অরুণাভ বেরা: ডিসটেম্পার রং দিয়ে ১২ নাম্বার তুলির ছোঁয়ায় বাড়ির দরজার সামনে আল্পনায় সেজে উঠছে । একজন যুবকের হাতে পাখির পালকের মতো তুলি উঠছে নামছে। দিদিকে বল কর্মসূচির মাধ্যম হিসেবে এই অভিনব পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের কট্টর সমর্থক ও কর্মী লক্ষীকান্ত কর্মকার। আল্পনা আঁকা শেষ হলে বাড়ির লোকজনদের কাছে লক্ষীবাবু জানতে চাইছেন, অভিযোগ কিংবা সমস্যার কথা। তিনি ঘাটাল পুরসভার ১৪ নাম্বার ওয়ার্ডের প্রতিটি বাড়িতে ছুটির দিনে যাচ্ছেন এবং আল্পনা এঁকে দিচ্ছেন। এবং আসার সময় মানুষজনের অভাব-অভিযোগের কথা নিয়ে এসে নেতৃত্বকে জানাচ্ছেন।
এটি তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় কর্মসূচি নয়। নিতান্তই লক্ষ্মীবাবুর ব্যক্তিগত উদ্যোগ। এই উদ্যোগকে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন। ‘ওয়াই জেনারেশন’ অর্থাৎ নতুন প্রজন্ম থেকে শুরু করে প্রবীণরাও প্রশংসা করেছেন লক্ষীবাবুর ‘আল্পনা অভিযান’কে।
১৪ নাম্বার ওয়ার্ডের ভোটার প্রায় ১৫০০ এবং পরিবার চারশো। এখনও পর্যন্ত লক্ষ্মীবাবু শ’খানেক বাড়িতে আলপনা এঁকে ফেলেছেন।
ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি দেবাশিস হড় বলেন, লক্ষ্মী দল পাগল ছেলে। ও দল এবং দিদি (মুখ্যমন্ত্রী)কে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে। লক্ষ্মী ওর ভাবনার মাধ্যমে মানুষের কথা আমাদের জানাচ্ছে । আমরাও উচ্চতর নেতৃত্বকে জানিয়ে দিচ্ছি অভিযোগের কথা।
এই বিষয়ে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, ৭২ বছরের ছায়া হড় বলেন, খুব ভালো লাগছে। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে লক্ষ্মী আমাদের কাছে আসছে। পাঁশকুড়া কলেজের ভূগোল অনার্সের ছাত্রী সৃজিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, বাংলার সংস্কৃতির মাধ্যমে মানুষের অভিযোগের কথা শোনা সত্যিই অভিনব
ঘাটাল কলেজের কর্মী পিন্টু চক্রবর্তী ও তার স্ত্রী ঋতু চক্রবর্তী বলেন, আমরা এর মধ্যে কোন খারাপ কিছুতো দেখছি না। ভালো কাজের মধ্যে আবার রাজনৈতিক গন্ধ আসবে কেন? লক্ষ্মীর উদ্যোগ খুব ভালো। মতিলাল কর্মকার বলেন, লক্ষ্মীর নিজস্ব চিন্তাভাবনার মাধ্যমে শিল্পের বিকাশ এবং মানুষের কথা শোনা প্রশংসার দাবি রাখে।
কী কী অভিযোগ শুনতে হচ্ছে লক্ষীবাবুকে? বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিকাশি ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর দাবি রাখছেন বাসিন্দারা। আর নিয়মিত জঞ্জাল সাফাইয়ের দাবি রাখছেন মানুষজন। এখনও পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক বাধার সামনে লক্ষ্মীবাবুকে পড়তে হয়নি। এবার শোনা যাক লক্ষ্মীবাবুর মন্তব্য। তিনি বললেন, দিদিকে বলো কর্মসূচিকে একটু অন্য আঙ্গিকে মানুষের কাছে নিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি আমাদের গ্রাম বাংলার সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে ধরে রাখা এবং মানুষের কাছে দ্রুত পৌঁছে অভিযোগগুলি নেতৃত্বকে জানিয়ে সমাধানের মাধ্যম হিসেবে কাজে লাগানোর জন্যই এই উদ্যোগ ।
দিদির এই হাসিখুশি লক্ষীভাইয়ের আল্পনা অভিযানের পরিসর ১৪ নাম্বার ওয়ার্ড ছাড়িয়ে পাশের ওয়ার্ডেও যেতে পারে বলে লক্ষ্মীবাবু জানান।