মধুসূদন প্রামাণিক : হোমো সেপিয়েন্স গোষ্ঠীর প্রাণী যাদের দুটো হাত এবং দুটো পা আছে। যারা কথা বলতে পারে তারা হল মানুষ বা নর। এদের মধ্যে যারা মহান ও মানব সমাজের মঙ্গলকারী তারা মহাপুরুষ। আর যে সব নর সুস্থ মানব সমাজ গঠনের পক্ষে বিপজ্জনক তারাই হল নরাধম বা অমানুষ।
অমানুষদের দুটো শ্রেণীতে ভাগ করা যেতে পারে। একশ্রেণী হলো— যারা খাদ্যে ভেজাল দিয়ে শিশু থেকে বয়স্ক সকলের জীবন সংশয় ঘটায় এবং আরেক শ্রেণী হল— যারা হিংস্র, শালীনতাহীন ও অসামাজিক কাজের মাধ্যমে মানুষের সর্বনাশ ঘটায়, মানুষকে হত্যা করে বা আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে ইত্যাদি।
বর্তমান যুগে অতি মুনাফার লোভে মেতে উঠেছে এক শ্রেণীর মানুষ। এদের তৈরি করা ভেজাল বা নকল খাদ্য ও পানীয়ের মধ্যে রয়েছে শিশুখাদ্য, মিষ্টান্ন, দুধ, ভোজ্যতেল, ঘি, রান্নার মশলা, মাংস, বিরিয়ানি, হেলথ ড্রিংকস, মদ ইত্যাদি।
দ্বিতীয় শ্রেণীর অমানুষদের কাজ হলো, বোমা-বন্দুক-ছোরা মেরে খুন, ধর্ষণ ও খুন, সালিশির মাধ্যমে অত্যাচার, হত্যা বা গণহত্যা, বেআইনি কাজের প্রতিবাদীদের মারধর করা বা তাদের বাড়ি ভাঙচুর করা, সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যা রটনা, চরিত্র হনন ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া, জঙ্গি হামলা ইত্যাদি।
বর্তমানে শিশুখাদ্য এমনকি দুধেও মেশানো হচ্ছে ডিটারজেন্ট পাউডার, মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক। হোটেল ও দোকানে বাসি খাবার, ভাগাড়ের পচা মাংস, পচে যাওয়া মিষ্টান্ন, বিরিয়ানি ইত্যাদি আমরা নির্বিবাদে খাচ্ছি। নকল ঘি, ভোজ্যতেল, রান্নার মশলা, মদ প্রভৃতিতে নামিদামি কোম্পানির মোড়ক বা লেবেল ব্যবহার করে মানুষকে ঠকানো হচ্ছে।
উল্লিখিত দ্বিতীয় শ্রেণীর অমানুষেরা সচেতনভাবেই নৃশংস কাজগুলো করে চলেছে। এক শ্রেণীর গুরু বা নেতারা এদের লোভ দেখিয়ে বা অর্থের বিনিময়ে এইসব কাজ করাচ্ছে। কেউ আত্মস্বার্থ চরিতার্থ করছে আবার কেউ বিকৃত মানসিকতার শিকার। নারী নির্যাতনকারী চরিত্রহীন অ মানুষেরা কখনো কখনো নির্ভয়ে সমাজে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এসবের জন্য দায়ী কারা? প্রতিরোধ হবে কিভাবে?
পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতবর্ষের প্রত্যেকটি রাজ্যে এইসব ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর নায়কেরা কোনও কোনও এলাকায় বেশ জম্পেশ হয়ে বসে এসব কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের শিকড় বা শাখা প্রশাখা বহুদূর বিস্তৃত। আবার কারোও মাথায় রয়েছে শক্তপোক্ত ছাতা। পৃথিবীতে বহু সংখ্যক মানুষের অর্থ উপার্জন করতে রোদে চাঁদি ফেটে যাচ্ছে; আবার কেউ চাঁদির বিনিময়ে নিরাপদেই কুকর্ম চালিয়ে আয় করছে।
‘জীব সেবাই শিব সেবা’, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’— এইসব বাণী আমাদের কি উদ্বুদ্ধ করে না? কবির ভাষায়— ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে/ তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে।’ অমানুষদের বোধদয় কবে হবে? সেজন্য শবরীর প্রতীক্ষা (আমৃত্যু) ছাড়া আমাদের অন্য কোন পথ আছে কী?