বিদেশের পাঠক-পাঠিকারাও এখন প্রশান্ত সামন্তের লেখার ভক্ত

কলকাতার নামী বই প্রকাশন সংস্থা মান্না পাবলিকেশন সংবর্ধনা দিল ঘাটালের লেখক প্রশান্ত সামন্তকে। ১৮ নভেম্বর ঘাটাল টাউন হলে, কলকাতার কলেজ রো-র নামী এই প্রকাশনী সংস্থার উদ্যোগে সাহিত্য ও লেখালেখির জগতে প্রশান্তবাবুর উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য এই সংবর্ধনা দেওয়া হয় বলে জানান মান্না পাবলিকেশনের কর্ণধার অশোক মান্না। প্রসঙ্গক্রমে, অশোকবাবুর বাড়ি দাসপুর থানার কলাগেছিয়া গ্রামে। অশোকবাবু জানান, একইসঙ্গে এদিন কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এদিন প্রশান্ত সামন্তর ‘বেশ আছি’, প্রকাশ সামন্তর ‘ উজান স্রোতের খেয়া’, শ্যামসুন্দর দোলইয়ের ‘পরিচ্ছন্ন পৃথিবীর জন্য’ গ্রন্থগুলি প্রকাশিত হয়। অনুষ্ঠানে আলোচ্য বিষয় ছিল ‘আধুনিক মোবাইল যুগেও চাই পুস্তক, পাঠক ও লেখকের মেলবন্ধন।’ একই সঙ্গে এদিন ৫৪ জন লেখক সাহিত্যিককে কলম দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।


অশোকবাবু বলেন, এপর্যন্ত প্রশান্তবাবুর মোট ৪০টিরও বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে, তারমধ্যে ৩৪টি বই মান্না পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে। সেই বইগুলি যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বিভিন্ন মেলায় বিক্রি হয়েছে। উত্তরবঙ্গের মেলায় প্রশান্তবাবুর বইগুলির জন্য মান্না পাবলিকেশন একটা ব্রান্ড তৈরি করেছে। আনন্দ পাবলিকেশন যেমন ব্রান্ড, ঠিক তেমনই মান্না পাবলিকেশনের ব্রান্ড বলা যেতে পারে প্রশান্তবাবুকে। এমনটাই দাবি ওই প্রকাশনী সংস্থার। মান্না পাবলিকেশনের পক্ষ থেকে এও জানানো হয়, সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের এমন কোনও লাইব্রেরি নেই যেখানে প্রশান্তবাবুর বই পাওয়া যাবে না। রাজ্য তো বটেই, প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশেও প্রশান্তবাবুর বই সমাদরের সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে। তারই স্বীকৃতি স্বরূপ প্রশান্তবাবুকে এদিন এই প্রকাশনী সংস্থার পক্ষ থেকে লাইফ টাইম আ্যাচিভমেন্ট সংবর্ধনা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। প্রশান্তবাবুকে এদিন স্মারক, উত্তরীয় শাল ও লাঠি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। প্রশান্তবাবুর লেখা, মান্না পাবলিকেশনের প্রকাশিত ‘টাকা কড়ি’ ও ‘কেনা কাটা’ বই দুটি দারুণভাবে পাঠককূলে সমাদৃত হয়েছে। বইদুটি ‘দেশ’ পত্রিকায় গুরুত্ব সহকারে প্রশংসিত হয়। প্রশান্তবাবুর ইংরেজি থেকে বাংলায় অনূদিত বইগুলি বিশেষভাবে খ্যাতির শিখরে পৌঁছে দিয়েছে তাঁকে। শেলি, কিটস্, বায়রণ, ওয়ার্ডস্ওয়ার্থ, মিলটন, কোলরিজ প্রভৃতি ইংরেজি কবি সাহিত্যিকদের বইগুলির অনুবাদ বইগুলি পাঠককূল খুব পছন্দ করেন। শুধু তাই নয়, সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয়ের গবেষকরা প্রশান্তবাবুর কাছে যান পরামর্শ ও তথ্য নিতে।


প্রসঙ্গত, প্রশান্তবাবু ১৯৫১ সালে সোনাখালি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৫৫৩ সালে গড়বেতা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট করেন। ১৯৫৫ তে বিএ পাস করেন মেদিনীপুর কলেজ থেকে। ১৯৫৭ সালে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করেন। ১৯৫৮-৬১ পর্যন্ত বাগনান কলেজে অধ্যাপনার কাজে যুক্ত হন। ১৯৬১ থেকে ঘাটাল কলেজের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ওই সময় অধ্যাপনা করতে করতেই ১৯৬৪তে প্রাইভেটে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম.এ করেন। ১৯৭৪ সালে ময়না কলেজের প্রিন্সিপ্যাল হিসেবে যোগদান করে ১৯৯৫ সালে ওই কলেজ থেকেই অবসরগ্রহণ। এই দীর্ঘ অধ্যাপনা জীবনে তিনি প্রচুর লেখালেখি করেছেন।


এদিন সংবর্ধনা সভায় ৮৩-র প্রশান্তবাবু বলেন, আমি ভালোই আছি। আমি ৯০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে চাই। কারণ পাঠককূলকে আমার কলম আরও কিছু উপহার দিয়ে যেতে চায়। এদিন সভায় উপস্থিত ছিলেন কলকাতার এস.এম.নগর ডিরোজিও স্মৃতি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও গবেষক ড. কেশব মণ্ডল, ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলই, ঘাটালের চেয়ারম্যান বিভাস ঘোষ, ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি দিলীপ মাজি, বরুণা সৎসঙ্গ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুজিত বন্দ্যোপাধ্যায়, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যপক প্রণব হড়, জীবানন্দ ঘোষ প্রমুখ।•প্রতিবেদনের মধ্যে ছবিটি প্রশান্ত সামন্তের।

ঘাটাল মহকুমার সমস্ত আপডেট তে যুক্ত হন আমাদের সাথে!