সৌমেন মিশ্র, স্থানীয় সংবাদ, ঘাটাল: বুধবার মাঝ রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মেইন হোস্টেল’-এর তিনতলা থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় মাত্র তিন দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়া ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর। তার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার খুনের মামলা রুজু করে পুলিশ। ছাত্রটির আত্মীয়রা অভিযোগ করেছেন যে তাকে হোস্টেলে র্যাগিংয়ের শিকার হতে হয়েছিল। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় নাম জড়িয়েছে চন্দ্রকোনার খারুষা গ্রামের সৌরভ চৌধুরীর।কৃষক পরিবারে জন্ম সৌরভের, বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান সৌরভ,সৌরভের বাবা নিরূপ চৌধুরী একজন প্রান্তিক কৃষক। গ্রামের মানুষ থেকে শুরু করে পরিবারের সদস্য সকলেই বলছেন,গ্রামের ছোট্ট ছেলেটা লেখাপড়ায় খুবই ভালো ছিল,ভালো করে পড়াশোনা করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্যই কোলকাতাতে গিয়েছিল উচ্চশিক্ষার জন্য।কিন্তু হঠাৎ করে গ্রামের শান্ত স্বভাবের ছেলেটার নাম জড়াবে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় কেউই মেনে নিতে পারছে না।এক কথায় স্তম্ভিত প্রতিবেশী থেকে সৌরভের পরিবার।ছেলের গ্রেফতারের খবর পেয়ে শনিবার ভোর নাগাদ কোলকাতার উদ্দেশ্য ছেলের কাছে পাড়ি দিয়েছে বাবা মা।সৌরভের বাবা নিরুপ চৌধুরী পাঁচ ভাই,সকলেই ভিন্ন হয়ে বসবাস করলেও পরিবারের ছেলের নাম ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় জড়ানো এবং গ্রেফতার হওয়ায় ভেঙে পড়েছে সকলেই।গ্রাম থেকে কিছু দুরে টেনপুর গ্রামের টেনপুর হাইস্কুলের ছাত্র ছিল সৌরভ।সৌরভের গ্রেফতারের খবর শুনে হতবাক তার স্কুলের প্রাক্তন ছাত্ররাও।কীভাবে মৃত্যু প্রথম বর্ষের ছাত্রটির? নদীয়া জেলার বগুলার বাসিন্দা স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর পরিবারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে মাত্রই গত রবিবার তারা তাদের ছেলেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে রেখে এসেছিলেন।
ছাত্রটি দ্বাদশ শ্রেণীতে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করলেও বাংলা সাহিত্যের প্রতি টানের কারণে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা অনার্স পড়তে ভর্তি হয়েছিল সে।
ওই ছাত্রের মামা অরূপ কুণ্ডু সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “প্রথম তিনদিন সে ক্লাসও করেছিল, কিন্তু বুধবার রাতে ও বাড়িতে ফোন করে জানায় তার খুব ভয় করছে, বাবা-মা এসে যেন দ্রুত তাকে নিয়ে যান।
“তার মাকে সে ফোনেই জানিয়েছিল যে অনেক কিছু বলার আছে তার। ওর বাবা-মা বলেছিল একটা রাত কোনওমতে কাটিয়ে দিতে, পরের দিন, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সকালেই তাকে নিয়ে আসবেন। এরপরে আর চেষ্টা করেও ওর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে পারি নি। রাতে হোস্টেলেরই এক সিনিয়র স্বপ্নদীপের বাড়িতে ফোন করে জানান যে সে তিনতলা থেকে পড়ে গেছে,” জানিয়েছেন মি. কুণ্ডু।
হোস্টেলের আবাসিকরা একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে বৃহস্পতিবার ভোরে তার মৃত্যু হয়।স্বপ্নদীপের বাবা রামপ্রসাদ কুণ্ডু পুলিশকে জানিয়েছেন যে হোস্টেলের কিছু ছাত্রই তার ছেলের মৃত্যুর জন্য দায়ী। পুলিশ সূত্রগুলি বলছে তারা হোস্টেলের আবাসিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এবং শুক্রবার রাতে একজন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।