বিকাশ আদক: প্রবাদ আছে, ‘খাল কেটে কুমির আনা’। প্রায় চারদশক ধরে গ্রামের মানুষ তা পলে পলে টের পাচ্ছেন। এক সময় যে জলধারাকে চাষাবাদের কারণে পথ দেখিয়ে এনেছিল, জলসংকটের অবসান ঘটিয়েছিল, আজ তা লাভের থেকে বহুগুণ ক্ষতির মুখে দাঁড়িয়েছে। বিঘার পর বিঘা জমি, খেলার মাঠ, বহু বড়ো বড়ো গাছ, ছোটো বন, নদীবাঁধ—সব গ্রাস করেছে চন্দ্রকোণা-২ ব্লকের ভগবন্তপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এর অধীন ধর্মপোতা গ্রামটির। [•এই গ্রাম সম্পর্কিত ভিডিওটি দেখতে চাইলে ▶এখানে ক্লিক করতে পারেন।]
শোনা যায়, বহুবছর আগে বর্তমানে গড়বেতা-১ ব্লকের অধীন দোমনি মৌজার কাছে শিলাবতীর মুলস্রোত থেকে নিম্নবর্তী অঞ্চলের কৃষকরা চাষাবাদের জন্য নালা কেটে জল আনত। ক্রমাগত ক্ষয়কার্যের ফলে কালের পরিবর্তনে আজ তা শিলাবতীর কেঠিয়া খাল নামে পরিচিত। বর্তমানে দোমনি মৌজায় শিলাবতী নদী দুটি ধারায় বিভক্ত আছে। একটি শিলাবতী নদী নামে শিমুলিয়া, বলদঘাটা, কালিকাপুর, চৈতন্যপুর, ঘোষকিরা, পলাশচাবড়ী, বাঁকা হয়ে গ্রামের পশ্চিমদিকে বয়ে গেছে, আর একটি শাখা শিলাবতীর কেঠিয়া নামে কুণ্ডলগেরিয়া, হরিপুর, ধানসাড়া, চাষীবাড়, ধর্মপোতা, খুড়শি, বারাসত, ক্ষীরপাই হয়ে গ্রামের পূর্বদিকে বয়ে চলেছে। এই গ্রামের উত্তরসীমানা নির্ধারণ করেছে আবার শিলাবতীনদী ও কেঠিয়া খালের সংযোগকারী অপর একটি খাল, যা কানাখাল নামে পরিচিত। জানা যায়, এটাই নাকি শিলাবতীর মূল গতিপথ ছিল। যাইহোক, এই ধর্ম্মপোতা গ্রামটির অবস্থান যদি দেখা যায়, তাহলে চারিদিকেই নদী কবলিত একটি স্থান। তবে এখন যেটা বড়সড় মাথাব্যথার কারণ সেটা হল গ্রামের পূর্বদিক জুড়ে প্রায় এক কিলোমিটার কেঠিয়াখালের অবস্থান।
গ্রামটিতে প্রায় ১৮৫টির মতো নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের বাস। মূল জীবিকাই হল কৃষিকাজ। যে কৃষকের সবচেয়ে বেশি জমি আছে তার পরিমাণ ৭-১০বিঘা। নিম্ন সমতল এলাকা হওয়ায় প্রতিবছর বন্যায় কবলিত হয়। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। কানাখাল ও কেঠিয়াখালের মিলিত জলস্রোত গ্রামের পূর্বদিকে হু-হু শব্দে ক্ষয়কার্য বাড়িয়েই চলেছে। উপরন্তু প্রতিবছর বেআইনিভাবে বিশাল পরিমাণ বালি তোলায় তা আগুনে ঘি ঢালার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই তো সেদিনের কথা, চার দশকও হবে না, গ্রামের পূর্বদিকে মূল রাস্তার পরে প্রায় ৫০-৬০একর জায়গা জুড়ে ছিল তিনফসলী জমি, খেলার মাঠ, ছোটো ছোটো বন, উৎসবের স্থান (গাজনতলা), নদীবাঁধ সহ কতকিছু। আজ তা অতীত। কৃষকরা হারিয়েছে তাদের জমি, তরুণ-ছোটোরা হারিয়েছে তাদের খেলার মাঠ, উৎসবের স্থান প্রায় নদীগর্ভে পতিত, বন-পতিত তো নিশ্চিহ্ন। সব খেয়ে কেঠিয়া আজ বহরে নদীকে টপকে গেছে। বছর দশেক আগে মূলরাস্তার কিছুটা অংশ নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় রাস্তার অবস্থান পরিবর্তন করা হয় রায়ত সম্পত্তির উপর দিয়েই। প্রতিবছর বর্ষায় নদীর জলস্রোত বেড়ে যাওয়া, বন্যা লেগেই থাকে, ফলে ক্ষয়কার্যের অব্যাহতি মেলে না। এভাবে অবলীলাক্রমে ক্ষয়কার্য চলতে থাকলে, বছর দশেকের মধ্যে গ্রামের অবস্থানটাই বদলে যাবে, মানুষের অবস্থা চরম সংকটের মুখে পড়বে। ঘরবাড়ি নদীর গ্রাসে হারাতে বসবে। চাষ ছাড়া বিকল্প উপার্জনের পথ না থাকায় চরম দুর্দশায় পড়বে সকলে।
জেলা পরিষদ থেকে একবার অতি ভগ্নস্থানে ১০০-১৫০ মিটার বল্ডি পাইলিং করা হয়েছিল, তা নিশ্চিহ্ন আজ। গ্রামের কেঠিয়াখালের নদীপাড় যদি কংক্রিট ব্যবস্থা সত্ত্বর না করা হয়, তাহলে কয়েকবছরের মধ্যে গ্রামের অবস্থান ও অবস্থা চরমে দাঁড়াবে। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, সঠিক পদক্ষেপের জন্য সরকার দৃষ্টি আকর্ষণ না করলে তাঁরা আরও গভীর সঙ্কটে পড়বেন। •ছবির ক্যাপশন:(১) সেই প্রাচীন বটবৃক্ষ যা আপনার খবরে প্রচারিত হয়েছিল, আজ আর নেই। (২) আগের বছরের ভাঙন চিত্র এবং (৩)নতুন ভাঙনের চিত্র।
ঘাটাল মহকুমার সমস্ত খবর পেতে আমাদের MyGhatal মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করুন [লিঙ্ক 👆] এবং ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন[লিঙ্ক 👆]।