তৃপ্তি পাল কর্মকার:স্বর্ণশিল্পীরা প্রত্যেকটি গয়না তৈরির সময় আনুপাতিক হারে লস হিসেবে কিছুটা সোনা পেয়ে থাকেন। কারণ,সোনার গয়না তৈরি করার সময় গয়না পালিশ, ছেলাই, কাটিং করতে হয়। এই সময় কিছু সোনা ধুলো আকারে চারিদিকে ছড়িয়ে যায়। সেগুলোকে আর উদ্ধার করা যায় না। সেজন্যই ওই লস। আর সেই লসের সোনা থেকে যেগুলো বাঁচে সেটাই সংশ্লিষ্ট স্বর্ণ শিল্পীর ‘নিজস্ব সম্পদ’ হিসেবে গণ্য হয়। এটা কিন্তু চুরি নয়। আর এই লসের কোনও রসিদও থাকে না। স্বর্ণশিল্পীরা সেগুলো নিজেদের আয় তথা পারিশ্রমিক হিসেবেই বিবেচনা করেন। সোনার দোকানের মালিকেরাও এটিকে একটি সিস্টেম হিসেবেই ধরে নিয়েছেন। বিষয়টির মধ্যে আইন বহির্ভুত কিছু নেই সাধারণ মানুষও জানেন।
ঘাটাল মহকুমায় স্বর্ণশিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বেশ কয়েক হাজার মানুষ। অধিকাংশই পেশার তাগিদে বাড়ি ছেড়েছেন দীর্ঘদিন হল। সেই সকল স্বর্ণশিল্পের কর্মীদের সম্প্রতি এক মহা আতান্তরে পড়তে হচ্ছে। কাজের সুবাদে গয়না গড়ার সময় যেটুকু লস হিসেব প্রাপ্য সোনাকে দীর্ঘদিন ধরে জমিয়ে বাড়ি নিয়ে আসেন তাঁরা। লসে পাওয়া সোনা নিয়েই রেল স্টেশনে তাঁদেরকে আরপিএফ পুলিশের কাছে নানান প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। তাঁদের কাছে সোনা দেখে কৈফিয়ত চাওয়া হচ্ছে ওই সোনার আইনি বৈধতা নিয়ে। শুধু তাই নয়, স্বর্ণ শিল্পীরা যখনই পাঁশকুড়া কিম্বা খড়্গপুরে নামছেন তখনই তাঁদের আটকে সোনা চুরির অপবাদ দিয়ে দীর্ঘ দিন থেকে সঞ্চয় করা স্বর্ণ শিল্পীদের পাঁচ-দশ গ্রাম সোনা কাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। অথবা ওই সোনার বিনিময়ে মোটা টাকা দাবি করছে রেল পুলিশ। ওই টাকার জন্য কোনও রকম রসিদও দেওয়া হয় না।
ঘাটাল মহকুমার স্বর্ণশিল্পীরা বাড়ি ফেরার পথে এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছেন। যেহেতু ওই লস সোনার কোনও বিল হয় না। তাই রেল থেকে নামার পরই স্বর্ণশিল্পীদের থানায় নিয়ে যাবার নাম করে একটি গোপন ডেরায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই স্বর্ণশিল্পীদের ভয় দেখিয়ে রেল পুলিশ মোটা টাকা আদায় করে।
দাসপুর থানার চাঁইপাটের স্বর্ণশিল্পী নিতাই মাজি, ঘাটাল থানার নিশ্চিন্দীপুরের স্বর্ণশিল্পী বাপি রায় বলেন, আমাদেরকে যখন ট্রেন থেকে নামার পরই ওই কারণে পুলিশ আটকে দেয় তখনই ভয় লেগে যায়। আমরা কখনও ছ’মাস আবার কখনও এক বছর পরে বাড়ি ফিরি। তার উপর যদি পুলিশ আমাদের ভয় দেখায় থানায় আটকে রেখে দেবে তখনই আমরা নিরুপায় হয়ে পুলিশের দাবি মতো টাকা দিয়ে দিতে বাধ্য হই। কারণ, পুলিশের হাতে হাজারো ক্ষমতা। অন্য কোনও কেস দিয়ে আমাদের আটকে দিলে আর বাড়ি ফেরাই হবে না। তাই আইনি জটিলতার ভয়ে কার্যত দিশেহারা হয়ে সোনা বা মোটা টাকা জরিমানা দিয়ে বিষয়টি থেকে নিষ্কৃতি পান তাঁরা। একই ভাবে বাকিদের থেকেও মোটা টাকা জরিমানা নেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে।
স্বর্ণ শিল্পীরা বলেন, আমরা সোনার কারিগরেরা সারা বছর ধরে কাজ করতে করতে যেটুকু সোনা জমিয়ে রাখি তাই নিয়ে বাড়ি ফিরি। এর জন্য দোকানের মালিক কোনও বিল ইস্যু করেন না। আমাদের বিল চাইলে কোথা থেকে পাব? আমাদের সারা বছরের পরিশ্রমের ফসল এভাবে যদি স্টেশনের পুলিশের হাতে তুলে দিতে হয় তাহলে আমাদের চলবে কিভাবে! স্টেশন পুলিশদের এই ব্যবহারে কার্যত দিশেহারা এলাকার সোনার কারিগরেরা। এবিষয়ে রেল পুলিশের এক কর্তাকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, এই ধরনের ঘটনা ঘটে বলে তাঁদের জানা নেই। যদি সত্যিই কাউকে সন্দেহ হয়ে থাকে বা তাঁর কাছ থেকে অবৈধ সোনা পাওয়া যায় তাঁর বিরুদ্ধে কেস করতে হবে কিন্তু এই ভাবে ভয় দেখিয়ে সোনা বা টাকা নেওয়া যাবে না। যদি আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসে তাহলে আমরা সেই পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
ঘাটাল মহকুমার সমস্ত খবর পেতে মোবাইল অ্যাপ ‘MyGhatal’ ইন্সটল করতে পারেন। লিঙ্ক:👉
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.myghatal.eportal&hl=en
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল: 👉 https://www.youtube.com/c/SthaniyaSambad
আমাদের নিউজ পোর্টাল: 👉 https://ghatal.net/