পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার (ঘাটাল মহকুমা) দাসপুর-১ ব্লকের এক অলৌকিক কাহিনীকে ঘিরে এক সময় একটি মেলার সৃষ্টি হয়েছিল। সেই মেলাকে নিয়েই বিশেষ প্রতিবেদন লিখেছেন ‘স্থানীয় সংবাদ’-এর সাংবাদিক সনাতন ধাড়া
[আপনার মতামত সরাসরি প্রতিবেদককে জানাতে পারেন:8388946467—এই নম্বরে]
•দাসপুর থানার বিষ্ণুপুর গ্রামের মাঝের পাড়ার বাসিন্দা ছিলেন বনমালী দাস ওরফে বৈষ্ণব গোঁসাই। কেউ কেউ বলেন, তিনি বিষ্ণুপুর গ্রামেরই মানুষ ছিলেন। আবার অনেকের মতে এই বৈষ্ণববাবা হঠাৎ করেই আবির্ভূত হয়ে এই গ্রামের বাসিন্দা হয়ে যান এবং অসাধ্য সাধনে ছিলেন সিদ্ধহস্ত। কথিত আছে তিনি ছিলেন একপ্রকার যোগী পুরুষ এবং ভগবানের ন্যায় অন্তর্যামী। যাকে যা আশীর্বাদ দিতেন, তার ফল লাভও হত সঙ্গে সঙ্গে । এলাকার মানুষের কাছে বৈষ্ণব গোঁসাই ছিলেন মানুষরূপী ভগবান। তাই তাঁর মৃত্যুর পর ১৬৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ওই বিষ্ণুপুর গ্রামের মানুষ বনমালী দাস ওরফে বৈষ্ণব গোঁসাইকে পুজো করে আসছেন। বৈষ্ণব গোঁসাইয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে গ্রামের প্রবীণ ব্যাক্তি তারকনাথ জানা বলেন, এই বৈষ্ণব গোঁসাইয়ের অনেক অলৌকিক কাহিনী রয়েছে যা তিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে জেনেছেন। তিনি সবসময় মানুষের ভালো চাইতেন। লোকমুখে শোনা, দেড়শ-দুশো বছর আগে এই এলাকার মানুষ চরম দারিদ্রের মধ্যে দিন যাপন করতেন। তখন রোজগার বলতে ছিল গরুর গাড়ি চালিয়ে পশ্চিমের দিক থেকে মাল আনা নেওয়া করে সামান্য কিছু পারিশ্রমিক পাওয়া। একবার এই গ্রামেরই ভুবন কুঁতি ও বিনোদবিহারী দোলই পশ্চিমের দিক থেকে গরুর গাড়ি করে মাল নিয়ে গ্রামের দিকে আসছেন হঠাৎ করে মাঝপথে বৈষ্ণব গোঁসাইয়ের সঙ্গে দেখা। বৈষ্ণব গোঁসাই তাদেরকে বলেন, আমি হঠাৎ করে চলে এসেছি। তোরা আমার কুটিরে গিয়ে দেখবি কলঙ্গায় পাঁচ শিকে (এক টাকা পঁচিশ পয়সা) পয়সা রাখা আছে। ওই পয়সায় কেনা ভোগ নিয়ে কুটিরের পাশে যে নিম গাছটি রয়েছে তার গোড়ায় ভোগ দিবি তাহলে তোদের মঙ্গল হবে। একথা শুনে ভুবনবাবু এবং বিনোদবিহারীবাবু বাড়ি এসে গ্রামের মানুষকে বললে তারা তো অবাক! কারণ, ভুবন আর বিনোদবিহারী যেদিন গরুর গাড়ি নিয়ে পশ্চিমের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন সেদিনই গোঁসাইবাবা দেহ ত্যাগ করেন। মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ পর এদের সঙ্গে গোঁসাইবাবার দেখা হওয়ার কথা শুনে অবাক হয়েছিলেন সবাই। এদের কথা মত গোঁসাইবাবার কুটিরের কলঙ্গায় পাঁচশিকে পয়সা রয়েছে কিনা সেদিন দেখতে গিয়েছিলেন গ্রামের মানুষ এবং দেখেন সত্যিই কুটিরের কলঙ্গায় পাঁচশিকে পয়সা রাখা আছে। গোঁসাইবাবার কথা মত ওই পয়সাতেই সেদিন কুটিরের পাশে থাকা নিম গাছের গোড়ায় ভোগ দেন গ্রামবাসী। বহু বছর ধরে সেই ধারা আজও চলে আসছে।
বিষ্ণুপুর গ্রামের মহিতোষ দোলই, শক্তিপদ পাইন, পঞ্চানন কুঁতি, বীরেন্দ্রনাথ পাল, কার্তিক মণ্ডল, বাসুদেব মাইতি, গোপালচন্দ্র মাইতি, জগবন্ধু জানা, প্রভাকর খাটুয়া, অরুণ পাঁজা, হৃষিকেশ পোড়্যা, ক্ষুদিরাম সর্দার, সঞ্জয়কুমার বেরা, মহাদেব দোলই, নিমাইচন্দ্র সামন্ত ও সুভাষচন্দ্র মণ্ডলরা জানান, প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তিতে এখানে বৈষ্ণব গোঁসাইয়ের পুজো হয় এবং পাঁচ দিনের মেলা বসে। এই পাঁচ দিনে থাকে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। গ্রামের মহিতোষ দোলই জানান, বৈষ্ণব গোঁসাইয়ের কাছে মানত করে অনেকেই ফল লাভ করেছেন। পৌষ সংক্রান্তি থেকে চলা পাঁচ দিনের এই মেলায় ভিড় জমান আশেপাশের পাঁচ-সাতটি গ্রামের মানুষ। আর মনোকামনা পুরণের আশায় বহু মানুষ বৈষ্ণব গোঁসাইয়ের চরণে ভোগ নিবেদন করেন।