এই মুহূর্তে ক্রীড়া/অনুষ্ঠান অন্যান্য সাহিত্য সম্পাদকীয় নোটিশবোর্ড

E-Paper

ঘাটালে ২ কোটি টাকার ইলেক্ট্রিক চুল্লির কাজ ৫ বছরেও শেষ হল না কেন?

Published on: December 20, 2025 । 5:02 PM

রবীন্দ্র কর্মকার, ‘স্থানীয় সংবাদ’, ঘাটাল: ঘাটালে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে ইলেকট্রিক শবদাহ চুল্লির কাজ কবে শেষ হবে? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ঘাটাল মহকুমা সহ বিভিন্ন জেলার মানুষ। ঘাটালের বেশ কিছু মানুষ অভিযোগের সুরে বলেন, প্রায় পাঁচ বছর ধরে এই চুল্লির কাজ ঝুলে রয়েছে। এটা সম্পূর্ণ হলে যাদের প্রিয়জন মারা যান সেই মৃতদেহগুলি অন্তত বীভৎসভাবে হাত-পা ভেঙে কাঠের চুল্লিতে ঢুকিয়ে দিয়ে দাহ করা থেকে মুক্তি পাবে। ইলেকট্রিক চুল্লিটি হলে অন্তিমযাত্রাটা অন্তত সুষ্ঠুভাবে করা যেত। সব থেকে বড় কথা ঘাটাল বন্যাপ্রবণ এলাকা। বর্ষার সময় প্রতিবছর ঘাটাল ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা, ঘাটাল ও খড়ার পুরসভার অনেকগুলি ওয়ার্ড একাধিকবার বন্যায় প্লাবিত হয়। ডুবে যায় শ্মশানচুল্লি সহ পথঘাট। মৃত্যু তো আর আটকানো সম্ভব নয়। ওই সময় কেউ না কেউ মারা যান। তখন ওই মৃতদেহ সৎকার করতে যে হয়রানি পোহাতে হয় যেন মরেও শান্তি নেই। সে খবরও সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে বারবার। সেজন্যই দীর্ঘদিন থেকে ঘাটাল মহকুমা শহরে একটি বৈদ্যুতিক শবদাহ চুল্লি করার দাবি  ছিল। সেই দাবি অনুযায়ী ২০২১ সালে ওই ইলেকট্রিক চুল্লিটি তৈরির কাজ শুরু হয়। চুল্লিটি হলে তা পরিবেশবান্ধবও হবে। কাঠের জন্য যেমন গাছ কাটতে হবে না, সেই সঙ্গে দূষণ কম হবে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এই আধুনিক শ্মশানটি হয়ে গেলেও ঘাটালের মত জায়গায় এর বিপুল প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্ত্বেও কেন তা আটকে পড়ে আছে তানিয়ে ক্ষুব্ধ বিভিন্ন স্তরের মানুষজন।

উল্লেখ্য, ২০২১ সাল থেকে ঘাটাল শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ড ময়রাপুকুর চত্বরে ওই বৈদ্যুতিক শবদাহ চুল্লি তথা ক্রিমাটোরিয়ামটি তৈরির কাজ শুরু হয়। বাজেট ছিল এক কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। এক কোটি ৬০ লক্ষ টাকা টেন্ডারে চুল্লিটি তৈরির কাজ শুরু হয়। কিন্তু পাঁচ বছর পেরোতে চলল এখনও সেই কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। যে কাজ এক বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ হওয়ার কথা ছিল তা অর্ধসমাপ্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। সম্পূর্ণ কবে হবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। ঘাটাল পুরসভার চেয়ারম্যান তুহিনকান্তি বেরা বলেন, বৈদ্যুতিক শ্মশান তৈরির কাজটি পূর্ত দপ্তর করছে। সামান্য একটি কাজের জন্য শবদাহ চুল্লিটি তৈরির কাজ শেষ করা হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে বার বার আমি জেলা শাসককে জানিয়েছি। জেলা শাসক আশ্বাস দিয়েছেন কিছু দিনের মধ্যেই চুল্লির কাজ শেষ করে দেওয়া হবে।

ঘাটাল মহকুমায় বৈদ্যুতিক চুল্লি নেই। তাই কাঠের বা কয়লার চুল্লিই ভরসা। তাও আবার সরকারি ভাবে প্রত্যেক গ্রামে এখনও শ্মশানচুল্লি এবং শেড তৈরি করে দেওয়া হয়নি। ঘাটালে এই বৈদ্যুতিক শবদাহ চুল্লিটি হলে ঘাটাল মহকুমা ছাড়াও হুগলি জেলার একাংশ, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার একাংশের মানুষ সহ বন্যা এলাকার মানুষজনও উপকৃত হবেন।
বৈদ্যুতিক শ্মশান তৈরির কাজ দেখভাল করছে পূর্ত দপ্তরের চন্দ্রকোণা রোডের ডিগ্রি সাবডিভিশন। ওই সাবডিভিশনের এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, বৈদ্যুতিক শবদাহ চুল্লিটির জন্য প্রথমে যে টাকা বরাদ্দ হয়েছিল সেই টাকাতে কাজটি সম্পূর্ণ হয়নি। কেননা যে জায়গায় চুল্লিটি হচ্ছে সেখানটি বন্যায় ডুবে যায়। ২০২১ সালে বর্ষাকালে দেখা যায়, প্রথমে পূর্ত দপ্তর মাটি থেকে যে উচ্চতায় চুল্লিটি তৈরি করার পরিকল্পনা করেছিল সেই স্তর থেকে নির্মাণ করলে চুল্লির-ঘরটি অনেকটি ডুবে যাবে। সেজন্যই পিলার তুলে এক তলা বাড়ির উচ্চতার সমান নীচের দিকটা ফাঁকা রেখে তারপর মূল চুল্লিটি তৈরি করা হয়। অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার বলেন, সেজন্যই ওই বাজেটে চুল্লিটি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ করা যায়নি। সম্প্রতি প্রায় ৮২ লক্ষ টাকার ব্যালান্স এস্টিমেট পাঠানো হয়েছে।  সেই টাকা মঞ্জুর হলেই  চুল্লির কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

রবীন্দ্র কর্মকার

ঘাটাল মহকুমার যে কোনও ঘটনা ও তথ্য জানা থাকলে আমাকে সঙ্গে সঙ্গে শেয়ার করুন। মো: 9933998177