‘জয়তু পতাকা’ —সুমন বিশ্বাস
ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা উড়ছে আসুমদ্র হিমাচল,
পচাত্তর বছর ধরে পত পত করে উড়ছে সে।
আরও শত সহস্র বছর ধরে উড়বে গর্বের এই পতাকা।
কত রক্ত দেখেছে এই পতাকা,
কত মায়ের কোল খালি হতে দেখেছে সে।
গান্ধীবুড়ির মত শত শত শহীদ গুলি বুকে নিয়ে তুলে ধরেছিল এই পতাকাকে।
দেশে বিদেশে এই পতাকা তুলে ভারতমাতার অস্তিত্ব জাহির করেছিল সন্তানরা।
শতশত বিপ্লবীর স্বপ্নের রঙ লেগে আছে এই পতাকায়,
সহস্র মিছিলে পথ দেখিয়েছে এই পতাকা।
ডান্ডি-চম্পারণ-খেদা-নােয়াখালি আরও কত জায়গায়।
পতাকা – এতাে শুধু একটুকরাে কাপড় নয়,
এ দেশ মায়ের আঁচল, ভারতমাতার নিশান।
কোটি কোটি সন্তানের ঘাম রক্ত মিশে আছে এই পতাকায়।
তােমরা কি দেখতে পাচ্ছ না?
রক্তদিয়ে-প্রাণ দিয়ে যারা রক্ষা করেছিল পতাকার সম্ভ্রম,
এসাে আজ তাদের স্মরণ করি,
শহীদ স্মরণে প্রতিটি শিরা শিহরিত হােক আবাল বৃদ্ধ বনিতার।
ভারতবর্ষের ঘরে ঘরে আজ বেজে উঠুক মঙ্গল শঙ্খ,
গ্রাম-শহর- পাড়া-মহল্লা আজ মুখরিত হােক দেশ মায়ের গৌরব গাঁথায়।
চেচুয়ার সেই বীর শহীদদের স্মরণ করি আজ।
লবন আইন ভাঙলাে যারা স্তব্ধ হল বৃটিশ রাজ।
নির্বিচারে চলল গুলি, গুলিতে শেষ চোদ্দ প্রাণ,
দেশ জুড়ে উঠলাে আওয়াজ “কে আছ জওয়ান হও আগুয়ান।’
শহীদ প্রদ্যুৎ, ক্ষুদিরাম, বাঘা যতীন আর সুৰ্য সেন।
বিপ্লবের মন্ত্রে এঁরা আগুন জ্বেলেছেন।
হেমচন্দ্র কানুনগাে বােমা বাঁধতে শেখালেন।
আন্দোলনের নতুন দিশা তিনিই দেখালেন।
মাতঙ্গিনীর রক্তে ভেজা আলিনানের মাটি
দেশবাসীর কাছে আজও সােনার চেয়ে খাঁটি।
দেশপ্রেমে প্রাণ দিলেন শহীদ ক্ষুদিরাম,
জীবন দিয়ে বুঝিয়েছিলেন স্বাধীনতার দাম।
৪২-এর তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার,
দেশবাসীকে বুঝিয়েছিল স্বাধীনতা দরকার।
সতীশ সামন্ত ছিলেন জাতীয় সরকারের মাথা,
সেই স্মৃতিতে উজ্জ্বল আজও ইতিহাসের পাতা।
সেদিনের সেই ‘ভগিনী সেনা’ আর ‘বিদ্যুত বাহিনী’,
ইতিহাসের পাতায় লেখা সেসব কাহিনী।
সুশীল ধাড়া, অজয় মুখার্জী আর বিপ্লবী ছিলেন যত,
তাদের চরণে আজ প্রণাম জানাই শত শত।
ওকালতি ছেড়ে বিপ্লবী হলেন বীরেন্দ্রনাথ শ্বাসমল,
স্বাধীনতা আন্দোলনে তিনি যুগিয়েছিলেন বল।
এঁরা জীবন দিয়ে বুঝিয়েছিলেন স্বাধীনতার দাম,
স্বর্নাক্ষরে লেখা আছে মেদিনীপুরের নাম।
লবন সত্যাগ্রহ হয় মেদিনীপুরের বুকে,
বৃটিশ আইন বিপ্লবীরা দেখিয়েছিলেন রুখে।
বিপ্লবীদের রক্তে রাঙ্গা মেদিনিপুরের মাটি,
স্বাধীন দেশে আজও তাই সােনার চেয়ে খাঁটি।
মেদিনীপুরের সেই মাটিতে দাঁড়িয়ে আজ প্রণাম জানাই জাতীয় পতাকাকে।
যে পতাকা বহিবার শকতি যুগিয়েছিলেন মেদিনীভূমির এই বিপ্লবীরা।
ভারতবর্ষ দেখেছিল এই ভূমির মেরুদণ্ডের জোর, এই মাটির তেজ।
বিপ্লবের আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল সাতারা থেকে বালিয়া, মুম্বাই থেকে দিল্লী।
কেঁপে উঠেছিল দিল্লীর মসনদ, গর্জে উঠেছিল ভারতবর্ষ—
“ইংরেজ ভারত ছাড়াে”।
বণিকের সেই মানদণ্ড, যা রাজদণ্ড রূপে প্রতীয়মান হয়েছিল,
সেই রাজদণ্ড বেয়ে তরতর করে উঠেছিল ভারতের জাতীয় পতাকা।
স্বাধীন হল ভারতবর্ষ।
মেদিনীভূমির এই রুক্ষ মার্টির তেজ টের পেয়েছিল লাল মুখাে বাঁদররা।
লেজ গুটিয়ে পালিয়ে বেঁচেছিল তারা।
এই রুক্ষ মার্টির তেজ আজও লেগে আছে পতাকার গায়ে।
চেয়ে দেখ এই উডডীয়মান পতাকার দিকে,
সেই তেজ প্রতীয়মান হবে।
এসাে আজ তেজদিপ্ত কণ্ঠে সবাই বলি—
‘বলাে বলাে বলাে সবে, শত বীনাবেনু রবে,
ভারত আবার জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে’