‘প্রেমিকার প্রত্যাখানে আত্মহত্যা করলেন ঘাটালের পলিটেকনিকের ছাত্র’
সুযোগ থাকলে মেয়েরা ‘অযোগ্য’কে ত্যাগ করে ‘যোগ্যতম’ সঙ্গীর দিকেই ঝুঁকবে, এটা কালের নিয়ম, দোষের কিছু নয়
অনিন্দ্য গোস্বামী: প্রেমিকা মত পরিবর্তন করে অন্য যুবকের সঙ্গে মেতেছে, এই অনুমান করেই ৮ নভেম্বর ২০২২ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ঘাটালের গভর্মেন্ট পলিটেকনিক কলেজের দ্বিতীয় সেমেস্টারের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিঙের ছাত্র সায়ন গিরি(২১), পুলিশ এমনটাই অনুমান করছে। সায়নের বাড়ি ঝাড়গ্রামে। সায়নের বাবা-মায়ের আক্ষেপ, একটি মেয়ের জন্য পরিবারের সকল সম্পর্কের কোনও গুরুত্বই রইল না। পরিবারের সবার স্বপ্ন নিমেষের মধ্যে ধুলোয় মিশে গেল। সায়নের পরিবারের কিম্বা সমাজের অধিকাংশ মানুষের এই ধরনের ভাবনা সামাজিক ভাবে সমর্থনযোগ্য হলেও তবু এখানে কিছু বলার রয়েছে। এনিয়ে একটু বিস্তারিত ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন রয়েছে।
প্রথমত, আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি হয় স্ত্রী জাতির জন্য, যেখানে একটি ডিম্বাণু নিষিক্ত করার জন্য কোটি কোটি শুক্রাণু প্রয়োজন। অর্থাৎ শুক্রাণু অপেক্ষা ডিম্বাণু কোটি গুণ মূল্যবান সম্পদ। আজকে আমরা পৃথিবীতে টিকে আছি কারণ আমাদের পূর্বপুরুষরা ক্রমাগত পরিবেশ প্রকৃতির সাথে লড়াই করে জিতে গিয়েছিলেন বলে। এই লড়াইয়ের জন্য সেদিন প্রয়োজন ছিল সবচেয়ে সুস্থ ও শক্তিশালী প্রাণের।
এবার ভাবুন একটি মেয়ে সেই সংঘর্ষময় পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য ও নতুন জীবন সৃষ্টি করার জন্য কী করবে? সবচেয়ে শক্তিশালী পুরুষের শুক্রাণু গ্রহণ করার জন্য সে তার জন্য অপেক্ষা করবে। এই হল নারী পুরুষের প্রেমের আসল রহস্য। মূল লক্ষ্য বংশবিস্তার করে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা।
দ্বিতীয়ত, এবার একটু ইতিহাস পড়লেই দেখতে পাই রাজকন্যাদের স্বয়ংবর সভার আয়োজন বা ইউরোপের প্রেমিকদের ডুয়েল ফাইট। সব জায়গাতেই বিষয়টা এক।
তৃতীয়ত, এখানে আরও একটা বিষয় আছে মেয়েরা শারীরিক ভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী নয় তাই ছল বা মিথ্যা কথা বলে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করে, এটাও স্বাভাবিক একটা ব্যাপার।
নিজের প্রতি নারীদের আকর্ষিত করতে ছেলেরা কেউ দামি বাইক কিনে তো কেউ চুল লাল করে, তো কেউ মারপিট করে দেখাতে চায় তারও আগে তরোয়াল চালিয়ে বা ঘোড়া ছুটিয়ে। যৌবনে নিজের জন্য নারী সঙ্গী পাওয়ার জন্য এই খুন খারাবি বা আত্মহত্যার আচরণ চলেই আসছে।
ভরা যৌবনে হরমোনের প্রভাবে আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা খুব সহজ কাজ নয় বরং সেটা ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করা যেতে পারে। বাবা মা দাদু ঠাকুমা যদি তাদের বোঝাতে পারে প্রেম বিরহ বিচ্ছেদ সবই স্বাভাবিক তবে এইরকম কষ্টকর ঘটনা কম ঘটবে।
আবারও বলে রাখি, মেয়েরা নিজেদের জন্য যোগ্যতম ছেলে খুঁজে বেড়ায়, যে তার আগামী দিনের নিজের জন্য ও নিজের সন্তানের জন্য আর্থিক সামাজিকভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে এমনই কাউকে তার প্রয়োজন। মেয়েদের এই মানসিকতা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ও প্রয়োজনীয়, হ্যাঁ প্রয়োজনীয়। নয়তো পৃথিবী থেকে আমি আপনি কবেই বিলুপ্ত হয়ে যেতাম।
তবে এর ব্যতিক্রম হয় না যে এমন নয়। সম্প্রতি ঘাটাল পলিটেকনিক কলেজের দ্বিতীয় সেমেস্টারের ছাত্র সায়ন প্রেমে আঘাত পেয়ে আত্মহত্যা করেছেন তার জন্য কিছু করার নেই। কিন্তু যারা প্রেমের খেলা করছে তাদের জন্য খেলার নিয়ম জানা দরকার আছে। যে পরিবার তাকে সর্বস্ব দিয়ে বড় করেছে তার প্রতি দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা সবার আগে। আবেগ তো থাকবেই কিন্তু বাস্তবে দাঁড়িয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সমস্ত টিন এজারদের বাবা মায়ের প্রতি অনুরোধ, সন্তানের সঙ্গে বন্ধুর মতো খোলামেলা আলোচনা করুন, ছেলেমেয়েরা অনেক আত্মবিশ্বাস নিয়ে বাঁচতে পারবে।
[✔‘স্থানীয় সংবাদ’-এর সমস্ত কিছু জানতে এখানে ক্লিক করুন]