প্রশান্ত বসু: স্বর্ণকার বা বাঙালি কারিগরদের তাদের গ্রামে ফেরা এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও নোডাল অফিসার সংক্রান্ত বিষয়ে আমার এই লেখা। আমরা সকলেই জানি যে, ভারত সরকার প্রবাসী পরিযায়ীদের জন্যে বিশেষ ট্রেন চালানো অথবা বাস বা প্রাইভেট গাড়িতে যে যাহার গ্রামের বাড়িতে ফেরার কথা ঘোষণা করা মাত্রই আমাদের স্বর্ণকার ভাইদের দেশের গ্রামে ফেরার ইচ্ছা প্রবল আকার নিয়েছে। আমরা যদি সরকারের ঘোষণা খুব ভালো ভাবে শুনে বা জেনে থাকি তাহলে দেখবেন যে,সরকার প্রথমে শুধুমাত্র পরিযায়ী দিন মজুর (মানে যাহারা ঠিকাদার বা কন্ট্রাক্টরের অধীনে কাজ করেন সেই সমস্ত শ্রমিক), ছাত্র-ছাত্রী, অন্য রাজ্যে চিকিৎসা করতে যাওয়া,তীর্থ যাত্রী দের ফেরার কথা বলেছেন। তাহলে আপনারাই ভেবে দেখুন আমাদের স্বর্ণকার ভায়েরা কি দিন মজুর? তাহলে আমরা কেন তাঁদের বোঝাতে পারছিনা যে তাদের এই মুহূর্তে বাড়ি ফেরার কোনও যুক্তি তো নেইই উল্টে এতে তাদের বিপদের সম্ভাবনা অনেক গুন বেড়ে যাবে।
প্রথমতো প্রবাসী স্বর্ণকারদের সারা ভারতবর্ষ জুড়ে পশ্চিমবঙ্গে ফেরার সংখ্যা টা বিশাল অঙ্কের যা প্রশাসনের প্রবাস করানোর সংখ্যার সাথে সামঞ্জস্য হচ্ছে না। তাছাড়া আরও একটা বিষয় যেটা আমরা অনেকেই হয়তো জানি যে পশ্চিমবঙ্গ একটা ছোট ও খুবই স্পর্শকাতর রাজ্য,এবং এই বিপুল সংখ্যায় বাঙালিরা সমগ্র ভারত থেকে বিভিন্ন পথে যখন ঘরে ফিরবে তখন সেই অবস্থায় তাদেরকে এই ব্যাপক হারে কোয়ারেন্টাইনে রাখাটাও একটা বড় সমস্যা।
যদিও এটা রাজ্যের চিন্তা করার বিষয় তবুও বাস্তব ছবিটা আপনাদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আরও একটা কথা, যেটা আমাদের এই গ্রুপের বিশিষ্ট ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিরা বলেছেন যেমন কালিদাসবাবু,আমজাদবাবুদের কথা অনুযায়ী আপনারা যে যেখানে আছেন সেখানেই কয়েক সপ্তাহ ধৈর্য ধরে থাকুন। এটাই স্মরণে রাখুন যে প্রতিটা শহরে হাজার হাজার ছেলেদের ইচ্ছা করলেই এবং ট্রেন চালু হলেই সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি ফিরতে পারবেন তা কিন্তু নয়, এই ব্যাপক হারে যাত্রীদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ পরীক্ষার বিষয় টাও বেশি করে ভাবার বিষয়।
আপনারা পশ্চিমবঙ্গে ফিরে গেলেও কিন্তু আন্তর্জাতিক ও আমাদের সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কমপক্ষে ১৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সরকারি তত্ত্বাবধানে কোনও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অথবা নিজেদের বাড়িতেই কোয়ারেন্টাইন অবস্থায় থাকতে হবে। তাছাড়াও আমাদের মাধ্যমেই এই মারণ সংক্রামক ভাইরাস প্রতিবাহিত হয়ে আমাদের জন্মভূমিকে আক্রান্ত করবে।
