এই মুহূর্তে ক্রীড়া/অনুষ্ঠান অন্যান্য সাহিত্য সম্পাদকীয় নোটিশবোর্ড

E-Paper

পারিবারিক বন্ধনের অভাব ও শিক্ষাঙ্গনের আচরণ: শিক্ষার্থীর মানসিক সংকটের প্রতীকী রূপ

Published on: December 10, 2025 । 11:00 AM
দেবপ্রসাদ পাঠক বন্দ্যোপাধ্যায়
দেবপ্রসাদ পাঠক বন্দ্যোপাধ্যায়
ঘাটাল মহকুমা আদালতের একজন স্বনামধন্য বরিষ্ঠ আইনজীবী। দিনের অধিকাংশ সময় আইনের জটিল যুক্তি-তর্ক এবং পেশাগত পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও, শত ব্যস্ততার মাঝে নিজের মৌলিক চিন্তাভাবনা ও সামাজিক চিত্র নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে কলম ধরতে ভালোবাসেন।
📞 +919433256773 WhatsApp

দেবপ্রসাদ পাঠক বন্দ্যোপাধ্যায়, স্থানীয় সংবাদ: সম্প্রতি ঘাটাল বসন্ত কুমারী বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির তৃতীয় পর্যায় মূল্যায়ন চলাকালীন একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। জানা গিয়েছে, পরীক্ষায় প্রস্তুত না হয়ে বসা এক ছাত্রী উত্তর লিখতে না পারায় ক্লাসে নকল করার এবং অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের বিরক্ত করার চেষ্টা করছিল। যখন আরেকজন ছাত্রী বিষয়টি কর্তব্যরত শিক্ষিকাকে জানায়, তখন পরিস্থিতি অন্য মোড় নেয়। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর অভিযুক্ত ছাত্রীটি প্রতিশোধমূলকভাবে অভিযোগকারী ছাত্রীর গলা টিপে ধরে। এই ঘটনা নিয়ে ‘স্থানীয় সংবাদ’-এর পোর্টাল www.ghatal.net-এ বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক দেবাশিস কুইল্যা লিখেছেন, এই সমস্যা কেবল নির্দিষ্ট বিদ্যালয়ের নয়, এটি সর্বত্র বিদ্যমান। আর এই ঘটনা কেবল একটা প্রতীক মাত্র। এই ধরনের ঘটনার গভীরে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীর মানসিক সমস্যা দূর করার জন্য তার পরিবার ও শিক্ষকদের গুরুত্ব অস্বীকার করা সম্ভব নয়। আমার অভিমত, সাধারণত বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হল কৌতূহলপ্রিয়তা, ক্ষিপ্রতা, চঞ্চলতা এবং অদ্ভুত প্রশ্নবোধক মনের অধিকারী হওয়া। কিন্তু বর্তমান বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের আচার-আচরণ অনেকক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীসুলভ নয়। শিক্ষার্থীদের সময় শুধু পাঠ্যপুস্তকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকাটা স্বাভাবিক নয়। তার সার্বিক বিকাশের মূলে রয়েছে পরিবার। একটি শিশুর সৃজনশীলতা, সুস্থ মানসিকতার সাথে সম্পূর্ণ শারীরিক বিকাশে পরিবারের ভালোবাসা, বড়দের যত্ন ও নিরাপত্তা চাওয়া তাদের জন্মগত অধিকার। ছাত্রাবস্থায় কিশোর-কিশোরীদের মৌলিক চাহিদা পূরণ হচ্ছে কিনা সেদিকে নজর দেওয়ার সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বন্ধন যত বেশি দৃঢ় হবে, শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশ তত বেশি হবে। মনোবিজ্ঞানী জন বলবি তাঁর ‘বন্ধন তত্ত্বে’ (Attachment Theory) শিশুর বিকাশে নিরাপদ বন্ধনের কথা বলেছেন, যা শিশুর সুস্থ বিকাশের জন্য জরুরি। শিশুর সঙ্গে থেকে পর্যাপ্ত যত্ন ও আদর, শারীরিক ও আবেগসংক্রান্ত নিরাপত্তা দেওয়া, শিশুর সঙ্গে খেলা ও আনন্দদায়ক সময় কাটানোর মতো কাজগুলো শিশুকে নিজের ও অন্যের প্রতি আস্থা তৈরিতে সহযোগিতা করে। অনেক পরিবারেই শিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। তাদের বিভিন্ন চাহিদার প্রতি অভিভাবকের অবজ্ঞা বা অতিসুরক্ষা, শারীরিক ও মানসিক শাস্তি, ক্রমাগত অন্যের সঙ্গে তুলনা, বাবা-মা অথবা অভিভাবকদের অতি প্রত্যাশা এবং পারিবারিক কলহ ইত্যাদি শিশুদের সঙ্গে অভিভাবকের সম্পর্ককে বিষিয়ে তোলে। তার প্রতিফলন শিক্ষার্থীর পরিবারের বাইরের জগতে ঘটে থাকে। শিক্ষার্থী নিজের অজান্তেই ভালোবাসা ও আনন্দের জন্য বিভিন্ন মাধ্যম খুঁজতে থাকে। এই অভাব শিক্ষার্থীকে অসংযত করে তোলে। পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া মানসিক আঘাতের ফলে শিশুরা একদিকে যেমন মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে, আবার কিছু শিশু নিজের চাহিদা পূরণে বেছে নেয় ভুল পথ, ভুল সঙ্গ, যা তাকে ধীরে ধীরে অপরাধী করে তোলে। শিশু বা শিক্ষার্থীদের এই সমস্যা সমাধানে তার পরিবারের মূল ভূমিকা যেমন থাকে, তেমনি তার দ্বিতীয় গৃহ—বিদ্যালয়ের ভূমিকাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তার শিক্ষার্থীদের মানসিক চাহিদা পূরণে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন, তেমনি তার সাধারণ শিক্ষার সাথে নৈতিক ও সামাজিক আচার-আচরণের পরিবর্ধনেও সমান গুরুত্ব দেবেন। তবেই একজন শিক্ষার্থী পূর্ণ মনুষ্যত্বের পথে এগিয়ে যাবে।

নিউজ ডেস্ক

‘স্থানীয় সংবাদ’ •ঘাটাল •পশ্চিম মেদিনীপুর-৭২১২১২ •ইমেল: [email protected] •হোয়াটসঅ্যাপ: 9933998177/9732738015/9932953367/ 9434243732 আমাদের এই নিউজ পোর্টালটি ছাড়াও ‘স্থানীয় সংবাদ’ নামে একটি সংবাদপত্র, MyGhatal মোবাইল অ্যাপ এবং https://www.youtube.com/SthaniyaSambad ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে।