মন্দিরা মাজি, স্থানীয় সংবাদ, ঘাটাল:•বাড়ছে নাবালিকা বিয়ে, পুলিশ প্রশাসনের [✔‘স্থানীয় সংবাদ’-এর সমস্ত কিছু জানতে এখানে ক্লিক করুন]তৎপরতায় তা রুখেও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এইভাবে কতদিন? আবার তো সেই কয়েকদিন পর বাবা-মায়েরা লুকিয়ে নাবালিকা মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেবেন। ইদানিং এই নাবালিকা বিয়ের সংখ্যাটা অনেকটাই বেড়েছে। কিন্তু বাবা-মায়েরা তাঁদের নাবালিকা মেয়েদের এতো তড়িঘড়ি করে বিয়ে দিতে চাইছেন কেন? এখনও অনেক দরিদ্র ও অসচেতন পরিবারের বাবা-মায়েরা ভাবেন, মেয়ে দেখতে খারাপ, পরে পাত্র জুটবে তো? সঠিক সময়ে বিয়ে না দিলে মেয়ে দিন দিন দেখতে খারাপ হয়ে যাবে, তখন সে মেয়ের পাত্র জুটানো মুশকিল— এইসব ভেবে মেয়ের ১৮ বছর পূরণ হওয়ার আগেই বিয়ে দিয়ে দেন। আবার কিছু কিছু মায়েরা ভাবেন, তাঁদের তো অল্প বয়সেই বিয়ে হয়েছিল এবং তাঁরাও শুনে এসেছেন তাঁদের মা অল্প বয়সেই বিয়ে করে এসেছিলেন। তাই সেই ধারা বজায় রাখতে নিজের নাবালিকা মেয়েটিরও বিয়ে দিয়ে দেন। যদিও এইসব কারণে বিয়ে দেওয়ার উদাহরণ খুবই কম দেখা যায় এখন। তাহলে ঠিক কী কারণে অল্প বয়সেই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে? ২৩ এপ্রিল দাসপুর-২ ব্লকের গোপীগঞ্জে নাবালিকা বিয়ে রোধ করতে একটি সচেতনতা শিবির করা হয়েছিল ইউনিসেফ ও ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে। বিয়ে দেওয়ার কারণ হিসেবে সেখানে একজন মা প্রশ্ন তুলেছিলেন, সরকারি প্রকল্পের টাকায় হাতে মোবাইল পেয়ে বিগড়ে যাচ্ছে মেয়েরা। সন্তানদের বাগে আনতে পারছেন না অভিভাবকেরা। মোবাইলের মাধ্যমে প্রেম আর সেই প্রেমের টানে বাবা-মায়ের মান-সম্মান ডুবিয়ে যদি বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় মেয়েরা? সেই আশঙ্কাতেও অনেক বাবা-মা বাধ্য হন বিয়ে দিতে।
তবে এই নাবালিকা বিয়ে নিয়ে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম চাইল্ড লাইনের ঘাটাল মহকুমার সেন্টার হেড প্রদীপ শাসমলের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত দু’মাসে প্রায় ২৭ জন নাবালিকার বিয়ে রোধ করা গিয়েছে। এছাড়াও কোনও কোনও জায়গায় হয়তো পুলিশ বা বিডিও অফিসের তরফেও বিয়ে বন্ধ করা হয়েছে, এমন অনেক খবর আমাদের কাছে আসেনি। তবে ওইসব নাবালিকাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে যেটুকু জানতে পেরেছি যে, তাঁদের মেয়েরা পড়াশোনা বাদ দিয়ে বেশিরভাগ সময় মোবাইলে ব্যস্ত। মোবাইলে কথা বলার মাধ্যমে প্রেম করছে মেয়েরা। এই একটা কারণে বাবা-মায়েরা বাধ্য হয়ে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। তাছাড়াও একটা অর্থনৈতিক কারণ তো রয়েইছে এবং সুলভে পাত্র পাওয়ার জন্যও অনেক বাবা-মায়েরা বিয়ে দিচ্ছেন।
গত ২১ এপ্রিলের নাবালিকা বিয়ের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ অনেককেই অবাক করেছে। ওইদিন দাসপুর থানার লক্ষ্মীকুণ্ডু গ্রামে একইদিনে দুই নাবালিকার বিয়ে ছিল। প্রশাসনিক আধিকারিকরা তা জানতে পেরেই ওই দুই নাবালিকার বাড়িতে পৌঁছে বিয়ে বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রশাসনিক আধিকারিকদের পৌঁছানোর আগেই এক নাবালিকার পরিবার সহ মেয়েটিও পালিয়ে গিয়েছিল। আবার অন্য নাবালিকার পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে থাকলেও নাবালিকা মেয়েটিকে বাড়িতে দেখা যায়নি। সেই মেয়েটি নাকি অভিমানে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল।
এছাড়াও ঘাটাল থানার বাড় নবনীর একটি ১৭ বছরের নাবালিকার বিয়ে রুখে দিয়েছিল প্রশাসন। ওই মেয়েটি মহারাজপুর হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সহ ঘাটাল ব্লক শিশু সুরক্ষা কমিটির সদস্যরা গিয়ে তার বিয়ে আটকায়। পরে মহারাজপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুভাষচন্দ্র দত্তের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারা গিয়েছে যে, তখনকার সময়ের মতো মেয়েটির বিয়ে বন্ধ করা হয়েছিল ঠিকই কিন্তু পরে বিয়ে হয়ে গিয়েছে কিনা তা ঠিক জানা নেই। কারণ মেয়েটি এখন আর স্কুলে যায় না।
২৩ এপ্রিল গোপীগঞ্জের ওই সচেতনতা শিবিরে এক স্কুল ছাত্রী সায়ন্তনী বেরা সবার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে বলেছিল, আমরা ১৮ বছর পূরণ না হলে বিয়ে করবো না। যদি আমাদের আশেপাশে কোনও নাবালিকা মেয়ের জোর করে বিয়ে দিতে দেখি তাহলে আমরা তা প্রশাসনকে জানিয়ে রুখে দেওয়ার চেষ্টা করবো।