নিজস্ব সংবাদদাতা: না, ঘুমপাড়ানি গুলি করতে হয়নি এমনিই ধরা দিল খুনে ষাঁড়। বাবা-বাছা করে গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করতে করতে তাকে ধরে ফেলল উদ্ধারকারী টিম। আজ ৫ ডিসেম্বর দাসপুর-১ ব্লকের সাগরপুর বাসন্তীতলা থেকে ষাঁড়টিকে ধরা হয়। আজ সকালে ১০-১২জনের একটি টিম আসে ষাঁড়টিকে ধরার জন্য। ষাঁড়টিকে যত্ন করে ধরার পর জব্দ করে বেঁধে ফেলা হয়। তারপর গাড়িতে তোলা হয় ষাঁড়টিকে অন্যত্র ছেড়ে দেওয়া হবে। উদ্ধার কারী টিমের দ্বিতীয় দিনের চেষ্টায় আজ ষাঁড়টিকে ধরা গেল। এই ষাঁড়টিকে ধরার বিষয়ে পূর্ণ কৃতিত্ব ঘাটালের নতুন মহকুমা শাসক সৌভিক চট্টোপাধ্যায়ের। তিনিই ষাঁড়ের তাণ্ডবের কথা জানতে পেরে ডিসেম্বর মাসের ২তারিখ থেকে তৎপরতার সঙ্গে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তারই ফল স্বরূপ আজ ৫ ডিসেম্বর ষাঁড়টিকে ধরে অন্যত্র ছাড়া সম্ভব হল। মহকুমা শাসক বলেন, আজ ষাঁড়টিকে ধরে অন্যত্র ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ষাঁড়টিকে ধরা হতে দাসপুর থানা এলাকার বাসিন্দারা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন। [•ষাঁড় ধরার পুরো ভিডিও] প্রসঙ্গত, দাসপুর থানা এলাকায় দাসপুর ১ ও দাসপুর ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় বছরখানেক ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই দশাশই চেহারার কালো জার্সি ষাঁড়টি। উল্লেখ করা যায় যে ষাঁড়টি গুঁতিয়ে জখম করেছে বহু মানুষকে, গুঁতিয়ে খুন করেছে দাসপুর-২ ব্লকের হাজরাবেড় গ্রামের নূর মহম্মদ নামে এক টোটোচালককে। ভাঙচুর চালিয়েছে বেড়ার ঘরে, ভাঙচুর করেছে বহু ধানঝাড়া মেশিন। জমিভর্তি ফসল নষ্ট হয়েছে ষাঁড়ের তাণ্ডবে। ষাঁড়ের গুঁতো খেয়ে কতো মানুষকে যে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে তার সঠিক হিসেব নেই। এমন অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে রাস্তায় বেরোতেই মানুষ ভয় পাচ্ছিলেন।
ষাঁড়ের তাণ্ডব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দাসপুর-১ ও দাসপুর-২ ব্লকের প্রায় ২০টি গ্রামের বাসিন্দারা পর্যায়ক্রমে দাসপুর-১ এবং দাসপুর-২ বিডিওদের কাছে এবং দাসপুর থানায় বারে বারে শরণাপন্ন হয়েছিলেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি বলে অভিযোগ। স্থানীয় সংবাদের পক্ষ থেকে বার বার খবরও করা হয়। আমাদের পত্রিকার সম্পাদক তৃপ্তি পাল কর্মকার ব্যক্তিগতভাবে নতুন মহকুমা শাসক সৌভিক চট্টোপাধ্যায়কে ষাঁড়টিকে ধরার জন্য বিশেষ অনুরোধ জানান। ষাঁড়ের অত্যাচারের বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপ মহকুমা শাসককে পাঠান। সমস্ত বিষয়টি আন্তরিকতার সঙ্গে উপলব্ধি করার পরই মহকুমা শাসক কাল বিলম্ব না করে ষাঁড়টিকে ধরার জন্য ২ ডিসেম্বর রাত থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। মহকুমা শাসকের ব্যবস্থাপনায় ৩ ডিসেম্বরই ষাঁড় ধরার জন্য একটি টিম এসে দাসপুর-২ ব্লকের দুবরাজপুর পৌঁছায়। ওই দিন সকাল ১০ টায় কলার মধ্যে ঘুমপাড়ানি ওষুধ প্রয়োগ করে ষাঁড়টিকে ধরার চেষ্টায় ছিলেন উদ্ধারকারী টিমের সদস্যরা। বিকেলের মধ্যে দু’বার কলায় পুরে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়, তবুও ষাঁড় ঘুমোয়নি বলে ফিরে যায় উদ্ধার কারী টিম। ওই দিন এসে বিফল হয়ে উদ্ধার কারী টিম ফিরে যেতে মানুষ ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন যে ষাঁড়টা বোধহয় বরাবর রয়ে যাবে এই এলাকাতেই। আজ ষাঁড়টি ধরা পড়ার পর স্বস্তিতে দাসপুর ১ ও ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ।