মৌমিতা দাঁ
মৌমিতা দাঁ পেশায় বাচিক শিল্পী হলেও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত থাকতে ভালোবাসেন। সংবাদ পাঠ তাঁর নেশা। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে লিখতেও পছন্দ করেন।
বাবলু মান্না, ‘স্থানীয় সংবাদ’, ঘাটাল: রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় যখন এসআইআরের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন বহু বিএলও। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, কেউ নাকি মারাও যাচ্ছেন। সেই সময় দাসপুরের এক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষক রীতিমতো ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ২৩০-দাসপুর বিধানসভার ৮০ নম্বর বুথের বিএলও সৌগত ধাড়া ৬৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী হয়েও অভাবনীয় উদ্যমে বাড়ি বাড়ি ঘুরে এসআইআর কাজ শেষ করে ফেলেছেন। দু’হাতে এলবো ক্রাচে ভর দিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি যাওয়া এটাই ছিল তাঁর রুটিন। সৌগতবাবুর কথায়, ‘আমাকে কোনও প্রতিবন্ধকতাই দমিয়ে দিতে পারবে না। জীবনে প্রথম ভোটের কাজের দায়িত্ব পেয়েছি, নিজের সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করেছি, সুষ্ঠুভাবে এসআইআরের কাজ শেষ করাটা আমার প্রতিজ্ঞা ছিল।’
কৈজুড়ি গ্রামেই সৌগতবাবুর বাড়ি। কৈজুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তিনি। স্কুলজীবনে জাম গাছ থেকে পড়ে স্পাইনাল ইনজুরির শিকার হন। বহু চিকিৎসার পরও ৬৫ শতাংশ স্থায়ী প্রতিবন্ধকতা থেকে যায়। বিশেষ ধরনের জুতো এবং দু’হাতে ক্রাচ নিয়েই তাঁর চলাফেরা। তবুও জীবনের কোনও প্রতিকূলতাকেই কখনও বাধা হতে দেননি। ২০১৭ সালে চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই দায়িত্বশীলতার নজির রেখেছেন। বাড়ি থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে ঝাড়গ্রামে শিক্ষকতার প্রথম পোস্টিং পেয়েছিলেন সেখানেও দায়িত্ব সহকারে কাজ নিজের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন।
এবারই প্রথম তাঁর ঘাড়ে এসে পড়ে এসআইআরের মতো চাপযুক্ত দায়িত্ব। ৮০০ ভোটারের দুই কপি করে মোট ১৬০০টিরও বেশি ফর্ম নিয়ে বাড়ি বাড়ি যাওয়া যে কোনও সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের কাছেও কঠিন কাজ। অথচ সৌগত ধাড়া সহসাই হাল ছাড়েননি। বরং নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে সফলতার সঙ্গে কাজ শেষ করে দিয়েছেন, যা প্রশাসনকেও চমকে দিয়েছে।
সহকারী নির্বাচনী নিবন্ধন আধিকারিক তথা দাসপুর–২ বিডিও প্রবীরকুমার শীট জানান, সৌগতবাবুর কাজের মনোভাব সত্যিই প্রশংসনীয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যেভাবে তিনি দ্রুতগতিতে এগিয়ে গিয়ে সমস্ত কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করে দিয়েছেন সেটা দেখে সত্যিই ভালো লেগেছে। সৌগতবাবুর বাবা স্বপন ধাড়া ও মা সবিতা ধাড়ার চোখেও এখন গর্বের দীপ্তি। ছেলের শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকলেও তার মানসিক শক্তি ও দায়িত্ববোধ তাঁদের বিস্মিত করেছে। তাঁরা বলেন, ওর ভরসা, সাহস সবকিছুই ঈশ্বরের দান। প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও দায়িত্ব পালন করতে ও এমন নিষ্ঠা দেখাচ্ছে দেখে আমাদের বুক ভরে যায়। এসআইআরের কঠিন কাজ সামলে যেভাবে সৌগত ধাড়া নিজের দৃঢ়তা ও মানসিক শক্তির পরিচয় দিয়েছেন, তা রাজ্যের হাজারো বিএলওর জন্যও অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে। তাঁর গল্প যেন বারবার মনে করিয়ে দেয়, দায়িত্ববোধ, ইচ্ছাশক্তি আর মানুষের মন জয় করার কাজ এগুলোর সামনে কোনও প্রতিবন্ধকতাই আসলে খুব বড় নয়।