নিজস্ব সংবাদদাতা: ৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার আবিষ্কার। হঠাৎই জানা গেল, ঘাটাল ব্রিজ থেকে অনুকূল ঠাকুরের আশ্রম অভিমুখে যেতে শিলাবতী নদী বাঁধের নিচে বিশাল বড় একটি সুড়ঙ্গ করা হয়েছে। আশীর্বাদ নামে একটি রেস্তরাঁর মালিক ওই সুড়ঙ্গ খুলে তার মধ্যে গোপন বিশালাকার একটি কক্ষ বানাচ্ছেন। এর আগে ওই রেস্তরাঁটি অন্য নামে অন্য একটি মালিকের ছিল। সম্প্রতি কার্তিক মাইতি নামে ওই ব্যক্তি সেই পুরানো রেস্তরাঁটি কিনে ‘আশীর্বাদ’ নাম দিয়ে চালাচ্ছিলেন। রেস্তরাঁর বিল্ডিংটি যেহেতু বাঁধ ঘেঁষে মানে নদীগর্ভের বিপরীত দিকে। ওই রেস্তরাঁর মালিক বিল্ডিঙের পাশ দিয়ে নদীবাঁধের নিচে সুড়ঙ্গ করে বড়সড় রুম বানিয়েছিলেন। সেচ দপ্তর জানিয়েছে, যে রুমটি বানানোর জন্য রেস্তরাঁর মালিক আড়াআড়ি ভাবে প্রায় পুরো বাঁধের নিচের সমস্ত মাটি বার করে দিয়ে নির্মাণ চালাচ্ছিলেন। ঘাটাল পুরসভার চেয়ারম্যান বিভাসচন্দ্র ঘোষ বলেন, ওই নির্মাণ অবৈধ। আমরা জানিই না। ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির নজরে থাকার কথা। তারা কেন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি সেটা ভেবেই অবাক হয়ে যাচ্ছি।
নির্মাণটি অনেক দিন আগে থেকেই চলছিল। ৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার দিকে এলাকার কিছু যুবক কৌতূহল বশে ওই নবনির্মিত গেটের মধ্যে ঢুকে পড়েন। তারপরেই বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে প্রশাসনিক মহলে শোরগোল শুরু হতে শুরু হয়। ওই রাতেই রেস্তরাঁয় স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। রেস্তরাঁয় ভাঙচুর হয়। পুলিশ আসে। রেস্তরাঁটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। রেস্তরাঁর কয়েকজন কর্মীকে পুলিশ তুলে নিয়ে চলে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
ওই নির্মাণটির ফলে কী হতে পারত? বাঁধের ওপর রাস্তাটি যে কোনও মুহুর্তে ভেঙে যেতে পারত। এর ফলে হয়তো সাময়িক সমস্যা হত। কিন্তু আর সবচাইতে বড় বিপদ হতে পারত তা হল, ভরা নদীর সময় ওই দুর্বল জায়গাটি যেকোনও সময় ভেঙে গিয়ে ঘাটাল ও দাসপুর থানার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে যেত। বন্যার সময় ওখানে ভাঙলে শহরের পর্যায় ক্রমে ১৬, ১৭, ১৩, ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষ কয়েক মিনিটের মধ্যে জলবন্দি হয়ে পড়তেন। আর ওই দুটি থানা এলাকার কয়েক লক্ষ মানুষ বিপদে পড়তেন। বেশ কয়েক কোটি টাকার সম্পদ তো ক্ষতি হতই। ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতি দিলীপ মাজি বলেন, আমরা সেচ দপ্তরকে জানিয়ে দিয়েছিলাম, অবিলম্বে ওই রেস্তরাঁর মালিকের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে হবে। সেচ দপ্তর যদি তা না করে তাহলে আমরা সেচ দপ্তরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব। বলব, এর পেছনে সেচ দপ্তরের পূর্ণ মদত রয়েছে।
যে কোনও কারণেই হোক ১৩ ফেব্রুয়ারি সেচ দপ্তর বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে আশীর্বাদের অবৈধ নির্মাণটি রেস্তরাঁর মালিককে দিয়ে ভেঙে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। মহকুমার বাকী ওই ধরনের ‘আশীর্বাদ’গুলি কিন্তু একই অবস্থায় রয়ে গিয়েছে। সেগুলিকেও বিশেষ অভিযান চালিয়ে না ভাঙলে ঘাটাল ও দাসপুর থানার বন্যার সমস্যা রয়েই যাবে। সেচ দপ্তর অভিযান চালালেই দেখতে পাবে, এই রেস্তরাঁর মতো বহু নির্মাণ রয়েছে।