মন্দিরা মাজি, স্থানীয় সংবাদ, ঘাটাল: আগামী ৬ জুলাই ২০২১ ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করার কথা ড. মন্টুকুমার দাসের। বর্তমানে তিনি গোয়ালতোড় সাঁওতাল বিদ্রোহ সার্ধশতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। কিন্তু ঘাটাল কলেজের গভর্নিংবডির প্রেসিডেন্টের পদে কেউ না থাকার ফলে তাঁর যোগদান করা আইনত সম্ভব হবে না বলে অনেকেই মনে করছেন। কারণ, কোনও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষকা বা শিক্ষাকর্মী কলেজের অধ্যক্ষ বা টিআইসির উপস্থিতিতে যোগদান করতে পারেন।
কিন্তু অধ্যক্ষকে যোগদান করাতে হলে কলেজের প্রেসিডেন্ট বা সভাপতিকেই করাতে হয়। যেহেতু ওই কলেজের গভর্নিংবডির প্রেসিডেন্ট পদে বর্তমানে কেউ নেই তাই ড. দাস ৬ জুলাই যোগদান করতে পারবেন না বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও পিংলার বিধায়ক তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, সমস্যা হবে না। দু’এক দিনের মধ্যে ওই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বেশ কয়েক জন বিধায়ক আমাদের জেলার কয়েকটি কলেজের প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচন বিধি অনুযায়ী তাঁদের পদত্যাগ করতে হয়েছে। সেই কারণে কলেজগুলিতে প্রেসিডেন্ট পদে কেউ নেই। আমরা দু’এক দিনের মধ্যে কোন কলেজে কে প্রেসিডেন্ট হবেন তার একটি তালিকা তৈরি করে রাজ্যে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে দেব।
ঘাটাল কলেজের এর আগে প্রেসিডেন্ট ছিলেন ঘাটালের প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্কর দোলই। তিনি ঘাটাল বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তাঁকে ওই পদ ছাড়তে হয়। সেই কারণেই ঘাটাল কলেজের ওই পদটি এখনও শূন্য রয়েছে। ঘাটাল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীদের একাংশ কোনও ভাবেই শঙ্করবাবুকে আর ওই কলেজের প্রেসিডেন্ট হিসেবে চাইছেন না। ওই কলেজের এক অধ্যাপক বলেন, শঙ্করবাবু কলেজেও পরিবারতন্ত্র চালিয়েছেন। তাঁর ছেলে নিয়ম বিরুদ্ধভাবে বছরের পর বছর ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকের পদে রয়েছেন। বর্তমানে এমএ করছেন ওই কলেজের বেশ কয়েক জন ছাত্রী বলেন, করোনার আগে কলেজ যখন নিয়মিত খুলত তখন ছাত্র সংসদ থেকে আমাদের মেয়েদের প্রতি খুব অভদ্র আচরণ করা হত। কোনও সহযোগিতা চেয়ে ছাত্র সংসদে গেলে বেতন কার্ড আটকে দিয়ে রাতে হোয়াট্সঅ্যাপ ভিডিও কল করতে বাধ্য করা হত। তা না করলে নানা রকম হুমকিও দেওয়া হত।
ওই কলেজের এক অধ্যাপিকা বলেন, ছাত্রছাত্রীদের মুখ থেকে শুনেছি ছাত্র সংসদের মধ্যে মদের আড্ডা ও ফিস্টও নিয়মিত চলত। প্রতিবাদ করা যায়নি। আর বর্তমান টিআইসি লক্ষ্মীকান্ত রায় শঙ্করবাবুর ‘একান্ত অনুগত’ হওয়ার জন্য তিনি কোনও প্রতিবাদ করার সাহস পাননি বলে কলেজের শিক্ষা কর্মীরা জানান। ওই কজেলের গভর্নিংবডির সদস্য তথা দাসপুর-২ ব্লকে বরুণা সৎসঙ্গ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুজিত বন্দ্যোপাধ্যায় ওই সমস্ত অভিযোগগের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, তখন দু একটা অভিযোগ এলেও এতো কিছু জানতে পারিনি। তবে এখন অনেক প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী ছাত্র সংসদ থেকে ঘটা নানা অসভ্যতার ঘটনার অভিযোগ করছে। শুনে লজ্জাও লাগছে।
ঘাটাল ব্লক তৃণমূল কমিটির একাংশও শঙ্করবাবুকে ওই কলেজের প্রেসিডেন্ট হিসেবে চাইছেন না। তৃণমূলের ব্লক কোর কমিটির এক সদস্য বলেন, আমরাও সব জানতাম কিন্তু তখন প্রতিবাদ করতে পারতাম না। উনি হেরে গিয়ে আমাদের প্রতিবাদ করার সুযোগ হয়েছে। তাই কলেজের স্বার্থেই আমরা আর্ শঙ্করবাবুকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে চাইছি না। উনি কলেজে এলেই কলেজটা একেবারে শেষ হয়ে যাবে। ওখানে পড়াশোনা না হয়ে গুণ্ডাবাহিনী তৈরি হবে।
প্রসঙ্গত, ঘাটাল কলেজে শেষ স্থায়ী অধ্যক্ষ ছিলেন ড. ভোলানাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি ২০১৩ সালে অবসর গ্রহণ করলে টিআইসি হিসেবে দায়িত্ব নেন ঘাটাল কলেজেরই ইংরেজির অধ্যাপক লক্ষ্মীকান্ত রায়। বছর চারেক আগে বাগনান কলেজের এক অধ্যাপক ড. চন্দন দে লিয়েন নিয়ে ঘাটাল কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলান। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই তিনি ওই দায়িত্ব ছেড়ে আবার তাঁর পুরানো কলেজে ফিরেগেলে সেই থেকে লক্ষ্মীবাবু ফের টিআইসি’র দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
ঘাটাল শহরে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কলেজের ‘সুবিধাভোগীরা’ মন্টুবাবুকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেবেন তো? •ছবিটি মন্টুকুমার দাসের