রবীন্দ্র কর্মকার: ভোটের সময় হলেই সরকারের নানান জনমোহিনী কর্মসূচি শুরু হয়ে যায়। বিরোধীরাও সেই সময় জনগণের সেবা করতে পিছু ছাড়ে না। বর্তমানে যেমন রাজ্য সরকারের ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা প্রত্যেক শিবিরে সাধারণ মানুষের সরকারি সুবিধে দেওয়া বা সমস্যা সমাধানের জন্য খাতায় নোট করছেন। সম্প্রতি সরকার আরও এক ধাপ এগিয়ে ‘দুয়ারে সরকারের’ পর এবার ‘পাড়ায় পাড়ায় সমাধান’ শুরু করেছে। আম-জনতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে গেলে এই সমস্ত কর্মসূচি নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ।
কিন্তু আপামর জনসাধারণ চায় এই ধরনের সিস্টেম শুধু দু’এক মাসের জন্য নয়, সবসময়ের জন্য থাক, সারাবছর থাক। শুধু ভোট বৈতরণী পার করার হাতিয়ার নয়, মানুষের সত্যিকারের সমস্যাগুলোর সমাধানের হাতিয়ার হোক এই ধরনের প্রকল্প। ‘দুয়ারে সরকার’ ক্যাম্পগুলোতে বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে জানা গিয়েছে, তাঁরা চান তাঁদের বাড়ির বা এলাকার কাছাকাছি সারাবছর ধরে এই ধরনের প্রশাসনিক দপ্তর বা সেল থাকলে জনসাধারণ তাঁদের নিত্য নৈমিত্তিক সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আপিল করতে পারবেন। এরকম বহু মানুষ আছেন যাঁরা তাঁদের সমস্যা সমাধানের জন্য বা বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প নেওয়ার জন্য পঞ্চায়েতে, ব্লকে বা মহকুমা অফিসে যেতে পারেন না। যদিও বা যান তাঁদের আবার দালালের খপ্পরে পড়ে খসাতে হয় মোটা অঙ্কের ঘুষ বা কাটমানি। সরকারি প্রকল্প পাইয়ে দেবার নাম করে গরিব-কম লেখাপড়া জানা মানুষগুলোকে অগত্যা ভুল বুঝিয়ে ঠকানো হয়। তাই দুয়ারে প্রশাসন এলে মানুষের সুবিধে হয় বৈকি।
কেউ কেউ বলেন,‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরগুলি থেকে স্বাস্থ্যসাথী, খাদ্যসাথী, কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী, রূপশ্রী, কৃষকবন্ধু, বিধবা বা বার্ধক্যভাতার আবেদন সহ প্রায় ১১টি প্রকল্পের পরিষেবা একছাতার তলায় পাওয়া যাচ্ছে। এতে মানুষের খুবই সুবিধে হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের দাবি— এধরনের প্রশাসনিক হেল্প ডেস্ক বা সেল প্রত্যেক গ্রামে বা গ্রামপঞ্চায়েত কার্যালয়ে সবসময়ের জন্য করা উচিত। যেখানে সারা বছর নিরবচ্ছিন্ন ভাবে এলাকার যেকোনও সমস্যার সুরাহা পাওয়া যাবে। সারা মহকুমার প্রত্যেকটি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রত্যেকটি এলাকায় এখন প্রধান সমস্যা গ্রামীণ রাস্তাগুলোতে অতিরিক্ত ভারী মালবাহী গাড়িগুলি ঢুকে রাস্তার দফা শেষ করে দিচ্ছে। বেশ কিছু অসাধু ইমারতি দ্রব্যের ব্যবসায়ী জনসাধারণের আপত্তি বা অবরোধকে তোয়াক্কা না করেই প্রচুর ভারী ভারী মাল বোঝাই গাড়ি এই গ্রামীণ রাস্তায় নির্দ্বিধায় ঢোকাচ্ছে। এছাড়াও রাস্তার ওপর ইট, বালি, স্টোন চিপস, কাঠ ইত্যাদি ফেলে ব্যবসা করায় নিত্য দুঘর্টনা ঘটছে। প্রশাসনকে জানাতে গেলে ছুটতে হবে বেশ কয়েক কিমি দূরে সেই ব্লকে, নয়তো সংশ্লিষ্ট থানায়। এরকম হাতের কাছে প্রশাসন থাকলে তাঁদের দ্বারা এই সমস্যার সমাধানের জন্য তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ নিয়ে সাধারণ মানুষের হয়রানি কমানো যেত।
এছাড়াও প্রত্যেক এলাকাতেই কিছু জ্বলন্ত সমস্যা রয়েছে যেমন, চোলাই মদ বিক্রি, রাজনৈতিক গণ্ডগোল, রাস্তাঘাটের সমস্যা, ইত্যাদি। এগুলোর সমাধানের জন্য এলাকাভিত্তিক ইউনিট সেল তৈরি করা যেতে পারে। মহকুমা জুড়ে প্রশাসনিক মনিটরিং কমিটি গঠন করে মানুষের যেকোনও সমস্যা তৎপরতার সঙ্গে তাৎক্ষণিক সমাধান দিতে পারলে যেমন সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে তেমনি জনগণেরও প্রভূত উপকার সম্ভব হবে। মানুষ প্রশাসনের কাছে নয়, প্রশাসন মানুষের দোরগড়ায় এলে আখেরে লাভবান হবে জনগণ।
দাসপুরের বিধায়ক মমতা ভুঁইঞা এবং ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলই বলেন, প্রস্তাবগুলো গ্রহণযোগ্য। জনসাধারণের এই দাবি ভেবে দেখা যেতে পারে। মমতাদেবী বলেন, আমরা ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে ভালো সাড়া পেয়েছি। তাই বিষয়টি নিয়ে আমরা রাজ্যস্তরে আলোচনা করব।