২৬সেপ্টেম্বর বিদ্যাসাগরের জন্ম দিন উপলক্ষে ওই প্রাতঃস্মরণীয় মনীষীকে নিয়ে দু’টি কবিতা লিখেছেন ঘাটালের মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাস
(১)সাগরদীপ বিদ্যাসাগর
•মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছো ইস্কুলে ইস্কুলে।
ছবি হয়ে আছো তুমি দেওয়ালে দেওয়ালে।
অক্ষরের মাঝে আছো তুমি বর্নপরিচয়ে,
সোজা শিরদাঁড়ায় আছো, আছ বরাভয়ে।
সেতুতে আছো, হেতুতে আছো, হাজার নামের ভীড়ে।
দাঁড়িয়ে আছো আজও তুমি জ্ঞানের সাগর তীরে।
দয়ার সাগর, দানের সাগর, জ্ঞানের সাগর তুমি।
দুশো বছর পেরিয়ে এসেও তাইতো তোমায় নমি।
বীরসিংহের সিংহ শিশুর জগৎ জোড়া নাম,
তোমার জন্যে ধন্য হল বীরসিংহ গ্রাম।
মায়ের টানে সাঁতরে নদী এলে তুমি বাড়ি,
তোমার সেবায় হার মেনেছে কলেরা মহামারী।
সাধারণের বেশভূষাতে চাদরে খদ্দরে,
মোট বয়েও শিক্ষা দিলে মানব সাগর তীরে।
দেশে তখন বড্ড অভাব, ভাত জোটে না মোটে,
তখন অন্নসত্রে অভুক্তদের মুখে হাসি ফোটে।
বাঙালী জাতির জনক তুমি, নতুন যুগের দূত,
তোমার জাদুতে পালিয়ে গেল কুসংস্কারের ভূত।
বিধবাবিবাহ চালু হল, খুললো মেয়েদের স্কুল,
নারীমূক্তির পথ চলাতে ভাঙলে সবার ভুল।
শিক্ষার দীপ জ্বলছে যখন সারা বাংলা জুড়ে,
পরমহংস মিললো এসে সেই সাগরের তীরে।
গ্রামে গ্রামে পাঠশালাতে মেয়েরা এলো পড়তে,
শিক্ষিত মায়েরাই পারে সোনার ভারত গড়তে।
“সংস্কৃত যন্ত্রে” তোমার ছাপলো হাজার বই,
আজও তোমার সৃষ্টিতে তাই বিভোর হয়ে রই।
তোমার সেবায় ধন্য হল কার্মাটাড়ের ভূমি,
বঞ্চিত সেই মানুষগুলোর ঈশ্বর তো তুমিই।
বাংলা জুড়ে গড়েছো তুমি কত যে ইস্কুল,
সে পাঠশালায় বর্ষে বর্ষে ফুটেছে কত ফুল।
কঠিন ছিল তোমার লড়াই আঁধার দিনের কালোয়।
আলোকিত করেছো তুমি তোমার মনের আলোয়।
শিক্ষার প্রদীপ জ্বালিয়েছিলে গ্রামে গ্রামান্তরে।
তাই, অমর হয়ে থাকবে তুমি বাঙালির অন্তরে।
তবুও তোমার মূর্তি ভাঙে দুর্বৃত্তের দল,
এসব দেখে বাঙালিজাতির চোখে আসে জল।
তুমি এদের ক্ষমা করো, এদের নেই শিক্ষার আলো।
আবার তুমি ফিরে এসে শিক্ষার দীপ জ্বালো।
[✔‘স্থানীয় সংবাদ’–এর সমস্ত কিছু জানতে এখানে ক্লিক করুন]
(২)বলি ও বিদ্যাসাগর
বলি ও বিদ্যাসাগর? কী করে পারলে গো?
বয়স তখন নয় বছর বটেক,
বাপের সাথে চললে কোলকেতে,
রাস্তায় শিল পোঁতা দেখে শিখে নিলে ইংরিজি নাম্বার।
সেই ছোটবেলাতেই ত্যাজ ঠাওর করেছিলেন বাবা ঠাকুরদাস।
বীরসিংহের সিংহ শিশুই বটেক,
পড়াশোনা শিখে বিদ্যাসাগর অনেকেই হয়েছে,
কিন্তু তোমার পারা কাউরে চোখে পড়ে না।
এই ধর, তুমি যদি বর্ণপরিচয় না লিখতে,
তাহলে আমরা তো অক্ষরই চিনতে লারতাম।
বাংলা গদ্য তো তুমার হাতেই পিরাণ পেলো।
বলি ও বিদ্যাসাগর? কীকরে পারলে গো?
মেয়েদের ইস্কুলে পেঠিয়ে ঠুলি খোলা কি সহজ কতা?
আর বিধবাদের আবার বিয়ে দেওয়া!
সে কী করে পারলে গো?
এতো ত্যাজ তুমি কুতা থেকে পাইলে গো?
মা ভগবতী তোমায় পেটে ধরেছিলো তাই!
না হলে দেশের এই কালো আঁধার ঘুচোতো কে শুনি?
তা হ্যাঁ গো বিদ্যাসাগর, শুনেছো?
তুমার মূর্তি নাকি উয়ারা গুড়িয় দিলো!
একবার হাতটাও কাঁপলো না গো!
যে মানুষটা একখান খড়ম আর কাপড় পড়ে জীবন কাটিয়ে দিলো,
এত এত বিদ্যালয় খুললো, তার কিনা এই প্রতিদান!
হ্যাঁ গো, বিদ্যাসাগর আবার একটি বার এসো ক্যানে!
এখনও তো পাড়া গাঁয়ে বাল্যবিবাহ হচ্চে গো।
বিটি মাইয়ারা এখনও নাকি বোঝা।
তাই বাপে মায়ে বিটিদের তো বিয়ে দিতে পারলে বেঁচে যায়।
তুমি একবার এসো দিকি, আবার একটা লড়াই তোমায় লড়তে হবেক।
তুমার পারা একজন মানুষ খুব দরকার বটেক।
সমাজটোকে সবক শিখাতে তুমি ছাড়া আর কে পারবেক শুনি?
বলি ও বিদ্যাসাগর ? তাহলে তুমি আসছো তো ?