সৌমেন মিশ্র: একটা নয়, দুটো নয়, শোবার ঘর থেকে ২০টি গোখুরো সাপ! আর সেই সাপের আতঙ্কেই সিঁটিয়ে রয়েছেন দাসপুর-১ ব্লকের সামাট গ্রামের বলব্যাল পরিবার। গতকাল তথা ১০ জুলাইয়ের সন্ধ্যে থেকে অরূপ বটব্যালের বাড়ি থেকে এই সাপগুলির একে একে বার হয়। তবে কোনও সাপকেই মারেননি ওই পরিবারের সদস্যরা। সব সাপকেই সাবধানে ধরে একটি জায়গায় রাখা হয়েছিল। আজ ১১ জুলাই দুপুরে সেগুলি বনদপ্তরের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ঘাটাল মহকুমা সোশ্যাল ফরেস্ট্রি রেঞ্জের রেঞ্জার বিশ্বনাথ মুদিকোরা বলেন, প্রত্যেকটিই বিষধর গোখুরো সাপ। এক একটি সাপের দৈর্ঘ্য হবে ১৬ থেকে ২০ ইঞ্চির মতো। আমরা সাপগুলি দিবাকরবাবুর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে এনে আপাতত আমাদের অফিসে রেখেছি। রেঞ্জার বলেন, আমরা ওই পরিবারকে ধন্যবাদ জানাই, কারণ পরিবারটি সাপের উপদ্রবে আতঙ্কিত হলেও কোনও সাপকেই মেরে ফেলেননি।
ওই দিন সন্ধ্যেতে বাড়ির মহিলারা যখন টিভি দেখছিলেন তখনই শোবার ঘর থেকে একটি সাপ বের হয়। ওই পরিবারের এক সদস্য দিবাকর বটব্যাল একাই সাহসের সঙ্গে দুটি লাঠির সাহায্যে সাপটি ধরে একটি জায়গায়
রাখেন। দিবাকরবাবু বলেন, সাপটি শোবার ঘর থেকে বার হওয়ার জন্য মনটাও খুব খারাপ হয়ে যায়। বাড়িতে বছর ছয়েকের একটি ভাগ্নে থাকে। সে এতো সচেতন নয় তাই কখন কি বিপত্তি ঘটে সেজন্যই খুব টেনশনে পড়ে যাই। তারপরই শোবার ঘরের মধ্যে সমস্ত সামগ্রী সরিয়ে খুঁজে দেখি দেওয়ালে একটি গর্ত এবং তার সামনেই সাপের খোলস পড়ে রয়েছে। গর্তটিকে একটু করে বড় করতেই একের পর এক সাপ বেরিয়ে আসতে শুরু করে। দিবাকরবাবুর দাদা শ্যামসুন্দর বটব্যাল এবং দিবাকরবাবুর বন্ধু সঞ্জীব চন্দ তিন জনে মিলে খুবই সতর্কতার সঙ্গে ওই গর্ত থেকে বেরানো ২০টি গোখুরো সাপকে ধরে জারে রাখার ব্যবস্থা করেন। সব সাপ ধরতে রাত প্রায় ১টা বেজে গিয়েছে। রেঞ্জার বলেন, ওই তিন যুবক যে সাহসিকতার সঙ্গে সাপগুলিকে ধরেছেন তার জন্য তাঁদের অভিনন্দন জানাই।
আজ দুপুরে দিবাকরবাবুরা সাপগুলিকে বনদপ্তরের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। শোবার ঘর থেকে সাপ বেরোনোর পরই ওই পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কে সারা রাত ঘুমাতে পারেননি। একই কারণে শনিবারও এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রসঙ্গত ঘাটাল মহকুমায় অন্যান্য বছরের থেকে সাপের সংখ্যা প্রচুর বেড়েছে। ইতি মধ্যেই তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। ৯ জুলাই ঘাটাল থানার প্রতাপপুরের বাসিন্দা অষ্ট পাঁজার মাটির বাড়ি থেকে একের পর এক এভাবেই ১৮টি বিষধর সাপ বেরিয়ে আসে। সেগুলি অবশ্য মেরে ফেলা হয়েছিল।