দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ, ‘স্থানীয় সংবাদ’ ঘাটাল: যখন চারিদিকে ছড়িয়ে আছে কাশফুলের শুভ্রতা। শিউলির মিঠেল গন্ধে মাতাল প্রকৃতি। মায়ের আগমনী বার্তা পেয়ে প্রকৃতির সাথে খুশির আতিশয্যে মেতেছে সকল ভারতবাসী। তখনই হঠাৎ সেই খুশি থেকে ছন্দ পতন ঘটল ঘাটাল বাসীর। শরতের মাঝে বর্ষার আকস্মিক আগমনে বার বার তাল কেটেছে কর্মময় ঘাটাল বাসীর জীবনে। চার বার প্রবল বন্যায় বানভাসি হয়েছে বাংলার বহু অঞ্চল, অনেকে প্রকৃতির চোখরাঙানি কাটিয়ে উঠলেও ঘাটাল এখনো ভয়ে কম্পমান। প্রকৃতির অভিশাপ থেকে পুরোপুরি মুক্তি পায়নি তারা।
প্রবল বন্যায় ঘরবাড়ি পড়েছে অগুনতি। প্রাণহানিও ঘটেছ,জলবন্দি মানুষ দিন কাটিয়েছে কখনো অনাহারে আবার প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংস্থার সাহায্যে দুটো খাবার জুটেছে কারুর কারুর। মাসের-পর-মাস জলবন্দি বিঘার পর বিঘা জমি, ফলে চাষের যে কি হাল তা অনুমান করেই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বেশিরভাগ চাষির। সারা বছর চলবে কীভাবে ?, দিন আনা দিন খাওয়া সরল চাষাভূষো দের মনে একটাই প্রশ্ন।
দুর্গা পুজো শুরুর পথে এখনো ঘাটালের বহু পুজো মণ্ডপ জলের তলায়। সেই সব মণ্ডপে আদেও পুজো হবে তো? মুখ ভার ক্লাব কর্তৃপক্ষের। মিডিয়ার সুবাদে দেখেছি- হাজার প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করেও ভেলা, নৌকার সাহায্যে বহু ক্লাব তাদের মন্ডপ তৈরীর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সত্যিই এসব দৃশ্য দেখে ঘাটাল বাসী হিসাবে আমারও গর্ব হয়। তবে ,একেতো করোনার প্রকোপে হাইকোর্টের নির্দেশে পুজো হবে নমো নমো করে। কেমন যেন পানসে পানসে। তার ওপর প্রকৃতির এই দৌরাত্ম্য। একেবারে তছনছ করে দিয়েছে ঘাটাল কে। বহু জায়গায় বাঁশের সাঁকো, বাঁধ, রাস্তাঘাট নষ্ট হয়েছে কবে এসব সারানো হবে কে জানে, ছোটরা বাড়িতে বসে ভাবছে এবছর পূজোতে নতুন জামা কি পাবে না? সাহস করে বলতেও পারছে না বাবা কে। বাবা-মাও তাদের ম্লান মুখ দেখে হয়তো আরালে কাদছে এইসব দৃশ্য সত্যিই মর্মান্তিক।
সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে হয়তো ঘাটালের বিভিন্ন অঞ্চলে তৈরি হবে মায়ের মন্ডপ। শোনা যাবে ঢাকের বাদ্দি। মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তির বোধন ঘটবে যথাসময়ে। বাবা তার সর্বস্ব দিয়ে বাড়ির ছোট ছেলে বা মেয়েটির জন্য নতুন পোশাক এনে তাকে ফিরিয়ে দেবে মুখের হাসি। ঠিকই কিন্তু, তাতেও অন্যান্য বছরের মতো ঘাটাল বাসী পূজাতে আনন্দ করতে পারবে? মন প্রাণ দিয়ে খুশির স্রোতে ভাসিয়ে দিতে পারবে নিজেদের? নাকি, মা আনন্দময়ীর আগমনেও দূর হবে না ঘাটাল বাসীর জীবন থেকে বিষাদের ছায়া।
ঘাত-প্রতিঘাত, সুখ দুখ, বিরহ বেদনা সব ভুলে গিয়ে আমরা মেতে উঠি বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসবে।•দেবেন্দ্রনাথ ঘোষের বাড়ি সুপা পুড়শুড়ী, দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর