তৃপ্তি পাল কর্মকার: ঘাটাল শহরে কয়েক কোটি টাকার দেবত্র সম্পত্তি কিনে ফ্যাসাদে পড়েছেন বেশ কয়েক জন ব্যক্তি। সেই সমস্ত জমি প্রশাসনের উদ্যোগে ফের সংশ্লিষ্ট সেবাইতদের নামে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ঘাটাল শহরের কৃষ্ণনগর মৌজা এবং নিশ্চিন্দীপুর মৌজা দুটি পাশাপাশি রয়েছে। দুটি মৌজার সংযোগস্থল তথা কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড দিয়ে পুরসভার কার্যালয় যেতে যে খালটি রয়েছে সেই খাল সংলগ্ন এলাকায় কৃষ্ণনগর মৌজায় ১৩৯ দাগে ‘শ্রীশ্রী কালিমাতা ঠাকুরাণীর’ ৬১ শতক এবং নিশ্চিন্দীপুর মৌজার ৯৪ দাগে ‘শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী ঠাকুরাণী’র এক একর ১৭ শতক জায়গা ছিল। সমস্ত সম্পত্তির চরিত্র ছিল ‘খাল’। কয়েক বছর আগে আলামগঞ্জের অসিত সাহা, নিশ্চিন্দীপুরের সমীরণ চৌধুরী, সুশোভন চৌধুরী, রামচন্দ্রপুরের বাণেশ্বর জানা দেবত্র সম্পত্তি তথা ওই খালের কিছু অংশ কিনে বাস্তু করে নিয়েছিলেন বলে ঘাটাল ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে।
ওই ক্রেতাদের বিরুদ্ধে দুটি গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। (১) কোনও ভাবেই দেবত্র সম্পত্তি কেনা যায় না। (২) শহরের অন্যতম প্রধান নিকাশি খালের শ্রেণী পরিবর্তন করা যায় না। বিশেষ সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক জন জনপ্রতিনিধিকে বিশেষ ভাবে প্রভাবিত করে এবং ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিকদের ‘ম্যানেজ’ করে দেবত্র সম্পতি কেনা এবং শ্রেণী পরিবর্তনের কাজটি করা হয়েছিল। এর পেছনে যে একটি চক্র কাজ করছিল সেটি বর্তমানে সবার কাছেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। জুন ২০২০’র দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রশাসনিক উদ্যোগ নিয়ে সেই খালকে আবার খালেই ফিরিয়ে আনা হল। প্রশাসনের এই উদ্যোগে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন ঘাটাল মহকুমা শহরের বাসিন্দারা। ঘাটালের মহকুমা শাসক অসীম পাল বলেন, কিছু দিন আগে রেকর্ডে ওই খালটি বাস্তু হয়ে গিয়েছে বলে একটি অভিযোগ এসেছিল। আমি ঘাটাল ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে বলেছিলাম। ঘাটাল ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক তাপস কুশারী বলেন, সম্প্রতি বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে পুরো জায়গাটিকে আবার শ্রেণী পরিবর্তন করে খালে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পুনরায় জায়গাটিকে দেবত্র সম্পত্তির অধীনে আনা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ঘাটাল শহরের বিস্তীর্ণ এলাকার নিকাশি জল কৃষ্ণনগর এবং নিশ্চিন্দীপুর মৌজার ওই খালের উপর দিয়ে ঘাটাল থানার সামনের খালটিতে গিয়ে পড়ে। থানা সংলগ্ন খালটির মাধ্যমে পুরো নিকাশি জল শিলাবতী নদীতে যায়। ওই খালটির মালিক শহরের সিদ্ধেশ্বরী কালী ও কালীমাতা ঠাকুরাণীর সেবাইতরা। দেবত্র সম্পত্তি বিক্রি করা যায় না। কিন্তু শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ওই খালটিকে নিয়মবিরুদ্ধভাবে মোটা টাকার বিনিময়ে কয়েকজন ব্যবসায়ীকে বিক্রি করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে ওই সমস্ত সেবাইতদের বিরুদ্ধে। সেই সমস্ত ব্যবসায়ীরা খাল বন্ধ করে নির্মাণ করার উদ্যোগ নিলে প্রশাসনের দ্বারস্থ হন শহরের কয়েকজন বাসিন্দা। তখন দেখা যায়, ইতি মধ্যেই খালটির শ্রেণী পরিবর্তিত হয়ে বাস্তু হয়ে গিয়েছে। প্রশাসন তা জানার পরই জরুরি পর্যায়ে প্রশাসনিক বৈঠক ডাকে। ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ দয়াময় চক্রবর্তী বলেন, তারপরই তড়িঘড়ি করে জমির মালিকানা এবং রেকর্ডের শ্রেণী পরিবর্তন করে পূর্বের অবস্থায় আনা হয়। দয়াময়বাবু বলেন, কোনও কারণে খালটি বন্ধ করে নির্মাণ শুরু হয়ে গেলে শহরে বরাবরের মতো নিকাশি ব্যবস্থার জটিলতা থেকে যেত।
প্রসঙ্গত, ঘাটাল শহর ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় এই ধরনের আরও বেশ কয়েকটি দেবত্র সম্পত্তি হস্তান্তরের ঘটনা রয়েছে। কয়েক জন প্রতিনিধির সহযোগিতায় বেশ কিছু দেবত্র সম্পত্তি কেনা বেচা হয়েছে। সেগুলিও প্রশাসন পুনরুদ্ধার করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।