উন্নয়নের স্তোকবাক্য শুনতে চায় না বীরসিংহ, বিদ্যাসাগরের গ্রামে গড়ে উঠুক পর্যটন কেন্দ্র

•মনসারাম কর: দশকের পর দশক উন্নয়নের স্তোকবাক্য শুনেছে বীরসিংহবাসী কিন্তু সেই অন্ধকারেই রয়ে গিয়েছে বিদ্যাসাগরের জন্মভূমি। সকলেই চান, বীরসিংহ হয়ে উঠুক একটি আদর্শ

 

গ্রাম এবং সেই সঙ্গে মনীষীর জন্মস্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠুক পর্যটন কেন্দ্র। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বীরসিংহকে আদর্শ গ্রাম গড়ে তোলার অনেকবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তার সুফল আজও মেলেনি তাই ক্ষোভে ফুঁসছে গ্রামবাসীরা।
মুখ্যমন্ত্রী ইংরেজি তারিখ অনুযায়ী আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর ঘাটালের বীরসিংহ গ্রামে সরকারি তহবিল থেকে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দুশোতম জন্মদিবস ঘটা করে পালন করতে এলেও তার ঠিক তিন দিন পর অর্থাৎ ১২ আশ্বিন বাংলা তারিখ অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে পুনরায় বিদ্যাসাগরের জন্ম বার্ষিকী পালন করবেন বীরসিংহ স্মৃতি রক্ষা কমিটি ও গ্রামবাসীরা। শুধু তারিখ বিতর্কই নয়, বিদ্যাসাগরের জন্মস্থানের উন্নয়ন নিয়ে উঠেছে বিস্তর অভিযোগ। এই নিয়ে এখানকার এক অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী শম্ভুনাথ দোলই বলেন, আদর্শগ্রাম তো দূরের কথা এখানকার মানুষের প্রাথমিক চাহিদা রাস্তাটুকুও তৈরি হয়নি, বর্ষাকালে বাড়ি থেকে বেরোলেই এক হাঁটু কাদা, কিছু মোরাম রাস্তায় তো হোঁচট খেতে খেতে যেতে হয়, তবে কদিন আগে থেকেই দেখছি অনেক কাজই শুরু করা হয়েছে, হয়তো মুখ্যমন্ত্রী আসবেন বলেই এই কাজ হচ্ছে।
বীরসিংহ গ্রাম কমিটির প্রধান অসীম মণ্ডল বলেন, পুরনো দিনের রীতি মেনে আমরা ১২ আশ্বিন বিদ্যাসাগরের জন্ম বার্ষিকী পালন করব। বিদ্যাসাগরের জন্মস্থান অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে, পর্যটকরা এখানে এলে এখানকার পরিকাঠামো দেখে নিরাশ হয়, যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব খারাপ। বাসস্ট্যান্ড আছে বাস নেই, বিদ্যাসাগর মহিলাদের জন্য অনেক কিছুই করেছেন এখানে মহিলা কলেজ হওয়ার জন্য অনেকবার ঝড়ো হাওয়া বইলেও আজ পর্যন্ত তা হয়নি, গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে আমরা চাই বীরসিংহকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হোক।
ওই গ্রামেরই বাসিন্দা সুব্রত ঘোষ বলেন, গ্রামের সর্বত্র পথবাতি লাগানো, একটি পার্ক তৈরি, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার নিয়োগ সহ আমাদের অনেক দাবি আছে, বীরসিংহবাসী হিসেবে আমরা বিধায়ক শঙ্কর দোলই এবং মহকুমা শাসককে তা জানিয়েছি ওনারা এই নিয়ে এখন অনেক সহযোগিতা করছেন। কিন্তু আমাদের দাবিগুলি কতটা বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে আমরা সন্দিহান।
বীরসিংহ বাস টার্মিনাল সংলগ্ন এক গৃহবধূ বলেন, বিয়ের পর থেকেই দেখছি বাসস্ট্যান্ড আছে, আগে তবুও দু-একটি বাস এখানে আসত এখন তাও আসে না, সমগ্র বাসস্ট্যান্ড জঙ্গলে ভরে গিয়েছে আর গরু-ছাগল বাঁধার জায়গা হয়েছে, বড় বড় অফিসাররা সরকারি গাড়ি নিয়ে আসছে চিক-চিক ফটো তুলছে আর চলে যাচ্ছে কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না।  স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, প্রশাসন ইচ্ছে করলে একদিনেই বীরসিংহের যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্তত উন্নতি করে দিতে পারে। পরিবহণ দপ্তরকে দিয়ে ঘাটাল-ক্ষীরপাই রুটের কিছু বাসের রুট পরিবর্তন করে বরদা চৌকান-খড়ার-সিংহডাঙা দিয়ে ঘুরিয়ে দিলেই বীরসিংহের যোগাযোগ ব্যবস্থার এক লহমায় উন্নতি হয়ে যাবে। সেটাও হয়নি।
বীরসিংহের মানুষের আরও একটি ক্ষোভ রয়েছে, ২০১৭ সালের বন্যার সময় ঘাটালের প্রতাপপুরে শিলাবতী নদীর বাঁধ মেরামতির নাম করে বিদ্যাসাগরের পুকুর পা­ড়ের মাটি কেটে তুলে নিয়ে চলে যাওয়া হয়েছে। কথা ছিল, বন্যা পরিস্থিতি মিটে গেলেই ফের পাড় সংস্কার করে দেওয়া হবে। বীরসিংহের মানুষ কোনও ভাবেই সেই সময় বিদ্যাসাগরের স্মৃতি বিজড়িত ওই পুকুরের পাড় ধ্বংস মেনে নিতে পারেননি। বর্তমানে পুকুরের পাড় এখনও সংস্কার তো দূরের কথা বরং জবর দখল হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রীর আসাকে কেন্দ্র করে ক’দিন আগে থেকেই বীরসিংহ গ্রামবাসীর অভাব-অভিযোগ চাওয়া-পাওয়া মেটাতে তৎপর হয়েছে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা। জেলাশাসক রশ্মি কমল, ঘাটালের মহকুমা শাসক অসীম পালও বারেবারে বীরসিংহ গ্রাম পরিদর্শনে যাচ্ছেন। আগামীদিনে বীরসিংহের ছবি বদলায় কিনা সেদিকেই তাকিয়ে সাধারণ মানুষ। ঘাটালের মহকুমা শাসক অসীম পাল বলেন, বীরসিংহের বাসিন্দাদের সুনির্দিষ্ট দাবি কী সেটা আমি ১সেপ্টেম্বর রাতে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। ওই গ্রামের মানুষের কিছু প্রস্তাব রয়েছে যেটি আমাদের স্তর থেকে পূরণ করা সম্ভব নয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছি। আর কিছু দীর্ঘ মেয়াদি উন্নয়নের দাবি রয়েছে, যেগুলি প্রশাসন অবশ্যই বিবেচনা করবে।

ঘাটাল মহকুমার সমস্ত আপডেট তে যুক্ত হন আমাদের সাথে!

‘স্থানীয় সংবাদ’ •ঘাটাল •পশ্চিম মেদিনীপুর-৭২১২১২ •ইমেল: ss.ghatal@gmail.com •হোয়াটসঅ্যাপ: 9933998177/9732738015/9932953367/ 9434243732 আমাদের এই নিউজ পোর্টালটি ছাড়াও ‘স্থানীয় সংবাদ’ নামে একটি সংবাদপত্র, MyGhatal মোবাইল অ্যাপ এবং https://www.youtube.com/SthaniyaSambad ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে।