সন্তু মুখোপাধ্যায়: পরিবর্তন চাই মুখে। ঠিকই বুঝেছেন, কবি সম্মেলনে মুখের পরিবর্তনের কথা বলছি। একটা মিথ ভাঙতে হবে আমাদের সকলকে। বামফ্রন্টের সময়কাল থেকে তৃণমূল সরকারের বর্তমান সময় পর্যন্ত যেকোনো কবি সম্মেলনে যারা কবিতা পাঠের সুযোগ পান তাদের নির্ণায়ক হিসাবে রাজনৈতিক রঙ ও পরিচিত মুখকেই প্রাধান্য দেওয়া হয় বারে বারে। আর তাই শিশু মেলা, বিদ্যাসাগর মেলা, সুভাষ মেলা ও জেলা বইমেলাতে শুধু তারাই সুযোগ পান। যারা কোনো না কোনো ভাবে সেই সময়ের রাজনৈতিক ক্ষমতাশীল দলের সমর্থক কিম্বা কাছের মানুষ বা প্রিয়জন তারাই কি তাহলে সাহিত্যের একমাত্র ধারক কিম্বা বাহক! লজ্জা হয় খুব, যখন এই বাছাইপর্বে মেরুকরণ চলে।
যারা সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করেন,লেখালেখি করেন,আন্দোলন করেন তাদের মাপকাঠি হোক লেখনী আর অন্য কিছু নয়। প্রতিভাকে গুরুত্ব না দিলে পরবর্তী সময়েও এই রেওয়াজ চলতে থাকবে। বলতে পারেন, এইরকম চলতে থাকলে সাধারণ মানুষ সাহিত্যিকদের থেকে কি নতুন কিছু আশা করতে পারবেন? সাহিত্যিকরা পথ দেখান, সত্যকে সামনে রেখে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান কিন্তু সাহিত্যিকরা যখন নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বারবার মিথ্যেকে সত্য বলে চালিয়ে দেন তখন লেখালিখি না করাই ভালো! আমাদের মহকুমাতে যেসকল অগ্রজ কবি-সাহিত্যিক আছেন এই বিভাজন তাঁরা আরও ভালভাবে দেখেছেন,মুখোমুখি হয়েছেন বা এইরকম ঘৃণ্য কাজে অনুপ্রেরণাও দিচ্ছেন৷ নিজেদের প্রশ্ন করে একবার দেখবেন, যাঁরা সুপরিচয়ের অভাবে বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করার কারণে নিজেদের লেখা পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন না তাঁরা কি আপনাদের শ্রদ্ধার চোখে দেখবেন? অবাক লাগে যখন দেখি, একজন ভিন্ন মতাদর্শের কবি অন্য এক মতাদর্শের কবিকে দেখে মুখ বেঁকিয়ে চলে যান! যখন একজন কবির মঞ্চে প্রতিবাদের সময় কন্ঠরোধ করা হয়! যখন সোজাকে সোজা বলার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়!
আমাকেও বারবার এই ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। কাঁধে একটা শান্তিনিকেতনি ব্যাগ নিয়ে পাঞ্জাবি পরে মঞ্চে ওঠার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব দেখি না যখন অন্য কোনো উপযুক্ত কবি/সাহিত্যিককে সুযোগ না করে দেওয়া হয় যারা প্রকৃতই মঞ্চে ওঠার দাবিদার। অনেক তো হল স্বজনপোষণ, অনেক তো হল রাজনীতির বেড়াজালে সাহিত্য অঙ্গনকে কলুষিত করা! আসুন না, আমরা সকলে এই মিথ ভেঙে দিয়ে ধারাবাহিক ভাবে সকলকে মঞ্চে ওঠার সুযোগ করে দিই। এতে দেখবেন আনন্দে ঘুমোতে পারবেন, স্বচ্ছন্দে নিশ্বাস নিতে পারবেন অন্যথায় আপনাদের দ্বিচারিতা, আপনাদের মুখ থেকে মুখোশ খুলে দেবে। আর এই কাজটা তরুণরাই করবে। বিশ্বাস করুন, দায়িত্ব নিয়ে বলছি এটা আমাদের করতেই হবে।