নিজস্ব সংবাদাতা, স্থানীয় সংবাদ, ঘাটাল: ঘাটাল মাস্ট্যার প্ল্যান কার্যকরি করার প্রক্রিয়া কি শুরু হয়ে গেল? রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভোটের আগে যে কথা দিয়েছিলেন সেই কথা কি সত্যিই রাখতে চলেছেন?
আজ ২২ জুন দাসপুর সেচ দপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের পরিদর্শন প্রাথমিক ভাবে অন্তত সেটাই প্রমাণ করছে। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কার্যকরির করার লক্ষ্যে আজ
রাজ্যের সেচ ও জলপথ দপ্তরের রাজ্যস্তরের ইঞ্জিনিয়াররা দাসপুর থানা এলাকার বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে পরিদর্শন করলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সেচ ও জলপথ দপ্তরের(সাউথ-ওয়েস্ট-২) চিফ ইঞ্জিনিয়ার বিপশ্চিৎ চক্রবর্তী (Bipaschit Chakraborty), ওই দপ্তরের ওয়েস্টার্ন সার্কেল-২এর সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, ঘাটাল মহকুমা সেচ ও
জলপথ দপ্তরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার উজ্জ্বল মাখাল প্রমুখ। এদিন তাঁরা দাসপুর বিধানসভা এলাকার বিভিন্ন এলাকায় পরিদর্শন করে বাস্তব পরিস্থিতিটা দেখলেন। এরপর দপ্তর চূড়ান্ত রূপ রেখে তৈরি করবে।
প্রত্যেক বছর কেঠিয়া নদীর জলের চাপেই মূলত ঘাটাল মহকুমায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। কেঠিয়ে তার জল শিলাবতীতে ফেলে। সেই জল দ্রুত গতিতে রূপনারায়ণ হয়ে নেমে যেতে পারে না। সেই কারণেই শিলাবতী এবং কংসাবতীতে জলের চাপ বাড়ে। তাই আপাতত শিলাবতী
ও কংসাবতীর জল চন্দ্রেশ্বর ও শোলাটোপা খাল দিয়ে সরাসরি রূপনায়াণে ফেলার জন্য পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। এটা হলেই শিলাবতী ও কংসাবতী নদীর জলের চাপ কমে যাবে। সেজন্য অর্ধসমাপ্ত চন্দ্রশ্বর খাল ফের নতুন করে কাটাই করা হবে। যা ঘাটাল-পাঁশকুড়া সড়ক এবং দাসপুর-মেদিনীপুর রাস্তাকে আড়াআড়ি ভাবে ক্রশ করে সুরৎপুরের উপর দিয়ে গুড়লি হয়ে হদলি ঘাটে গিয়ে মিশবে। এর জন্য নতুন করে তিন ব্রিজও তৈরি হবে। একটি ঘাটাল-পাঁশকুড়া রাস্তার বৈকুণ্ঠপুরে, অন্যটি দাসপুর-মেদিনীপুর রাস্তার সুরৎপুরে এবং অন্যদিকে মুর্শিদনগর-রাজনগর নদী বাঁধের উপর।
প্রসঙ্গত প্রত্যেক বছর বর্ষার সময় পূর্ব ও পশ্চিম
মেদিনীপুর জেলার ১৩টি ব্লকের ১৬৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। ফলে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষকে দুভোর্গে পড়তে হয়। প্রচুর ফসলের ক্ষতি হয়। গবাদিপশু মারা যায়। তাই ওই বিস্তীর্ণ এলাকাকে বন্যা মুক্ত করতে ১৯৮২ সালে রাজ্যের তৎকালীন সেচ মন্ত্রী ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের শিলান্যাস করেন। কিন্তু শিলান্যাস হলেও সেই থেকে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কাজ এক বিন্দু এগোয়নি। পরে মাস্টার প্ল্যানের জন্য ১৭৪০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প ধরা হয়। প্রথম ধাপে ১২১৪ কোটি ৯২ লক্ষ টাকার কাজ হওয়ার কথা। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার কোনও টাকা দেয়নি বলে অভিযোগ। কেন্দ্রের প্রতি তিতিবিরক্ত হয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুগলির এক সভা থেকে ঘাটালের সংসদ সদস্য দীপক অধিকারীকে(দেব) সামনে রেখে রাজ্যের উদ্যোগেই মাস্টার প্ল্যান কার্যকরী করার কথা ঘোষণা করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই সভায় বলেন কেন্দ্রীয় সরকার টাকা না দিলেও রাজ্য সরকার নিজেদের অর্থে ওই মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ করবে। সেই কথারই বাস্তবায়ন বলে মনে করা হচ্ছে।