দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় (ঘাটাল মহকুমার নানান কুসংস্কার বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত• মো:৮৯২৭৭৯৩৬০০): চারপাশে যেভাবে প্রকৃতিকে ইচ্ছা মতো অপব্যবহার করা হচ্ছে তা দেখে আর চুপচাপ থাকা যাচ্ছে না। এই মুহূর্তেই যদি তার প্রতিবাদ না করি তা আরও ভয়ঙ্কর আকার নেবে। তাই এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে কয়েকটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরে তার প্রতিবাদ করতে চাইছি। কারণ, এটা মানুষ নামক প্রজাতির অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্ন।
প্রকৃতি যখন তার ভাণ্ডার নিয়ে মানুষের অত্যাচারে ক্রমশ আমাদের কাছ থেকে যন্ত্রণায় মুখ লুকাতে চাইছে, তখন অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করি যে, কোনও রাজনৈতিক দলের ইস্তেহার বা কর্মসূচিতে প্রকৃতি তথা পরিবেশ বলে কোনও বিষয়ই নেই। দূষণের মত মারাত্মক একটা ইস্যু নিয়ে তাদের কোনও মাথা ব্যথা নেই। কেন? এ কোন উন্নয়নের খেলায় মেতেছি আমরা? এ কীরকম বিকাশ? জঙ্গল উধাও হয়ে যাচ্ছে। জঙ্গলের অসহায় প্রাণী বাধ্য হলে লোকালয়ে চলে আসছে, সেই সমস্ত প্রাণীদের ওপর মানুষের অন্তহীন অত্যাচারে তাদের মৃত্যু হচ্ছে। সঙ্গে শিকার উৎসব তো আছেই! গ্রামের সজল ধারার প্রকল্পে যখন ট্যাপ বন্ধ করতে ভুলে যাচ্ছে, কেউ কেউ আবার ব্যক্তিগত পুকুরও প্রকাশ্যে ভরাট করছে পানীয় জল দিয়ে। জনপ্রতিনিধিদের কর্মসূচিতে জনসচেতনতা মূলক কাজগুলি নেই বলেই কি তাঁরা কোনও অজানা কারণে নিশ্চুপ থেকে এগুলি প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন?কিন্তু খেয়াল করেছেন কি জলস্তর ক্রমশ নিম্নমুখী হচ্ছে? কবে ঘুম ভাঙবে আপনাদের? দয়াকরে জেগে উঠুন।
রাজনৈতিক দল তথা নেতা, নেত্রীদের বিরুদ্ধে আমাদের আরও অভিযোগ আছে। একে তো আপনাদের দলীয় পতাকাগুলিও প্লাস্টিকের তৈরি যা কখনোই প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যায় না। তার ওপর সমস্ত রাজনৈতিক দলের কর্মীরাই ভোটের প্রচারে প্লাস্টিকের সেই পতাকাগুলি গাছে গাছে পিন পেরেক বা কখনও বড় পেরেক দিয়ে সেঁটে দেয়। কার অনুপ্রেরণায় এসব করা হয়? নাকি, গাছ প্রতিবাদ করতে পারে না বলে? গাছের প্রাণ আছে এ জাতীয় তথ্য নাই দিলাম! তাছাড়া ফুটে থাকা পেরেক সমেত সেই গাছ যখন আইনি-বেআইনি ভাবে করাত কলে পৌঁছায়, তা চেরাই করার সময় সেই পেরেক ছিটকে যে বা যারা মারাত্মকভাবে জখম হতে পারে, সেও তো খেটে খাওয়া মানুষই। যারা তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপনের জন্য জীবন্ত গাছের চামড়া ব্যবহার করে, তাদের না হয় থামালাম। কিন্তু কার ঘাড়ে কয়টা মাথা আছে যে গাছে পেরেক মেরে রাজনৈতিক ঝাণ্ডা সাঁটানোর বিরোধিতা করবে? অনেক হয়েছে, এবার এসব থামান প্লিজ! তাছাড়া পরিবেশ শেষ হয়ে গেলে মানুষও কিন্তু শেষ! তখন কী হবে? একটা কথা, পরিবেশ নষ্ট করে কোনও উন্নয়নই বাস্তবোচিত নয়। তাই পরিবেশবিদদের মতে, পরিবেশ বাঁচিয়ে উন্নয়ন ও উন্নতি হোক। এই চাওয়াটা কী খুব অন্যায় আবদার?
এবার বক্তব্য ডিজে নিয়ে, বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণে মাইকের ব্যবহার দেখেছি। এক-দেড় দশক আগে পর্যন্ত নির্দিষ্ট শব্দের মাত্রার মধ্যে বাজতে থাকা গান বাজনা মন ভরিয়ে দিত। কিন্তু এখন বাজনা গানের যুগ, গান না বোঝা গেলেও বাজনা শুনে হার্ট ফেল করার জোগাড়। পুলিশ প্রশাসন কাজ করতে চায় এব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু যখন শুনি, আড়ালে মেঘনাদরা বলছে যুবকরা মাইক বাজিয়ে একদিন একটু আনন্দ করছে, করুক না। তখন সত্যই চিৎকারে প্রতিবাদে ফেটে পড়তে ইচ্ছা হয়। এগুলো কোনও ক্ষুদ্র স্বার্থেই প্রশ্রয় দেবেন না প্লিজ। আইন যখন আছে, মানুষের স্বার্থে তা ব্যবহার করাটাই উচিত নয় কি? ভাবুন, আরও গভীর ভাবে ভাবতে শিখুন!
এবার আরও দুটো কথা বলে শেষ করতে চাই, সবাইকে বলতে চাই প্লাস্টিক, পলিথিন, থার্মোকল জাতীয় জিনিসের ব্যবহার একদম বন্ধ করে দিন। এর ফলে কী কী ঘটছে গুগল বা ইউটিউব সার্চ করুন, দেখতে পাবেন জল-স্থলের সমস্ত প্রাণীকে আমরা এগুলি দিয়ে কী বিপদেই না ফেলেছি। জীবন দিয়ে এর মূল্য চোকাচ্ছে ওরা। আর একটা কথা, সবাইকে অনুরোধ শস্য কাটার পর প্রকৃতি ও জমির স্বার্থেই নাড়া পোড়ানো বন্ধ করুন। আর মজা করেও কেউ জঙ্গলে শুকনো পাতায় আগুন ধরাবেন না প্লিজ। ইকোসিস্টেম তথা বহু কীটপতঙ্গ এইভাবে আমাদের সামান্য মজার কারণে শেষ হয়ে যায়। পৃথিবীটা আমাদের একার পৈতৃক সম্পত্তি নয় কিন্তু! আমাদের সঙ্গে ওরাও থাকুক না।
চলুন না, এই মুহূর্তেই ঘাটাল মহকুমা থেকেই এই সমস্ত কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তুলি। অনুষ্ঠানে আরও বেশি বেশি গাছ উপহার দিই ,গাছ লাগাই। আর পৃথিবীকে সবুজ করে তুলি। দূষণমুক্ত এক গর্বের পৃথিবী গড়ি। আজকে ঘাটাল ভাবলে, কাল অন্যান্য মহকুমাগুলিও নিশ্চয়ই ঘাটালের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে। তাই একটু পা চালিয়ে ভাই।