এই মুহূর্তে ক্রীড়া/অনুষ্ঠান অন্যান্য সাহিত্য সম্পাদকীয় নোটিশবোর্ড

E-Paper

এই ঘটনা নির্দিষ্ট বিদ্যালয়ের নয়, এই সমস্যা সর্বত্রই

Published on: December 8, 2025 । 8:52 PM
দেবাশিস কুইল্যা
দেবাশিস কুইল্যা
বিদ্যালয় জীবন থেকেই সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ থাকায় বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা। অবসর সময় বই পড়া, রেডিও শোনা ও লেখালেখি নিয়েই কাটে। শখের বিষয় গান শোনা। মাঝে মাঝে নানান পত্রপত্রিকায় লোকসংস্কৃতি ও স্থানিক বিষয়ে লেখালেখি করা।
📞 +918609060500 WhatsApp

দেবাশিস কুইল্যা: সম্প্রতি ঘাটাল বসন্ত কুমারী বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির তৃতীয় পর্যায় মূল্যায়ন চলাকালীন একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। জানা গিয়েছে, পরীক্ষায় প্রস্তুত না হয়ে বসা এক ছাত্রী উত্তর লিখতে না পারায় ক্লাসে টুকতে থাকা এবং অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের বিরক্ত করার চেষ্টা করছিল। যখন আরেকজন ছাত্রী এই বিষয়টি কর্তব্যরত শিক্ষিকাকে জানায় তখন পরিস্থিতি অন্য মোড় নেয়। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর অভিযুক্ত ছাত্রীটি প্রতিশোধমূলকভাবে ওই অভিযোগকারী ছাত্রীর গ/লা টিপে ধরে। এই ঘটনা নির্দিষ্ট বিদ্যালয়ের নয়, এই সমস্যা সর্বত্রই। আর এই ঘটনা একটা প্রতীক মাত্র। এই বিদ্যালয়ের এমন ঘটনার গভীরে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীর মানসিক সমস্যা দূর করার জন্য তার পরিবার ও শিক্ষকদের গুরুত্ব অস্বীকার করা সম্ভব নয়। বিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য কৌতূহলপ্রিয়তা, ক্ষিপ্রতা, চঞ্চলতা ও অদ্ভুত প্রশ্নবোধক মনের অধিকারী। বর্তমান বিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের আচার ও আচরণ শিক্ষার্থীসুলভ নয়। শিক্ষার্থীদের সময় শুধু পাঠ্যপুস্তকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকাটা স্বাভাবিক নয়। তার সার্বিক বিকাশের মূলে রয়েছে পরিবার। একটি শিশুর সৃজনশীলতা, সুস্থ মানসিকতার সাথে সম্পূর্ণ শারীরিক বিকাশে পরিবারের ভালোবাসা, বড়দের যত্ন ও নিরাপত্তা পাওয়া তাদের জন্মগত অধিকার। ছাত্রাবস্থায় কিশোর কিশোরীদের মৌলিক চাহিদা পূরণ হচ্ছে কিনা, এদিকে নজর দেওয়ার সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বন্ধন যতবেশি দৃঢ় হবে, শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশ তত বেশি হবে।
মনোবিজ্ঞানী জন বলবি তাঁর ‘বন্ধন তত্ত্বে’ শিশুর বিকাশে নিরাপদ বন্ধনের কথা বলেছেন, যা শিশুর সুস্থ বিকাশের জন্য জরুরি। শিশুর সঙ্গে থেকে পর্যাপ্ত যত্ন ও আদর, শারীরিক ও আবেগসংক্রান্ত নিরাপত্তা দেওয়া, শিশুর সঙ্গে খেলা ও আনন্দদায়ক সময় কাটানোর মতো কাজগুলো শিশুকে নিজের ও অন্যের প্রতি আস্থা তৈরিতে সহযোগিতা করে। অনেক পরিবারেই শিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। তাদের বিভিন্ন চাহিদার প্রতি অভিভাবকের অবজ্ঞা বা অতিসুরক্ষা, শারীরিক ও মানসিক শাস্তি, ক্রমাগত অন্যের সঙ্গে তুলনা, বাবা-মা অথবা অভিভাবকদের অতি প্রত্যাশা, পারিবারিক কলহ ইত্যাদি শিশুদের সঙ্গে অভিভাবকের সম্পর্ককে বিষিয়ে তোলে। তার প্রতিফলন শিক্ষার্থীর পরিবারের বাইরের জগতে ঘটে থাকে।
শিক্ষার্থী নিজের অজান্তেই ভালোবাসা ও আনন্দের জন্য বিভিন্ন মাধ্যম খুঁজতে থাকে, তার অভাব শিক্ষার্থীকে অসংযমী করে তোলে। পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া মানসিক আঘাতের ফলে শিশুরা একদিকে যেমন মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে, আবার কিছু শিশু নিজের চাহিদা পূরণে বেছে নেয় ভুল পথ, ভুল সঙ্গ, যা তাকে ধীরে ধীরে অপরাধী করে তোলে।
শিশু বা শিক্ষার্থীদের এই সমস্যা সমাধানে তার পরিবারের মূল ভূমিকা যেমন থাকে, তেমনি তার দ্বিতীয় গৃহ বিদ্যালয়ের ভূমিকাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তার শিক্ষার্থীদের মানসিক চাহিদা পূরণে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে, তেমনি তার সাধারণ শিক্ষার সাথে নৈতিক ও সামাজিক আচার-আচরণের পরিবর্ধনে সমান গুরুত্ব দেবেন। তবেই একজন শিক্ষার্থী পূর্ণ মনুষ্যত্বের পথে এগিয়ে যাবে।

নিউজ ডেস্ক

‘স্থানীয় সংবাদ’ •ঘাটাল •পশ্চিম মেদিনীপুর-৭২১২১২ •ইমেল: [email protected] •হোয়াটসঅ্যাপ: 9933998177/9732738015/9932953367/ 9434243732 আমাদের এই নিউজ পোর্টালটি ছাড়াও ‘স্থানীয় সংবাদ’ নামে একটি সংবাদপত্র, MyGhatal মোবাইল অ্যাপ এবং https://www.youtube.com/SthaniyaSambad ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে।