সৌমেন মিশ্র,দাসপুর: শারদোৎসব মানে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের সাগরপুর,সোনামুই ও খুকুড়দহ এলাকার মানুষ সর্বজনীন লক্ষ্মী পুজোকেই বোঝেন। এই এলাকাগুলিতে পুজোকে কেন্দ্রকরে সপ্তাহব্যাপী থাকে উৎসবের মেজাজ।
পুজোকে কেন্দ্র করে মেলা,সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,সমাজসেবা মূলক নানান কাজে ব্যস্ততা চরমে থাকে পুজো কমিটির সদস্যদের।



শুধু ঘাটাল মহকুমা নয় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সেরা পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম খুকুড়দহ লক্ষ্মীবাজার কমিটির লক্ষ্মী পুজো। ৫৯ তম বর্ষে পড়ল সেই পুজো।
পুজো কমিটির এবারের সম্পাদক শক্তিপদ আদক জানালেন এবারে তাঁদের পুজোর বাজেট আট লক্ষ টাকা। দিল্লির অক্সর ধামের আদলে গঠিত হয়েছে মণ্ডপ। প্রতিমায় থাকছে চিরায়ত বাংলার লোক শিল্পের ঐতিহ্য। পুজোকে কেন্দ্র করে সপ্তাহব্যাপী চলে মেলা,নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবির,বিনাব্যয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও নিখরচায় ওষুধের ব্যবস্থাও রয়েছে এই মেলায়। শক্তিবাবু আরও জানালেন
খুকুড়দহ যেহেতু পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সংযোগস্থল তাই এই পুজোর এক আলাদা গুরুত্বও রয়েছে। দুই জেলার মানুষই সমানভাবে উপভোগ করে এই পুজো ও মেলা।


দাসপুরের আর এক ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন সর্বজনীন লক্ষ্মী পুজো সাগরপুর পল্লী উন্নয়ন সমিতির সর্বজনীন পুজো। এবার এই পুজো ৬৭ তম বর্ষে পড়ল। পুজোর সম্পাদক বলরাম হাইত জানালেন,এবারে তাঁদের পুজোর বাজেট ৬ লক্ষ টাকা। তাদের পুজোর স্থায়ী বেদী রয়েছে। তাই মণ্ডপ হয় না। পুজোকে কেন্দ্রকরে আট দিন ধরে চলবে মেলা। দাসপুর,সাগরপুর,বলিহারপুরের মত অনেক গ্রামের মানুষ এই মেলায় অংশ নেয়। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ছাড়াও গরীবদের মধ্যে বস্ত্র প্রদানের মত সমাজসেবামূল কাজের খরচও ধরা রয়েছে এই পুজোর বাজেটে। এবারের মেলা কমিটির অন্যতম সদস্য সঞ্জয় হাইত বললেন, পুজোর গুরুত্ব বাড়ে জন সমাগমে। মানুষের উপস্থিতি বাড়াতে আমরা শতাধিক দোকান বসিয়েছি আমাদের মেলায়। সব ধরনের জিনিসপত্র মিলবে এই মেলায়।



ঘাটাল-পাঁশকুড়া সড়কের ধারে সোনামুইতে সোনামুই হাট কমিটির সর্বজনীন লক্ষ্মী পুজো এবার ৬৩ তম বর্ষে পড়ল। পুজো কমিটির সম্পাদক অজিত মণ্ডল জানালেন,এবারের তাদের পুজোর বাজেট প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা। মণ্ডপ তৈরি হয়েছে দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের ধাঁচে। এখানেও সাতদিন ধরে চলবে মেলা,হবে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তবে অন্যন্য পুজোগুলি থেকে সোনামুই লক্ষ্মী পুজোকে আলাদা করে তাদের খিঁচুড়ি প্রসাদ। তবে পুজোর দিন নয়। যেহেতু পুজোর মূল খরচ উঠে আসে সোনামুই হাট থেকেই তাই হাটবারের দিন দেখেই পুজো কমিটির পক্ষে খিঁচুড়ি ভোগ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। প্রায় তিন হাজার মানুষ ওইদিন ভোগ গ্রহন করে।
তবে সবকটি পুজো কমিটির সাথে কথা বলে জানা গেছে,এই পুজোর কটাদিন জাতি,ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে আনন্দ উৎসব হাসি ঠাট্টার মধ্যে থাকেন। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের মূল মাহাত্ম্য বোধহয় এখানেই।