আকাশ দোলই:গৃহবধূর গলায় জুতোর মালা পরিয়ে ঘোরানোর অভিযোগে প্রথম স্বামী সহ তিন জন গ্রেপ্তার হলেন। এর মধ্যে একজন মহিলাও রয়েছেন। প্রথম স্বামীর অত্যাচারের জন্যই প্রতিবেশী যুবকের সঙ্গে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন প্রতাপপুরের সেই গৃহবধূ। আজ ২৭ জুন ঘাটাল থানায় বসে এমনই মন্তব্য করলেন তিনি।
আজ ঘাটাল থানার প্রতাপপুরের এক গৃহবধূকে গলায় জুতোর মালা দিয়ে এভাবেই সারা গ্রাম ঘোরানো হয়। শুধু তাই নয় গৃহবধূর পেছনে গ্রামের লোকেরা বড় বড় লাঠি নিয়ে শ্লোগান দিতে দিতে গ্রামের একাংশ পরিক্রমা করায়। অভিযোগ, পরিক্রমা করানোর সময় রাস্তাতেই মাঝে মাঝে লাঠির বাড়িও পড়ে ওই গৃহবধূর উপর। ঘাটাল মহকুমা পুলিস আধিকারিক অগ্নিশ্বর চৌধুরী বলেন, ওই ঘটনার জেরে গৃহবধূর আগের স্বামী সহ মোট তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘাটাল থানার ওসি দেবাংশু ভৌমিক বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের কোনও ভাবেই রেয়াত করা হবে না। আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘাটাল মহকুমা শহর থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে ‘মধ্য যুগীয়’ এই বিচার ব্যবস্থা দেখে সারা মহকুমা জুড়ে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ দীপক অধিকারী তথা দেব পুলিসকে ফোন করে জানিয়েছেন দোষীরা যাতে কোনও ভাবেই ছাড় না পায়। ঘাটাল আদালতের আইনজীবী অনিমেষ কর্মকার এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন।
তৃণমূলের ঘাটাল ব্লক সভাপতি দিলীপ মাজিও এই ঘটনায় রীতি মতো ক্ষুব্ধ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই গৃহবধূর ১৭বছর আগে বিয়ে হয়। দুটি সন্তানও রয়েছে। গৃহবধূর প্রথম শ্বশুরবাড়ির লোকেদের অভিযোগ, বছর দুই আগে ওই মহিলা প্রতাপপুর গ্রামের তথা শ্বশুরবাড়ির পাশাপাশি এক যুবকের সঙ্গে পালিয়ে যান। দক্ষিণভারতের একটি রাজ্যে সেই যুবকের সঙ্গেই এতো দিন ছিলেন। বাড়ির সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখেননি। সন্তানদেরও খোঁজ-খবর নেননি। যদিও গৃহবধূ জানান, আগের স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ার জন্যই তিনি পাড়ার দেওরের সঙ্গে চলে যান।
দু’ সপ্তাহ আগে ওই গৃহবধূ প্রতাপপুরে ফিরে আসেন। পাড়ার সেই যুবকের বাড়িতেই ছিলেন। যুবক ও গৃহবধূর ফিরে আসার ঘটনাটি জানাজানি হতেই গ্রামের মোড়লরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তাঁরাই গৃহবধূকে এদিন এভাবে শাস্তি দেন। পুলিশ খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। পুলিশকে দেখেই গ্রামের মানুষরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। গৃহবধূ বলেন, পুলিশ যথাসময়ে না পৌঁছোলে আমি আজ বাঁচতাম না। পুলিশ গৃহবধূকে থানায় উদ্ধার করে নিয়ে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে। পরে গৃহবধূর আগের স্বামী সন্তোষ কর, এক মহিলা সহ মোট তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।