পুজোর মুখে নদীভাঙনে গভীর সংকটে পঞ্চগ্রামী দুর্গোৎসব কমিটি

বিকাশ আদক:আর বেশিদিন নেই বাঙালির সেরা উৎসব দুর্গাপুজোর। বিশ্বজুড়ে যখন করোনার কালো ছায়া, তারই মাঝে অসুরদলনী ঘরের মেয়ে উমার আগমন ঘিরে বাঙালির মনে জাগছে খুশির রেশ ও আশার আলো। দীর্ঘ লকডাউন আর সোশ্যাল ডিস্টেন্সে বিমর্ষ বাঙালি আগের মত করে সবকিছু ফিরে পাওয়ার প্রার্থনায় রত হবেন এবার। সেইমতো শুরু হয়েছে সর্বত্রই পুজোর তোড়জোড়। বিধিরীতি মেনেই হবে মায়ের পুজোপাঠ থেকে সবকিছুই। আর সেই আগের মতই সবকিছু শুরু করতে গিয়ে গভীর সংকটে পড়েছে চন্দ্রকোণা-২ ব্লকের ভগবন্তপুর-১ এবং ভগবন্তপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের কয়েকটি গ্রাম মিলে দীর্ঘ ২৪ বছর পুজো করে আসা পঞ্চগ্রামী দুর্গোৎসব কমিটি। দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ধর্মপোতা, খুড়শী (দু’টি গ্রাম), শীর্ষা, কল্লা—এই পাঁচটি গ্রাম মিলে পঞ্চগ্রামী কমিটি তৈরি করে ‘গাজনতলা’ নামক স্থানে ১৪০৩ সালে দুর্গাপুজো শুরু করেছিল। নদীনাব্য এবং চারিদিক নদীবেষ্টিত এলাকা হওয়ায় চতুর্দিকেই যাতায়াতের হয়রান এবং ৭-৮ কিলোমিটার দূরে দূরে দুর্গোৎসব হওয়াতে, এলাকায় কিছু মহৎ মানুষের উদ্যোগে গড়ে ওঠে এই সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। ১৪০৬ সালে সকলের উদ্যোগে মন্দির নির্মাণ হয়। পাঁচটি গ্রামের সকলের মিলিত চাঁদা দিয়েই পুজোর সব খরচ চালানো হয়। সকলেই খুশি ও আনন্দিত যে গ্রামের মধ্যে তারা উৎসবমুখর দিনগুলি মিলিতভাবে কাটাতে পারে। বাড়ির সাবেকী পুজোর মতই বিভিন্ন ক্রিয়াতে তারা সকলেই অংশগ্রহণ করতে পারে। বর্তমানে পাশাপাশি ১০-১২টি গ্রামের মানুষ এই উৎসবে ভিড় জমায়, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এ বছর এখানকার দুর্গা পুজো ২৫ বছরে পদার্পণ করবে।
আর সেই ব্যবস্থার তোড়জোড় করতে করতেই কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে নদীর ধস। এবছরের বন্যায় মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শিলাবতীর কেঠিয়া নদীর পাড় ধসে পড়ে নদীগর্ভে। সেইসঙ্গে এই স্থানের ঐতিহ্য প্রাচীন বটবৃক্ষসহ পুজোর ঘাট ও মেলার মাঠ অনেকটাই নদীগর্ভে চলে যায়। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে নদীর পাড় ধসতে ধসতে হারাতে বসেছে এই ধর্মীয় মিলনস্থলটি। অনেক সমস্যার সম্মুখীন এখন পঞ্চগ্রাম দুর্গোৎসব কমিটি। মেলার মাঠের নদীর দিকের যা অবস্থা, যেকোনও মুর্হূতে বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া পুজোর ঘট ডোবানো থেকে কুমারী পুজো, কলাবউ স্নান ও ঠাকুর নিমজ্জন সবকিছু নদীঘাটে হত, তা ভয়াবহ ভাঙনে আর সম্ভব নয়। একেই মানুষ করোনা নিয়ে ভাবনায় জর্জরিত, তার উপরে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে কমিটিকে, কল্পনাও করেনি কেউ। কমিটির সম্পাদক মোহনলাল মণ্ডল বলেন, নদীগ্রাসের যা পরিস্থিতি তাতে করে ভবিষ্যতে এই স্থানের অস্তিত্ব আর থাকবে না। কমিটির সকলে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন ভয়াবহ নদী ভাঙন এবং এ বছরের এই পরিস্থিতিতে পূজা নিয়ে। বর্তমান সরকার যদি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখেন এবং ভাঙনরোধের ব্যবস্থা করেন, তাহলে এই গ্রামগুলির সম্মিলিত মানুষের উৎসবকে ভবিষ্যতে ধরে রাখতে পারবো।
ঘাটাল মহকুমার সমস্ত খবর পেতে আমাদের MyGhatal মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করুন [লিঙ্ক 👆] এবং ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন[লিঙ্ক 👆]

ঘাটাল মহকুমার সমস্ত আপডেট তে যুক্ত হন আমাদের সাথে!