এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে যাবেন ঘাটালের পূর্ণেন্দু

অরুণাভ বেরা: রাত তিনটের সময় কপালের হেড টর্চের আলোতে ধবধবে সাদা পিচ্ছিল বরফের চাদরে ঢাকা দুর্গম রাস্তা। তাপমাত্রা মাইনাস দশ ডিগ্রি। হাড় হিম করা ঠাণ্ডা। একদল পর্বতারোহী চলেছেন। পাহাড়কে ভালবেসে, হিমালয়কে ভালবেসে। ওই অভিযাত্রীর দলে আছেন ঘাটালের পূর্ণেন্দু হড়। পেশায় ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব)। বাড়ি কুশপাতা ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে।
বরাবরের শখ ছিল ফুলগাছ লাগানোর। রাজ্যস্তরে তিনি চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন বহুবার। তার হাতে লাগানো গাছের বাহারি ফুল মন জুড়িয়ে দেয়। এখনও তিনি পুষ্পপ্রেমী এবং যথারীতি ফুল গাছ তাঁর জীবনের অন্যতম দিক বলা যেতে পারে। কিন্তু ছোট থেকে পাহাড়ের প্রতি টান ঘুমিয়েছিল তার মনে। সেই ভালোবাসা, প্রেম হয়ে ছাপিয়ে গিয়েছে এখন। দেরিতে হলেও শুরু করেন ট্রেকিং। ২০০২ সালে সহকর্মীদের সাথে পুরুলিয়াতে তিন দিনের ক্যাম্পে থেকে পাহাড়ে ওঠার হাতে খড়ি। তার সাথে শুরু শরীরের ফিটনেস আনার জন্য যোগাসন ও ব্যায়াম ।
ওই বছরেই তিনি অভিযাত্রী দলের সাথে ১৫ হাজার ফুট উঁচু তপোবনে ট্রেকিং করেন। হরিদ্বার থেকে গঙ্গোত্রী, তারপর হাঁটা পথ। তাঁবুতে রাত কাটিয়ে গোমুখ হয়ে তপোবন। তিনদিনে ৩০ কিলোমিটার হাঁটেন তাঁরা। তপোবন থেকে শিব লিং হয়ে ফিরে আসে অভিযাত্রী দল।
এরপর ২০০৩ সালে ১৬ হাজার ফুট উঁচু কুমায়ুন হিমালয়ের রূপকুণ্ডতে যান। ৫০ কিলোমিটার হাঁটা পথ। ২০০৪-এ ১৫হাজার ৯০০ ফুট ওপরে অমরনাথে যান। তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৫ ডিগ্রি। ২০০৫ সালে যান ‘ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স’। ১৪ হাজার ফুট ওপরে ফুলের দেশের রাজকুমার পূর্ণেন্দু চোখ ভরে দেখেন সৌন্দর্য। এরপর যান লাদাখ হয়ে ১৫ হাজার ফুট ওপরে টাংগাং লেক। ২০১৮ সালে নেপাল থেকে ‘অন্নপূর্ণা’ শিখরকে বেষ্টন করে ট্রেকিং করেন। উচ্চতা ১৭ হাজার ফুট। ৭ দিনে ১১৮ কিলোমিটার হাঁটতে হয়েছিল। রাতে তাঁবুতে থাকা এবং বিশ্রাম।
বরফের রাজ্যে কী খেতেন তিনি? পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, বরফকে প্রেসার কুকারে গলিয়ে জল করা হতো। ওই জল ব্যবহার করতাম। খাওয়া হতো কিসমিস, মধু, লেবুর শরবত, কফি, খিচুড়ি। গতবছর অন্নপূর্ণা শিখরকে বেষ্টনের সময় তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ১০ ডিগ্রি। ভয়ানক দুর্গম পথ। অভিযাত্রী দলের সাত জনের মধ্যে পাঁচজন পৌঁছাতে পারেন। এদের মধ্যে পূর্ণেন্দুবাবু ছিলেন। রাতে তাঁবুতে স্লিপিং ব্যাগের মধ্যে শুতেন। বরফ পড়ার শব্দে নিস্তব্ধতা ভাঙে। অভিযানের সময় ‘আইবক্স’ নামে কিছু হরিণ চোখে পড়ে। রূপকুণ্ড অভিযানের সময়ে এত দুর্গম পথ ছিল যে, এক কিলোমিটার হাঁটতে সময় লাগে পাঁচ ঘণ্টা। ২০০ মিটার দূর থেকে ফিরে আসতে হয়েছিল। বরফে ঢাকা রাস্তা ছিল পিচ্ছিল ।
অভিযান শেষে তারা সবক্ষেত্রেই দেশের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে দেন।
পূর্ণেন্দুবাবু নিয়মিত হাঁটেন, ফ্রি-হ্যান্ড ব্যায়াম, যোগাসন করেন। খাওয়া-দাওয়া পরিমিত। তিনি বলেন, মধ্য পঞ্চাশে আমি এখনও ট্রেকিং করছি। কারণ পাহাড়ের প্রতি ভালোবাসা বিশেষত হিমালয়কে।
এর পরের লক্ষ্য কী? তিনি জানান, ২০২০ সালে ১৮হাজার ফুট উঁচু ‘এভারেস্ট বেস ক্যাম্প’ যাবেন তাঁরা। প্রস্তুতি চলছে।
পাহাড়ের টান আর হাতছানিতে মজেছেন তিনি। যতদিন পারবেন সাড়া দেবেন পূর্ণেন্দু। আরও উঁচুতে যেতে চান তিনি।

ঘাটাল মহকুমার সমস্ত আপডেট তে যুক্ত হন আমাদের সাথে!