রবীন্দ্র কর্মকার, ‘স্থানীয় সংবাদ’, ঘাটাল: সাড়ে তিন বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান, কিন্তু সেই ভয়ানক রাতের স্মৃতি আজও অমলিন। দাসপুরের কিসমৎ নাড়াজোলে ঘটে যাওয়া সেই হাড়হিম করা খুনের ঘটনায় অবশেষে নেমে এল বিচারদণ্ড। এক গভীর রাতে আক্রোশের বশে যে বাঁশের বাড়িতে থেঁতলে দেওয়া হয়েছিল প্রতিবেশী প্রৌঢ়ের মাথা, সেই নৃশংস অপরাধের দায়েই সোমবার ঘাটাল আদালত দোষী সাব্যস্ত করল যুবক সৌরভ গিরি ওরফে তুফানকে। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তুফান শুনল, সে আজ আইনের চোখে শুধুই এক ‘খুনি’।
ক্যালেন্ডারের পাতায় দিনটা ছিল ২০২২ সালের ১৪ মে। চারপাশ তখন নিঝুম। সেই নিস্তব্ধ রাতে তুফানের মাথায় তখন যেন খুন চেপেছে। প্রতিবেশী পঞ্চান্ন বছর বয়সী অসিত মাইতির ওপর দীর্ঘদিনের জমে থাকা আক্রোশ আগ্নেয়গিরির মতো ফেটে পড়েছিল সেদিন। রাগের বশে হাতের কাছে পাওয়া বাঁশ দিয়েই অসিতবাবুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তুফান। এলোপাথাড়ি মার, আর তাতেই সব শেষ। নিজের স্ত্রী-সন্তান থাকা সত্ত্বেও পরিবারের থেকে দূরে একাই থাকতেন অসিতবাবু। পুকুর চাষ আর ভাড়ার গাড়িতেই চলত তাঁর সংসার। কে জানত, সেই একাকীত্বই তাঁর কাল হবে! ঘটনার বীভৎসতা জানার পরই পুলিশ তুফানকে গ্রেপ্তার করেছিল, আর আজ সেই তদন্ত ও অকাট্য সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত হলো সে।
সোমবার ঘাটালের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ময়ূখ মুখোপাধ্যায়ের এজলাসে ছিল পিনপতন নীরবতা। বিচারক যখন রায় ঘোষণা করলেন, তখন স্পষ্ট হয়ে গেল তুফানের ভবিষ্যৎ। কিন্তু কী অপেক্ষা করছে তার কপালে? ফাঁসির দড়ি নাকি আজীবন কারাবাসের অন্ধকার কুঠুরি? সেই চূড়ান্ত ফয়সালা হবে মঙ্গলবার। সরকার পক্ষের আইনজীবী চিত্তরঞ্জন কর্মকার এবং আসামী পক্ষের আইনজীবী গৌতম বেরা—উভয়েই তাকিয়ে আছেন আজকের এই চূড়ান্ত মুহূর্তের দিকে। ৩০২ ধারার যা বিধান, তাতে মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড—এর বাইরে আর কোনও পথ খোলা নেই। বাবা-হারা তুফান নাড়াজোল রাজ কলেজের সামনে বসে নিপুণ হাতে তামার গয়না গড়ত, কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, আজ তাকেই নিজের হাতে গড়া আক্রোশের শিকলে বন্দি হতে হলো। আজ শাস্তি ঘোষণার পরেই বোঝা যাবে, তুফানের এই ‘ঝড়’ ঠিক কোথায় গিয়ে থামে।






