সৌমেন মিশ্র,’স্থানীয় সংবাদ’, ঘাটাল: ১০০ দিনের কাজ সাথে যেটুকু ভাগের জমি সেই জমিতে চাষের আয়েই জীবন চলে। ছেলেকে মানুষ করে তুলতে হবে লক্ষ্য ছিল দাসপুরের সুলতাননগরের দিলীপ ঘোষের। দাসপুরের কলোড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২০তে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা মুখচোরা শুভম এবার ২০২১ এ ডাক্তারীর সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করে ফেলবে এবং শুধু পাশ নয় রিতীমত ভালো ফল করে দেশের যেকোনো প্রথমসারির ডাক্তারী কলেজে জায়গা করে নেওয়ার মত ফল করবে তা ভাবতে পারেন নি বাবা সাথে মা চিনা দেবী। ১ নভেম্বর সোমবার নিট ২০২১ এর ফল বেরোলে শুভমের ইমেলে রেজাল্ট আসে। ৭২০ মধ্যে শুভমের প্রাপ্ত নম্বর ৬৭৬ যা সারাভারতে ১১০২ তম আবার ইকোনমি গ্রুপে ১০১তম।
আর্থিক অনটনের মাঝে কোনও টিউশন না নিয়ে একমাত্র নিজের জেদ ও মেধার বলে দাসপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেও ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারে যে এক চাষির ছেলে আজ প্রমাণ করে দিল শুভম। আজ মঙ্গলবারের সকাল থেকেই সুলতানগরের ঘোষ পরিবারে দীপাবলির আগেই যেন আলোর রোশনাই। পাড়া প্রতিবেশি বিদ্যালয়ের স্যারেরা একে একে ফোনে,বাড়িতে এসে শুভেচ্ছা জানিয়ে যাচ্ছেন শুভমের এই কৃতত্বের জন্য।
শুভম জানায়,তার এই ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছে জন্মেছিল একাদশ শ্রেনীতে এসে। ২০২০ তে প্রথম ডাক্তারির এই প্রবেশিকা পরীক্ষা নিটে বসে। ফল যা হয় সরকারি কোনো কলেজে স্থান পায়নি,জেদ চেপে বসে। আর সেই জেদেই এবার ২০২১ এ এই সাফল্য। শুভম বলে সামনে আরও অনেক পড়া বাকি,ডাক্তারের মত ডাক্তার হতে হবে।
পরিবার কেন,সারা পাড়ায় কেউ ডাক্তার নেই। এলাকায় এই শুভমই প্রথম ডাক্তারি পড়তে যাবে। স্বভাবতই সারা পাড়া জুড়ে এখন শুভমকে মিষ্টি মুখ করানোর হিড়িক। পাড়ার যে কয়েকজন দাদা শুভমকে তার ক্যারিয়ার নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে তারকেশ্বর ঘোষ যিনি কেশবচক দেশগৌরব উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক তিনি বলেন,ছোট থেকেই শুভমের মধ্যে একটা আলাদা জেদ ছিল,এমন একটা ফল হবে আশা ছিল। আজকের এই আনন্দের দিনে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে গিয়ে দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে আসে বাবা দিলীপ ঘোষের।
মা চিনা দেবী বলেন,অভাবের যৌথ পরিবারের সংসারে ছেলে কোনো দিন কোনো বায়না করেনি। ছোটো থেকেই শুধুমাত্র পড়া নিয়েই থাকে। মাছ মাংসের তেমন যোগান নেই শুধু সব্জি ভাত দিয়েছি দিনের পর দিন,ছেলে তাতেই খুশি।