অনামিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, স্থানীয় সংবাদ, ঘাটাল: রাত্রে জঙ্গলের মাঝে বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ঠিক কতটা [✔‘স্থানীয় সংবাদ’-এর সমস্ত কিছু জানতে এখানে ক্লিক করুন] সুন্দর বা বলা ভালো ভয়ংকর সুন্দর সেই অভিজ্ঞতা নিতে একবার রাতে গনগনির রিসোর্টে থেকে যেতে পারেন। সাধারণত নাইট-স্টে কেউ করে না। তবে কেউ যদি করতে চান করতে পারেন ভালো লাগবে শহর থেকে দূরে জঙ্গলের মাঝে। ওখানে অনলাইন বুকিং করতে হয়। অফলাইন বুকিং নেই [বুকিং লিঙ্ক: https://tourism.paschimmedinipur.net/booking]। খুব সুন্দর সুন্দর কর্টেজ। মোট চারটি রুম আছে। নদীর নামে এক একটি রুমের নাম দেওয়া হয়েছে। যেমন, শিলাবতী, কংসাবতী, ডুলং এবং সুবর্ণরেখা। ৭-৮ মাস হলো ওই রিসোর্টটি চালু হয়েছে। রেস্তোরাঁ আছে খাওদাওয়া করার জন্য। তবে বাইরের হোটেলের থেকে দামটা তুলনামূলক ভাবে একটু বেশিই মনে হবে।
আমরা সরকারি রিসোর্টে রাত কাটানোর জন্যই এই গরমে কয়েক দিন আগে গনগনি গিয়েছিলাম। আমরা যেদিন গিয়েছিলাম ওইদিন শুধু আমাদেরই বুকিং ছিল। সন্ধ্যা ৬-৭ টার পর গেট বন্ধ হয়ে যায়। গেট বন্ধের পর রিসোর্ট এরিয়ার ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। রাত ৯ টার পর ওই রিসোর্ট সংলগ্ন গনগনি এক্কেবারে শুনশান হয়ে যায়। ওখানে ছিলাম বলতে আমাদের পরিবারের সাদস্য চার জন। সিভিক পুলিশ দু’জন আর রেস্তোরাঁর তিন জন লোক।যেহেতু ওই রাতে আমরা ছাড়া আর কেউ ভ্রমণার্থী ছিলেন না। তাই বেশি রাত করলাম না। রাত ৯ টায় আমরা খাওয়াদাওয়া করে নিই। আমাদের খাওয়া হয়ে যেতে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে কর্মীরাও রিসোর্ট ছেড়ে চলে যান। এত বড় এলাকায়, বিশেষ করে অপরিচিত এলাকায় শুধুমাত্র পরিবারে চার সদস্য, তাই রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের গা ছমছম করতে লাগলো। আমরা রুমে প্রবেশ করার কিছু পর গেটের সামনে কয়েকটি লাইট আর রুমের সামনের লাইট ছাড়া বাকি সব লাইট অফ হয়ে যায়। ফলে ভয়টা যেন আরও বাড়তে লাগল। জানলার পর্দা সরিয়ে জঙ্গলটাকে একবার দেখার চেষ্টা করতেই আমার অন্তরআত্মা শুকিয়ে কাঠ। ভাবতেই পারছিলাম না, বিকেলে যেখানে স্বচ্ছন্দে ঘোরাফেরা করছিলাম সেই জায়গাটায় রাতে এত ভয়ানক আকার ধারণ করতে পারে! রাত বাড়ার সাথে সাথে জঙ্গলের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবেই একটা অসম্ভব নিস্তব্ধতা ছেয়ে গেল। মাঝেমধ্যে মাটিতে কিছু যেন পড়ার আওয়াজ পাচ্ছিলাম সকালে উঠে বুঝলাম গাছ থেকে রসবাদাম পড়ার আওয়াজ ছিল ওগুলো।
নির্জনতা, নিস্তব্ধতার জন্য সারা রাতে দুচোখের পাতাগুলো এক হতে পারছিল না। মনে হচ্ছিল সুযোগ থাকলে বা গাড়ি যোগাযোগ থাকলে রাতেই বাড়ি চলে আসতাম। ভোরের আলো ফুটতে মনে স্বস্তি আসে। কিন্তু সকালের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের হাতছানি আবার মনকে উদাস করে দেয়। মনের মধ্যে থাকা অকারণ ভীতি দূর হয়। মনে হচ্ছিল, ফের একটা দিন ওখানে কাটিয়ে দিই।