সৌমেন মিশ্র,দাসপুর:সামিনেই আলোর উৎসব দীপাবলী। চোখ ঝলমলে আলোর রোসনাইয়ে আলোকিত হবে সারা রাজ্য। এক দশক আগেও এই সময়টায় নাওয়া খাওয়ার সময় পেতেন না দাসপুর এলাকার কুমোররা। মাটির প্রদীপে তেল সলতে দিয়ে কালীপুজোর রাত গুলো আলোকিত হত। হাসি ফুটত,আলোকিত হত কুমোর পাড়ার মোহন পাল,অনিল পাল,সন্দীপ,বাপন,ঝর্ণা দেবীদের ঘরও।
দিন বদলেছে প্রদীপের সে রোসনাই আর নেই। বাজার জুড়ে টুনি,চিনা আলোর দাপাদাপি। এক সুইচেই রঙ বে রঙের হাজার আলো। তাও আবার সাধ্যের মধ্যেই। সলতে পাকিয়ে তেল দিয়ে প্রদীপ জ্বালানোর ঝক্কিঝামেলা বিলুপ্তির পথে ঠেলে দিয়েছে বাংলার এক প্রাচীন শিল্প কুমোরদের মৃৎ শিল্পকে।
দাসপুর-২ ব্লকের পার্ব্বতীপুরে প্রায় ১৪টি কুমোর বাড়ি থাকলেও মাটির কাজের সাথে যুক্ত হাতে গোনা আর মাত্র এক বা দুটি পরিবার।
ষাটোর্ধ্ব অনিল পাল জানালেন,এই মরশুমে আগে হাজার দশেক প্রদীপ বাজারে যেত। এখন চাহিদা এক্কেবারেই নেই। এবার হাজার খানেক প্রদীপ বানানো আছে। তাছাড়া বাড়ির এযুগের ছেলেরা আর এই কাজে আগ্রহী নয়। এই কাজ যথেষ্ট শ্রমসাধ্য।
দাসপুর-১ ব্লকের চিত্রটা একটু হলেও আলাদা। দাদপুর গ্রামে এখনও তিনটি পরিবার পরম্পরাগতভাবে কুমোরের কাজ করে আসছেন৷ ওই পরিবারের অন্যতম সদস্য ৫৫ বছরের মোহন পাল জানালেন,৪০ বছর ধরে তিনি এই কাজ করে আসছেন। বর্তমানে খরচ অনেক বেড়েছে। এই শিল্পে প্রধান কাঁচা মাল এঁটেল মাটি। এই মাটি আর সামনাসামনি মিলছে না। দূরদূরান্ত থেকে মাটি কিনে আনতে হচ্ছে। তাঁর কথায় মাটির প্রদীপের চাহিদা কমলেও পুজোর ঠাকুরের বাসনের চাহিদা যথেষ্ট রয়েছে। তাদের পক্ষে এই শিল্প চালাতে গেলে চাই শিল্প লোন। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতে এ বিষয়ে বারবার আবেদনেও মেলেনি সাড়া আক্ষেপ মোহন বাবুর।
পালাবদলের সাথে শব্দবাজির দাপাদাপি যথেষ্টই কমেছে। সরকার ও প্রশাসনের পক্ষে বারবার বলা হচ্ছে শব্দবাজি বাদ দিয়ে আলোর রোসনাইয়ে আলোকিত হতে। এখন দেখার সেই আলো রাজ্যের কুমোর বাড়ি গুলির প্রদীপ আবার জ্বালাতে সক্ষম হয়কিনা!