আপনাদের নিশ্চই জানা আছে যে,এই ভয়ঙ্কর দিনগুলো কেটে গেলে পুনরায় আগের মতোই স্বাভাবিক কর্মজীবন ফিরে আসবে তখন কিন্তু ঠিক এই রখম পরিস্থিতির মধ্যে আবার পরতে হবে, কারণ ঠিক বাড়ি ফেরার জন্যে যেভাবে আমরা ব্যাতিব্যাস্ত হচ্ছি সেরাখমই আবার কর্মস্হলে ফেরার সময়ও একই অসুবিধা হতে পারে বা হবে।
সংবাদ মাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে (সোশ্যাল মিডিয়া) আমরা জেনেছি যে,প্রতিটা রাজ্যেই এক বা একাধিক নোডাল অফিসার নিযুক্ত করা হয়েছে এই কারণে যে,অন্যান্য রাজ্য থেকে কি ভাবে নিজের রাজ্যের মানুষ দের ফিরিয়ে আনা যায় তার জন্যে। নোডাল অফিসারের কাজ হল, নিজের রাজ্য ছাড়াও অন্যান্য প্রতিটা রাজ্যের নোডাল অফিসার পুলিশ কমিশনার, জেলা শাসক (কালেক্টর /ডি এম),মুখ্য সচিব ছাড়াও অন্য উচ্চ পদাধিকারী গণের সাথে এই সংক্রান্ত তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যমে অন্য রাজ্য থেকে নিজের রাজ্যের মানুষ দের ফেরার পথ সরল করা। যার ফল স্বরূপ আপনারা প্রায় প্রতিটা রাজ্য শহরে পুলিশ স্টেশনে অথবা ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর অফিসে নাম জমা করেছেন। সেই নামের তালিকা পুলিশ স্টেশন অথবা পুলিশ কমিশনারের অথবা জেলা সদর দপ্তরের সহায়তায় এক্সেল সিটের মাধ্যমে রাজ্য সদর দপ্তরে পাঠানো হবে।
রাজ্য সদর দপ্তর অন্য সকল রাজ্যের সাথে উক্ত তালিকার ভিত্তিতে মুখ্য সচিব এবং মুখ্যমন্ত্রীর সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবেন রাজ্যের মানুষদের ঘরে ফেরার ব্যাপারে।
তাই আপনাদের কাছে বিশেষ অনুরোধ আপনারা অযথা ব্যাতিব্যাস্ত না হয়ে ধৈর্য ধরে থাকুন,কোনও রখম প্ররোচনা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন, কোনও রখম রাজনৌতিক বিতর্কে জড়াবেন না,জানবেন প্রধানমন্ত্রী যেমন আমাদের প্রতিটা ভারতীয়দের ঠিক সেই রখম পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীও আমাদের প্রতিটা বাঙালিদের মুখ্যমন্ত্রী তা আমরা যে রাজনৈতিক দলেরই সমর্থক হই না কেন। আমাদের কর্মভূমির সাথে সাথে আমাদের জন্মভূমিকে সুস্থ ও সুন্দর রাখার দায়িত্ব কিন্তু আমাদের সকলেরই।
আমাদের এই গ্রুপে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটা জেলা সহ ভারতের প্রায় প্রতিটা রাজ্যের সব প্রধান শহরের প্রতিনিধি অথবা সেখানকার অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা ব্যক্তিরা আছেন তাদের কাছে আমার অনুরোধ তারা যেন সকল প্রবাসী স্বর্ণকারদের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে তাদের কে সুস্থ ও সংযত থাকতে সাহায্য করেন। আমার এই লেখায় কোনো রখম অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি থাকলে নিজগুনে মার্জনা করবেন।
•প্রতিবেদক বাঙালি স্বর্ণকার সংগঠন সমূহের প্রতিনিধি। [মোবাইল:+919374126545]