈত্র মাসে ওখানে ধুমধাম করে গাজন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই মন্দিরটি একটি রাষ্ট্র সংরক্ষিত স্মৃতিস্তম্ভ।
ওই মন্দির থেকে কিছু দূরে একটি সুবিশাল প্রাসাদের ভগ্নাবশেষ দেখা যায়। অনেক লোক এই জায়গাটিকে রাজার প্রাসাদ বা রাজ বাড়ি হিসাবে বিবেচনা করে। তবে প্রকৃতপক্ষে কিছু পুরানো জীর্ণ মন্দির যেমন রঘুনাথ-জিউ, লাল-জিউ মন্দির, রাসমঞ্চ, পঞ্চানন শিব মন্দির, হনুমান মন্দির ইত্যাদি এখানে দেখা গেছে ।
১৭০২ সালে বর্ধমানরাজ কীর্তিচন্দ্র চন্দ্রকোণা আক্রমণ করলে তিনি চন্দ্রকোণার মল্লরাজবংশের শাসক রঘুনাথ সিংকে পরাজিত ও হত্যা করেন। কীর্তিচাঁদের গোলাবর্ষণে
তৎকালীন চন্দ্রকোণার বহু মন্দির ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। পূর্ববর্তী ভান রাজাদের আমলে তৈরি রামগড় এবং লালগড়ে রঘুনাথ-জিউ এবং লাল-জিউ-এর মন্দিরগুলিও ধ্বংস করা হয়েছিল। কথিত আছে যুদ্ধ শেষে তিনি কিছু মূর্তি নিয়ে বর্ধমানে ফিরছিলেন। কিন্তু তিনি স্বপ্নে একটি প্রত্যাদেশ পান যে ভগবান চন্দ্রকোণাতেই থাকতে চান। ওই স্বপ্নাদেশ পেয়ে রাজা চন্দ্রকোণার বর্তমান অযোধ্যার গ্রামে রঘুনাথ-জিউ, লাল-জিউ এবং রামেশ্বর শিবের মন্দিরগুলি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। আজ, ৪০০ বছরের পুরানো ওই মন্দিরগুলি জরাজীর্ণ এবং সময়ের সাথে ধীরে ধীরে আরও ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। অনন্তকালের সাগরে ডুবে যাওয়ার আগে স্থানটির পবিত্রতা ও গৌরব রক্ষা করা আশু প্রয়োজন। অন্যথায় স্থানটি শীঘ্রই তার ঐতিহাসিক নিদর্শন হারাবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো এই ইতিহাস শুনবে, কিন্তু এই ঐতিহাসিক স্থানের সাক্ষী হতে নিশ্চিতভাবেই বঞ্চিত হবে।