দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় [সম্পাদক, দ্য ফ্রি থিংকিং হিউম্যানিস্টস, ঘাটাল শাখা]: অবশেষে সংগঠনের পক্ষ থেকে ঘাটাল থানায় এফআইআর করলাম। কারণ ১০ জানুয়ারি রাতে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে জানতে পেরেছিলাম, ৯ জানুয়ারি ঘাটাল থানার মনসুকা এলাকার বাঘনালার মাঠে নয়টি নিরীহ বাচ্চাকুকুরকে পিটিয়ে মারা হয়েছে, মারার কারণ ওরা নাকি চাষের জমিতে নেমে পড়েছিল!
ঘটনাটি সুনিশ্চিত হওয়ার পরই ১১জানুয়ারি আমরা সংগঠনের ঘাটাল শাখার পক্ষ থেকে ঘাটাল থানার ওসি, ঘাটাল মহকুমাশাসক, এসডিপিও, বনদপ্তরের ডিএফও এবং রাজ্য প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকে লিখিত অভিযোগ করে দাবি করি, যে বা যারা ওই কুকুর ছানাগুলিকে হত্যা করেছে তাদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
স্থানীয় সূত্র জানাচ্ছে ৯টি নয়,অন্তত ১২টি বাচ্চা কুকুরকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। এ কোথায় নামছে মনুষ্যত্ব! মানুষের স্নেহ, ভালোবাসা, ধৈর্য্য, সহানুভূতি, সমানুভূতি, সুকুমার প্রবৃত্তিগুলোর কেন এত অভাব বর্তমানে, তা সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিদ বা মনোচিকিৎসকদের গবেষণার বিষয় হলেও, কিছু কারণ আমাদের চোখও এড়ায় না। সংক্ষেপে বলতে পারি যে ভালো মানুষ তৈরির দায়িত্ব পরিবারগুলোকেই নিতে হবে। এ দায়িত্ব শিক্ষক শিক্ষিকারও। তাই সন্তানকে শুধুই যান্ত্রিকভাবে পাঠ্যবই পড়ানো বা টিউশন পাঠানো নয়। পারিবারিক হিংসা থেকে সরিয়ে রাখার সাথে সাথে, কবিতা, গল্প, উপন্যাস পড়তে বলুন আপনার সন্তানকে। সুন্দর একটা মন, রুচি, সংস্কৃতি তৈরি হবে, যা শিক্ষারই অঙ্গ। সাথে প্রকৃতি, পরিবেশ, পশুপাখিকে ভালোবাসতে শেখান। শেখান আমাদের মতো এই পৃথিবীটা সমানভাবে ওদেরও। ওদেরও বাঁচার অধিকার আছে। ওরাও ভালোবাসতে জানে। ভালোবাসা চায়। মারধর করলে আমাদের মতো ওরাও ব্যথা পায়। হতাশ হয়। ওরাও আমাদের বন্ধু।
তাই শুধুই অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণই নয়, সঙ্গে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে নিয়ে যেতে হবে জীববৈচিত্র্য, বাস্তুতন্ত্রের মতো সচেতনমূলক শব্দগুলোকেও। আর আমাদের মতো মানবতাবাদী সংগঠনগুলোকে ব্যাপকভাবে মানবতাবাদ ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে। তবেই পৃথিবী সুন্দর হতে বাধ্য হবে।