•পৃথিবীর সব মা’ই ভালো মা। কিন্তু পৃথিবীর সব বাবা’ই ভালো বাবা নয়।
মা কেন ভালো? মা আদর করে, ভালো রাঁধে, পোশাক পরিষ্কার করে, পড়ার খোঁজ নেয়। সম্ভবত মা হল একমাত্র ব্যক্তি, যাঁর ভালো হবার পেছনে কারণ লাগে না, যাঁকে ভালোবাসার জন্য শর্ত প্রযোজ্য হয় না।
কিন্তু বাবার ক্ষেত্রে হয়। শর্ত প্রযোজ্য হয়। বাবা যদি ঠিক মতো আয়-রোজগার করতে না পারে, চাহিদামতো কাপড়-চোপড়, কম্পিউটার-ঘড়ি-মোবাইল, কসমেটিক্স ইত্যাদি কিনে দিতে না পারে, ভালো স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে না পারে, এদেশ-বিদেশ ঘোরাতে না পারে, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য খেয়ে না খেয়ে আগাম সঞ্চয় করে রাখতে না পারে, সর্বোপরি, সহ্য করতে পারুক বা না পারুক মায়ের সাথে মানিয়ে চলতে না পারে সে কোনও মতেই ভালো বাবা হতে পারবে না।
অতএব, বাবা সম্পর্কটার সাথে ‘শর্ত প্রযোজ্য’। শুধু শর্তই নয়, কড়াকড়ি শর্ত প্রযোজ্য। তাই পৃথিবীতে একটাও মন্দ মা না থাকলেও লাখ লাখ কোটি কোটি মন্দ বাবা গিজগিজ করছে।
বাবার সংজ্ঞা: বাবা হলেন একটা পরিবারের খুব কম পারিশ্রমিকের বা প্রায় বিনা পারিশ্রমিকের মজুর খাটা কাজের লোক। দায়িত্বের গুরুভার মাথায় নিয়ে এক নিঃসঙ্গ সারথী, যার কাজ সন্তানদের সবাইকে তাদের নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে একাকী পরপারে যাবার জন্য অলসভাবে অপেক্ষা করা।
আমরা একটা মানুষের প্রতি প্রতিনিয়ত ‘এটা দাও, ওটা আন, সেটা নাই কেন?’ এই সব দাবি-দাওয়া ছুঁড়ে দিতে থাকি, সেই মানুষটা এত এত দাও, আন, নাই-এর মোকাবেলা একা হাতে কী করে করবেন– একবারও ভেবে দেখি না। আবার যুগের অসুখ এই বাড়তি চাহিদার পাগলা ঘোড়াকে বশে আনতে গিয়ে তিনি যেভাবেই হোক আর যে পথেই হোক উপার্জনে ঝাঁপিয়ে পড়বেন– তা হবে না। আপনি যতক্ষণ উপার্জন করছেন, দু’হাতে উপার্জন করছেন, ততক্ষণ আপনি আদর্শ বাবা। কিন্তু যে মুহূর্তে প্রকাশ পেয়ে গেল, আপনার আয় আপনার উপার্জনক্ষমতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে– অর্থাৎ আপনি অসৎ পথে উপার্জন করছেন, এই সন্তান কিন্তু আপনার পাশে দাঁড়াবে না। উল্টে সস্তা সিনেমার ডায়লগ দিয়ে দেবে মুখের উপর, ‘আই হেইট ইউ বাবা, তুমি আমাদের মাথা হেঁট করে দিয়েছো!’
বাবার সবেতেই সমস্যা: বাবা হিসেবে সন্তানকে শাসনে রাখতে গেলে তখন আপনার উপাধি হবে ডিক্টেটর, জেলাস, স্যাডিস্ট, জালিম। প্রশ্রয় দিতে গেলে শাসন না জানা মূর্খ, যে সন্তানকে উচ্ছন্নে ঠেলে দিচ্ছে। আপনি তাদের অবাধ স্বাধীনতা না দিলে ব্যাকডেটেড, দিয়ে ফেললে ব্যর্থ অভিভাবক। আপনি তাদের সব কাজে সমর্থন করলে, ‘বাবা তো কিছুই বুঝে না, খালি হ্যাঁ-এর সাথে হ্যাঁ মিলিয়ে যায়!‘ সমর্থন না করলে, ‘বাবা তো কিছুই বুঝে না, খামোখা সবটাতে বাগড়া দেয়!’
বাবার সংক্ষিপ্ত রূপ:বাবা হল সেই ব্যক্তি, যাকে সবচেয়ে সহজে ভুল বোঝা যায়, যাকে খুব সহজেই ধরে নেওয়া হয়, সবচেয়ে ভুলভাবে উপস্থাপন করা যায়, অন্যের কাছে তো বটেই, এমনকি নিজের কাছেও।
বাবা হল পৃথিবীর সবচেয়ে নিঃসঙ্গ চরিত্র, যাকে সঙ্গ দেওয়াটা আদিখ্যেতা, অথচ তাঁর সঙ্গ না পাওয়াটা নাকি তাঁরই কর্মফল!
বাবার জন্য প্রতিদান:মায়ের প্রতি সন্তানের আচরণ হল ভালোবাসা। কিন্তু বাবার প্রতি সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কর্তব্য, শ্রদ্ধা, ভয়, প্রতিদান, পুরস্কার এবং কখনও কখনও শুধুই দায়শোধ!
অন্যভাবে ‘বাবা দিবস’:আর ঠিক এজন্যই মনে হয়, বছরে একটা দিন ‘বাবা দিবস’ থাকা খুব জরুরি, যেদিন সংসারের এই কলুর বলদটাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হবে, আরে, তুমি তো আমাদেরই একজন, এত মন ছোট করে থাকো কেন?[লেখাটি হোয়াটসঅ্যাপ থেকে সংগৃহীত তাই লেখকের নাম জানা সম্ভব হয়নি]