মনসারাম কর, স্থানীয় সংবাদ, ঘাটাল:তিন বছরে ঘাটাল মহকুমা জুড়ে প্রায় ১৫০ নাবালিকা বিয়ের অভিযোগ। কিন্তু চেষ্টা করেও থেমে থাকছে না নাবালিকা বিয়ে। লকডাউনে ঘাটাল মহকুমা জুড়ে নাবালিকা বিয়ের প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। নাবালিকা বিয়ের অভিযোগ প্রশাসনের দুয়ারে গেলে সেই বিয়ে সরকারিভাবে আটকানোর চেষ্টা করে পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্তারা। তবে স্পষ্টতই বলা যায় প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে নাবালিকা বিয়ে বন্ধ হয়েছে, এমন নজির ঘাটাল মহকুমা জুড়ে খুব কম। সম্প্রতি ঘাটালের এক নাবালিকার বিয়ে আটকাতে বিয়ের রাতেই সেখানে পৌঁছেছিল সরকারি প্রতিনিধিরা, মেয়ের বাবা-মা তৎক্ষণাৎ মুচলেকা দিয়ে বিয়ে না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে সেই বিয়ে থেমে থাকেনি। দু-একদিনের মাথায় ওই নাবালিকার বিয়ে হয়ে গিয়েছে বলে জানা গেছে। ঘাটাল মহকুমাজুড়ে এইরকম নাবালিকা বিয়ের উদাহরণ রয়েছে ভুরিভুরি। কিন্তু প্রশ্নটা হল, একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও কেন এত নাবালিকা বিয়ে? সরকারের রূপশ্রী কন্যাশ্রী প্রকল্প কি তাহলে অনেকাংশে ব্যর্থ নাকি এক শ্রেণীর মা-বাবা তাঁদের কন্যা সন্তানদের মাথার বোঝা বলে মনে করেন? এই রকম অনেক প্রশ্ন উঠেছ এই নাবালিকা বিয়েকে কেন্দ্র করে। তবে অনেকে মনে করছেন, হাতে মোবাইল পেয়ে এবং বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে মিশে তাদের ক্রমশ পড়াশোনার প্রতি অনীহা দেখা দিচ্ছে। সেজন্যই তারা নিজেরাই অল্পবয়সেই বিয়ের দিকে ঝুঁকছে?
এছাড়াও আরও একটি বড় কারণ রয়েছে। পরিসংখ্যান নিয়ে দেখা গিয়েছে, অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল পরিবারগুলির ক্ষেত্রেই নাবালিকা বিয়ে বেশি ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক দরিদ্র পরিবারের একাধিক কন্যাসন্তান, সেক্ষেত্রে পিতা-মাতা ভালো পাত্র পেলেই মেয়ের ভবিষ্যৎ জীবনের কথা না ভেবে অল্প বয়সেই বিয়ে দিয়ে চাপমুক্ত হতে চান।
প্রশাসনের আটকে দেওয়া বিয়ে চুপিসাড়ে কোনও আত্মীয় বাড়িতে বিয়ে দেওয়ার পেছনেও কারণ রয়েছে। একদিকে বিয়ে আটকে গেলে সামাজিক ও মানসিক ভাবে অপ্রস্তুতে পড়তে হয় পাত্রী সহ তার পরিবারকে। অন্যদিকে যে পদ্ধতিতে বিয়ের পিঁড়িতে বসার ঠিক পূর্ব মূহুর্তে আটকানো হচ্ছে তাতে আয়োজনের অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। তাই যেভাবে হোক ওই সময় বিয়ে সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করে ওই পরিবার। তবে কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রেম ভালোবাসার কারণে আবেগতাড়িত হয়ে নাবালিকাদের পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতাও রয়েছে। এক্ষেত্রে স্মার্টফোনের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।
ঘাটাল চাইল্ডলাইনের হেড প্রদীপ শাসমল জানিয়েছেন, ঘাটাল মহকুমা জুড়ে গত তিন বছরে প্রায় ১৫০ টি নাবালিকা বিয়ের অভিযোগ জমা পড়েছে, প্রত্যেকটির ক্ষেত্রেই বিয়ে আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছে, তবে চেষ্টা করেও আটকানো গেছে তা নয়, এক্ষেত্রে শুধু প্রশাসন নয় সবার আগে মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হবে তার পিতা মাতাকেই। আর তাদের বোঝানোর কাজে প্রশাসনের যেমন প্রয়াস রয়েছে তেমনই এগিয়ে আসতে হবে স্থানীয় ক্লাব বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকেও। ঘাটালের বিডিও সঞ্জীব দাস বলেন, প্রশাসনিক তৎপরতা ও বিভিন্ন ধরণের সরকারি সামাজিক সুরক্ষা দেওয়ার ফলে আগের থেকে নাবালিকা বিয়ের প্রবণতা অনেক কমেছে, প্রশাসন সজাগ রয়েছে। তবে নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করতে সমাজের সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। অনেকের মতে এটা এক সামাজিক ব্যাধি। শুধু পাত্রী পক্ষ নয় নাবালিকা মেয়ের বিয়ের ভবিষ্যৎ সমস্যা নিয়ে বুঝতে হবে পাত্র পক্ষকেও, প্রয়োজনে আইন অনুযায়ী কঠিন ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে হবে পুলিশ প্রশাসনকে।